প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ভোটারদের সঙ্গে ‘তামাশা’: রিজভী

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তাকে ‘ভোটারদের সাথে শ্রেষ্ঠ তামাশা’ বলেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 May 2018, 11:46 AM
Updated : 21 May 2018, 11:54 AM

সোমবার নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের তিনি বলেন, “যে নির্বাচনে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে জাল ভোট প্রদানসহ নানা অনিয়মের তদন্ত দাবি করেছে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো, যে নির্বাচনে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র বাবার সঙ্গে ভোট দিতে পারে, মরা মানুষ ভোট দিতে পারে, সন্ত্রাসীরা কেন্দ্র দখল করে লাইন ধরে সিল মারতে পারে, সেই নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর  উচ্ছসিত প্রশংসায় এটাই প্রমাণিত হল যে, ভোট ডাকাতির হুকুমদাতা সরকারের শীর্ষ নেতারা।”

গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত খুলনার সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে প্রায় ৬৪ হাজার ভোটে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা তালুকদার আব্দুল খালেক। নির্বাচনে ‘ভোট ডাকাতি’ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি প্রার্থী।

খুলনার নবনির্বাচিত মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক ও কাউন্সিলররা রোববার বিকালে গণভবনে শুভেচ্ছা জানাতে আসলে  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খুলনায় ভোট সুষ্ঠু হয়েছে এবং উন্নয়ন উপলব্ধি করেই সেখানে মানুষ নৌকায় ভোট দিয়েছে।

রিজভী বলেন, “শেখ হাসিনার নতুম মডেলের চমৎকার খুলনা সিটি নির্বাচনে অর্ধেকেরও কম ভোটার ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেননি, কেন্দ্রে গিয়েও ভোট দিতে পারেননি হাজার হাজার ভোটার। আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য খুলনার ভোটারদের সঙ্গে শ্রেষ্ঠ তামাশা। অবৈধ ক্ষমতার দৌরাত্মে ভোটারদের অধিকার বঞ্চিত করে এখন তাদের তিনি মসকরা করছেন, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছেন।

“প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে এটাই পরিস্কার হয়ে গেল আগামী নির্বাচনগুলোও হবে খুলনা মডেলে। তিনি নিজেই প্রমাণ করলেন তার অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তা হবে বিরোধী দলগুলোর জন্য আত্মঘাতি।”

নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “ইসি খুলনাতে সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে। এই প্রতিষ্ঠানটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য স্বর্ণালী বাহিনী নয় বরং এখন তারা খাঁচায় পোরা তোতা পাখি। সরকার তার কর্তৃত্ব সম্প্রসারণ করে ইসিকে কব্জায় নিয়েছে।”

খুলনার নির্বাচনে মন্ত্রী-সাংসদদের প্রভাবের কথা তুলে ধরে গাজীপুরেও তার কার্যক্রম ক্ষমতাসীনরা শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী।

“গতকাল প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এমপি-মন্ত্রীরা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করে না। এটা যে কত নির্লজ্জ মিথ্যাচার তার আরো একটি উদাহরণ হল গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে গতকাল টঙ্গীতে এক স্থানীয় এমপির বাসায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে এমপিদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

“ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রাজ্জাক, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, শিশু ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরীসহ মন্ত্রী-এমপিরা উপস্থিত ছিলেন, যা নির্বাচনী আচরণবিধির সম্পূর্ণ পরিপন্থি। তাহলে প্রধানমন্ত্রী দায়িত্বশীল পদে থেকে এভাবে মিথ্যাচার করতে পারেন।”

ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসান ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মিজানুর রহমান রাজকে আবারো রিমান্ডে নেওয়া এবং দলের কারাবন্দি সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্র ইসলাম অমিতকে আরো একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর নিন্দা জানান রিজভী।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা তাইফুল ইসলাম টিপু, মনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আওয়ামী লীগ উলঙ্গ, লজ্জাহীন: নোমান

জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে আওয়ামী লীগ উলঙ্গ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান।

দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, “আজকেও আওয়ামী লীগ চাইছে যে, দেশের মানুষ তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হোক, তাতে তাদের কিছু আসে যায় না। বরং যত বঞ্চিত হবে তত তারাই নিরাপদ হবে, নিরাপদভাবে দেশ ভবিষ্যতে আবার পরিচালনার জন্য তথাকথিত ভোটাধিকার প্রয়োগের যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা অক্ষুন্ন রাখতে চায়।

“আজকে আওয়ামী লীগ উলঙ্গ হয়ে গেছে। এই উলঙ্গ রাজনৈতিকভাবে বলা। উলঙ্গ হয়েছে আওয়ামী লীগ দেশেকে শাসন-শোষন করে যে অর্থ লুট করেছে, সেভাবে জনগণের অধিকার হরণ করছে তা লুকায়িত নয়। আজকে জনগণের অধিকার হরণের জন্য তারা লজ্জ্বাবোধ করে না। যারা লজ্জ্বাবোধ করে না তারা তো লজ্জাহীন, উলঙ্গ।”

এই অবস্থার উত্তরণে সকলকে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে নোমান বলেন, “এই উলঙ্গ সরকারকে আামাদের শায়েস্তা করার জন্য জনগণের শক্তি যে ভোটাধিকার, সেই ভোটাধিকারকে প্রয়োগ করার জন্য  আমাদের আন্দোলন-সংগ্রামের কোনো বিকল্প নাই।

“আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ নেতাকর্মীদের কারাগারে নিয়ে গেছে শাসক। আর তাদের বের করবে সংগ্রামী জনতা। সেজন্য আমাদের রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হবে।”

সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ‘দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের’ উদ্যোগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, বিশেষ সম্পাদক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুর মুক্তির দাবিতে এই আলোচনা সভা হয়।

আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএনপি নেতা মোশাররফ হোসেন চৌধুরী, ছাত্রদলের আবদুস সাত্তার পাটোয়ারি, আরিফা সুলতানা রুমা, আবদুল মোমিন জনি, কামরুজ্জামান নয়ন, আব্বাস আলী, জসিম হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।