মেয়রের তালুক ফিরল তালুকদার খালেকের

পাঁচ বছর খুলনা সিটি করপোরেশনে মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন তালুকদার আবদুল খালেক; তাতে তার সাফল্যের পাল্লা সমর্থকরা ভারী দেখলেও পরের নির্বাচনে হেরে সেই চেয়ার থেকে ছিটকে পড়তে হয়েছিল তাকে; পাঁচ বছর বাদে সেই আসনে আবার ফিরলেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বর্ষীয়ান এই আওয়ামী লীগ নেতা।

মঈনুল হক চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 May 2018, 08:52 PM
Updated : 16 May 2018, 11:36 AM

জাতীয় নির্বাচনের বছর নানা কারণে আলোচিত খুলনা সিটি করপোরেশনের মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বড় ব্যবধানে বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে হারিয়ে হারানো আসন ফিরে পান তালুকদার খালেক।

ভোটের জয় নিশ্চিত হওয়ার পর নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে খুলনার উন্নয়নে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে পাশে নিয়ে চলার কথাই বললেন বয়সে জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক তালুকদার খালেক।   

দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত খুলনার এই নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসা মঞ্জুও ওই অঞ্চলে প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত। সাবেক সংসদ সদস্য মঞ্জু বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বেও রয়েছেন।

৬৬ বছর বয়সী খালেকের রাজনৈতিক জীবনও বর্ণময়; সংসদ সদস্য ছিলেন বেশ কয়েকবার, হয়েছেন প্রতিমন্ত্রী; আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও ছিলেন। খুলনা-বাগেরহাট মিলিয়ে প্রতাপের সঙ্গেই রাজনীতির অঙ্গনে রাজত্ব করছেন তিনি।

১৯৫২ সালে জন্ম নেওয়া তালুকদার খালেকের জনপ্রতিনিধি হিসেবেও দায়িত্ব পালনের ইতিহাস অনেক পুরনো। খুলনা যখন পৌরসভা ছিল, তখন কমিশনার ছিলেন তিনি। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত কমিশনার ছিলেন তিনি।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক ভোট দিতে কেন্দ্রে যান রিকশায় চড়ে।

খুলনা শহরে বাস হলেও তিনি সংসদ সদস্য হন আদি নিবাস বাগেরহাটের রামপাল-মোংলা আসন থেকে। ১৯৯১ সালে প্রথম নির্বাচিত হওয়ার পর ১৯৯৬ সালেও বাগেরহাট-৩ আসনে সংসদ সদস্য হন তিনি। এরপর শেখ হাসিনার সরকারে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বভারও পান তিনি।

২০০১ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে আবারও বাগেরহাট-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন খালেক।

এরপর ২০০৮ সালে খুলনা সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে ২৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতে প্রথম মেয়র হন খালেক। ফলে ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে নিজের আসনটি স্ত্রীকে ছেড়ে দেন তিনি।

২০০৩ সালে ২৫ ডিসেম্বর মঞ্জুরুল ইমামের মৃত্যুর পর ২০০৪ সালে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন খালেক। তার আগে একই শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

২০১৩ সালে মেয়রের মেয়াদ পূর্ণের পর নিজের দল ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় দলীয় সমর্থন নিয়ে পুনরায় প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন খালেক। কিন্তু হেরে যান বিএনপি নেতা মনিরুজ্জামান মনির কাছে।

এরপর ২০১৪ সালে সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাটের আসনটিতে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন খালেক।

কিন্তু সিটি করপোরেশন নির্বাচন এলেও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আবারও খালেকের উপরই আস্থা রাখতে চাইলে সংসদ সদস্যপদ ছেড়ে মেয়র প্রার্থী হন তিনি।

ভোটে জয় অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর বিজয় চিহ্ণ দেখাচ্ছেন নৌকার প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক

ভোটের একদিন আগেও খালেক বলেন, “আপনারা দেখছেন, যে এলাকার সংসদ সদস্য আমি, মোংলা বন্দর এলাকা কত সুন্দর! সেই এলাকা ছেড়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন খুলনার উন্নয়নের জন্য।”

অশ্রুনয়নে ভোট চেয়ে তিনি বলেন, “আমি আর নির্বাচন করব না ভেবেছি। আমার দল, আমার নেত্রী আমাকে ভালো লাগায় (মনোনয়ন) দিয়েছেন। আমি চাই, সারাজীবন এই খুলনার উন্নতি করতে চাই। খুলনার মানুষের সঙ্গে আমার শেষ জীবন আমি থাকতে চাই।”

কড়া মেজাজের তালুকদার খালেকের আচরণের সমালোচনা বিভিন্ন সময়েই উঠেছে; তবে এবার ভোটের আগে বিনয়ী ভঙ্গীতেই দেখা গেছে তাকে।

ভোটের আগে তিনি বলেছেন, “নগরবাসীর কাছে বলতে চাই, এই খুলনাকে সুন্দর খুলনা করার জন্য কী করা প্রয়োজন, সেটা তারা ভালো বোঝেন। আপনাদের সুচিন্তিত মত দেবেন। যে নেতাই নির্বাচিত হোক, আপনারা যেই রায় দেবেন, জনগণও সেটা মেনে নিবে এবং আমিও মেনে নেব।”

আর ভোটে জয় নিশ্চিত হওয়ার পর প্রতিপক্ষ দলে নেতা মঞ্জুকে সঙ্গে নিয়েই কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিলেন খালেক।