টাকা দেওয়ার পরও ক্রসফায়ারে হত্যা: ফখরুল

মাদকবিরোধী অভিযানের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গাজীপুরের এক মায়ের বরাতে বলেছেন, পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার পরও তার ছেলেকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে।

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 May 2018, 10:35 AM
Updated : 23 May 2018, 11:07 AM

বুধবার সকালে সাংবাদিকরা তার ঠাকুরগাঁওয়ের বাড়িতে দেখা করতে গেলে তিনি বলেন, “মাদকবিরোধী অভিযান সরকার যেভাবে প্রয়োগ করছে, এতে সিভিল সোসাইটি, রাজনৈতিক মহল ও দেশের মানুষের মধ্যে আতংক তৈরি হয়েছে।

“গাজীপুরে একটি ছেলেকে নিয়ে যাওয়ার পর ডিবি পুলিশ টাকা দাবি করে। ছেলেটির মা বলেছেন, সে টাকা তারা দিয়েছেন। এরপর ডিবি পুলিশ ছেলেটিকে ছেড়ে দেয়। পরে থানা পুলিশ আবার ওই ছেলেটিকে আটক করে টাকা দাবি করে। সেখানেও পাঁচ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল। তার পরও সেই ছেলেটিকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে।”

একটা বিশেষ সময়কে মাদকবিরোধী অভিযানের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে দাবি করে ফখরুল বলেন, “মাদকবিরোধী অভিযান এমন একটা সময়ে বেছে নেওয়া হয়েছে যে সময়টা আগামী নির্বাচন আছে সামনে এবং সরকারের শেষ বছর।”

ফখরুল বলেন, “আজ সারা বাংলাদেশে এটা নিয়ে (‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত) প্যানিক সৃষ্টি হয়েছে। আরেক দিকে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে এটার (মাদকবিরোধী অভিযান) উদ্দেশ্যটা কী?

“গত পরশুদিন নেত্রকোণায় আমাদের ছাত্রদলের একজন নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। এই ছাত্রদলের নেতা সম্পর্কে কোনো ধরনের খারাপ অভিযোগ নেই। আজকাল রাজনৈতিক মামলা, যুবদল-ছাত্রদল, বিএনপিসহ সকলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলা আছে। মামলা থাকলেই সে খারাপ এর কোনো যুক্তি নেই।”

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে যেভাবে ব্যবহার করছে, এতে আমরা দেখেছি গত আট-নয় বছরে শুধু বিরোধী পক্ষকে একেবারে নির্মূল করার জন্য, বিরোধী পক্ষকে ঘায়েল করার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করা হচ্ছে।

“আমরা মাদকবিরোধী অভিযান চাই এবং সেটা নিঃসন্দেহে হতে হবে নন-পলিটিক্যাল সাইটে। তাই বলে এই না যে কাউকে ধরে এনে ক্রসফায়ারে দিতে হবে। মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় এনে তাদের বিচার করতে হবে। যে যুক্তি খাড়া করা হচ্ছে, সে যুক্তিগুলো আমার মনে হয় কোনো সভ্য গণতান্ত্রিক দেশে সেগুলো যুক্তি বলে বিবেচিত নয়।”

ফখরুল এ সময় গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্পর্কেও কথা বলেন।

তিনি বলেন, “গাজীপুরের নির্বাচন পুরো গোলকধাঁধার মধ্যে ফেলা হয়েছে। নির্বাচনের কয়েক দিন বাকি ছিল, এর মধ্যে আওয়ামী লীগের এক নেতাকে দিয়ে কোর্টে রিট করে নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরে আমরা সেটাকে কনটেস্ট করলাম। তারপর দেখলাম আওয়ামী লীগও সেটাকে কনটেস্ট করল। ঈদের মাত্র কয়েক দিন পর নির্বাচনের দিন ধার্য করা হয়েছে। ঈদের পরদিন থেকে নির্বাচনী প্রচারণা করা যাবে, কিন্তু ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন।”

গাজীপুরের নির্বাচনে বিএনপির সম্পর্কে তিনি বলেন, “বিএনপি প্রথম থেকে বলে এসেছে, সেখানে যে পুলিশ সুপার দায়িত্ব রয়েছেন তিনি চিহ্নিত আওয়ামী লীগার। তাকে রেখে সেখানে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। ইতোমধ্যে তিনি অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে মিথ্যা মামলা দিয়েছেন।

“গাজীপুরের নির্বাচন যেদিন হাইকোর্ট থেকে স্থগিত করা হয়েছিল সেদিন আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং প্রার্থীর বাড়ি ঘেরাও করে রাখা হয় অসংখ্য পুলিশ দিয়ে। এই যে—প্রহসন ও নাটকের মত এই নির্বাচনগুলো করা হচ্ছে। ”

আওয়ামী লীগ সম্পর্কে ফখরুল বলেন, “সরকার নিজের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। খালেদা জিয়াকে তারা এত বেশি ভয় পাচ্ছে যে- তারা দেশনেত্রীকে জেলের বাইরে দিতে সাহস পাচ্ছে না। খালেদা জিয়াকে জেলে দেওয়া অন্যায় হয়েছে। কারণ সম্পূর্ণ একটি মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে দেওয়া হয়েছে এবং সুপরিকল্পিতভাবে তার জামিন বিঘ্নিত করার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ।

“আওয়ামী লীগ নিজেরাই চায় না বিরোধী দল নির্বাচনে আসুক। কারণ না আসলে সুবিধা আছে—২০১৪ সালের মত তারা নির্বাচন করে নিয়ে যাবে। এ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে সেটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। ”

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণ সম্পর্কে তিনি বলেন, “বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। তাকে জেলে রেখে সেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।

“বাংলাদেশে গণতন্ত্রের রেশমাত্র নাই। মানুষের অধিকার নাই। নির্বাচন সম্পূর্ণ প্রহসনে পরিণত হয়েছে। সেক্ষেত্রে দায়িত্বশীল বিরোধী দল হিসেবে আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে আগামী নির্বাচন সম্পর্কে চিন্তা করব।”

ফখরুল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি পয়গাম আলী, তরিকুল ইসলাম দুলাল, অর্থ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম শরিফ, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব হোসেন তুহিন, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মো. কায়েশসহ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ছিলেন।