বিএনপির দাবি যেন মামা বাড়ির আবদার: কাদের

খুলনার নির্বাচন নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার পদত্যাগের দাবিকে ‘মামা বাড়ির আবদার’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 May 2018, 01:26 PM
Updated : 16 May 2018, 01:35 PM

ওই নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগের সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, ‘মানি না, মানব না’-এটাই এখন বিএনপির স্লোগান হয়ে দাঁড়িয়েছে।  

নির্বাচন ‘সুষ্ঠু’ হয়েছে দাবি করে তার পক্ষে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর পক্ষে লক্ষাধিক ভোট পড়াকে যুক্তি হিসেবে দেখিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা।

মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২৮৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৮৬টির ঘোষিত ফল অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক এক লাখ ৭৪ হাজার ৮৯১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী মঞ্জু পেয়েছেন এক লাখ ৯ হাজার ২৫১ ভোট।

নির্বাচনে কেন্দ্র থেকে বিএনপির প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেওয়া, সাধারণ ভোটারদের ‘ভয়-ভীতি দেখানো’ এবং ভোট জালিয়াতির অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি মঙ্গলবার রাতে বলেন, “নির্বাচন কমিশন কোনোমতেই নিরপেক্ষভাবে কাজ করার যোগ্য নন। এর আমূল পরিবর্তন না হলে কোনো নির্বাচনই এখানে অর্থবহ হবে না।”

পরে নির্বাচন নিয়ে দলের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার নূরুল হুদার পদত্যাগ দাবি করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজবী।

বুধবার বিকালে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হন ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, “এ ধরনের দাবি মামা বাড়ির আবদার ছাড়া আর কিছুই নয়।”

বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন,“সিইসির নিয়োগ এটা তো সার্চ কমিটির মাধ্যমে হয়েছে। এখানে তো বিএনপিরও অংশগ্রহণ ছিল।”

খুলনায় কত শতাংশ ভোট পড়েছে তা ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এটা তো আমাদের বানানো, সাজানো কোনো বিষয় নয়।”

এই ফল প্রত্যাখ্যানের কঠোর সমালোচনা করে কাদের বলেন, “খুলনায় জনগণের রায়কে যারা প্রত্যাখ্যান করেছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।”

বিএনপি প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা তুলে ধরে তিনি বলেন, “তারপরও তো মানছে না। মানি না, মানব না।

“নির্বাচন যদি ফ্রি ফেয়ার না হত তাহলে কি এত ভোট বিএনপি পেত? আপনারা সাংবাদিকরাও ছিলেন, কোথায় হস্তক্ষেপ হয়েছে? কোথায় কেন্দ্র দখল হয়েছে? কোথায় ভোট জালিয়াতি হয়েছে?

“পর্যবেক্ষকরা বলছে, ‘না’, সাংবাদিকরা বলছে, ‘না’। এমনিকি গণমাধ্যমে আমাদের যারা কট্টর সমালোচক তারাও কিন্তু এই নির্বাচনকে মোটামুটি একটা ভালো নির্বাচন বলে প্রশংসা করছে। শুধু প্রশংসা করতে পারেনি বিএনপি। বিএনপিকে খুশি করতে হলে তাদের জেতাতে হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, “বিএনপি নেতৃবৃন্দ বুঝতে পারেনি, এখন জনগণ অনেক সচেতন। মিথ্যাচার, বিভ্রান্তি ও ভীতি সঞ্চার করে জনগণের মন জয় করা যায় না। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফলে তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে।

“এতিমের টাকা আত্মসাৎকারী, অর্থ পাচারকারী, দুর্নীতিবাজ, লুটেরাদের দল বিএনপি- জামায়াত ক্রমাগত জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। তাদের জন্য আরও বড় পরাজয়ের পরিণতি অপেক্ষা করছে।”

বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “যে কোনো মূল্যে জিততে হবে-এই ধরনের মানসিকতা এবং জিতলে আছি, হারলে নাই এই ধরনের অপকৌশল থেকে বেরিয়ে আসুন। সত্যকে মেনে নিতে শিখুন।”

নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিজয়ে খুলনাবাসীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবাইকে দলের পক্ষ থেকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আব্দুস সবুর, মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, উপ দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া,  কার্যনির্বাহী সদস্য মারুফা আক্তার পপি উপস্থিত ছিলেন।