এই সরকার শেষ সরকার নয়: পুলিশকে বিএনপির প্রার্থী মঞ্জু

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের ‘গণহারে গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও হয়রানি’ করছে অভিযোগ করে দলটির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেছেন, ‘একদিন’ এসব নির্যাতন ও হয়রানির বিচার হবে।

মাসুম বিল্লাহও সুবীর রায়, খুলনা থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 May 2018, 09:30 AM
Updated : 13 May 2018, 12:52 PM

তার ওই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় খুলনা মহানগর পুলিশের কমিশনার হুমায়ুন কবির বলেছেন, পুলিশ কোনো অন্যায় করেনি।

ভোট সামনে রেখে আনুষ্ঠানিক প্রচারের শেষ দিন রোববার নগরীর মিয়া পাড়ায় নিজের বাসায় সংবাদ সম্মেলনে আসেন মেয়র পদে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মঞ্জু।

তিনি বলেন, “পুলিশ বাহিনীকে বলব, এই সরকার শেষ সরকার নয়। গত সাত দিনে আপনারা যা করেছেন, এর দায় আপনারা এড়াতে পারেন না।

“গত ১০দিনে যে ভয়াবহ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হয়েছি আমরা এবং জনগণ; এর জন্য একদিন না একদিন আপনাদের আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে।”

বিচারের সেই দিন ‘বেশি দূরে নয়’ বলেও পুলিশকে হুঁশিয়ার করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মঞ্জু। 

নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, “আমি নিজেই শঙ্কামুক্ত হতে পারি নাই। গত সাত দিন আমার নির্ঘুম কেটেছে। এই সাত দিনে বাংলাদেশ পুলিশ খুলনার সদস্যরা আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীর বাড়িতে তল্লাশির নামে হয়রানি করেছে। ভয়ার্ত পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। প্রায় ২০০ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার করেছে। পোলিং এজেন্ট, নির্বাচন পরিচালনা কমিটি, দপ্তর সম্পাদক, সিনিয়র নেতাসহ অনেকে গণগ্রেপ্তারের শিকার হয়েছেন।”

এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে খুলনার পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা কোনো অন্যায় করিনি। তারপরও তিনি যদি বিচার করতে চান, বিচার করতে পারেন।”

গণগ্রেপ্তার ও নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, যারা বিভিন্ন মামলার আসামি, তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী, মাদক চোরাকারবারি এবং অবৈধ অস্ত্রধারী, কেবল তাদেরকেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।

বিএনপির প্রার্থী নির্বাচনী কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই এসব অভিযোগ করে আসছেন বলে মন্তব্য করেন পুলিশ কমিশনার।

মঙ্গলবার এই সিটি করপোরেশনের নতুন জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে ভোট দেবে খুলনার চার লাখ ৯৩ হাজার ৯৩ জন ভোটার। মেয়র পদে পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে থেকে একজনকে বেছে নেবেন তারা।  এছাড়া ৩১ ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের দশটি পদে ৩৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন।

দলীয় প্রতীকের এ নির্বাচনে মেয়র পদে ধানের শীষের প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা তালুকদার আব্দুল খালেক।

সরকারের ‘ভোট ডাকাতির প্রস্তুতির’ কারণে বিএনপির ‘সব আয়োজন’ বৃথা যেতে বসেছে মন্তব্য করে খুলনা মহানগর বিএনপি সভাপতি মঞ্জু বলেন, “আমি সবসময় বলেছি, খুলনা হচ্ছে বিএনপির শহর, খুলনা হচ্ছে ধানের শীষের শহর। ৩৫ বছরের ইতিহাসে বিএনপির কোনো প্রার্থী এখানে হারে নাই। আগামীতেও হারবে না।

“কিন্তু সরকারের মনোভাব, সরকারি বাহিনীর মনোভাব সরকারি প্রশাসনের মনোভাব, নির্বাচন কমিশনের নির্লিপ্ততা একটি ভোট ডাকাতির নির্বাচনে আমাদের নিয়ে যাচ্ছে।”

এই নির্বাচনের মাধ্যমে দুটি পরীক্ষা হবে মন্তব্য করে বিএনপির প্রার্থী বলেন, “একটি হচ্ছে এ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় কি-না, এবং দ্বিতীয়টি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হয় কি-না। আজকে পর্যন্ত এই পরীক্ষায় সরকার ফেল করেছে এবং নির্বাচন কমিশনও ফেল করেছে।”

নির্বাচনের আগের দিনও যদি সেনাবাহিনী নামানো হয় তাহলে ‘পরিস্থিতি পাল্টে যেতে পারে’ বলে মনে করেন মঞ্জু।

তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন যদি মাজা শক্ত করে ঘুরে দাঁড়ায়, পাল্টে যাবে চিত্র। আমি এখনো বিশ্বাস করি, নির্বাচন কমিশন এই সুযোগ হাতছাড়া করবে না। এই নির্বাচন যদি অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য না হয়, তাহলে আগামী (জাতীয়) নির্বাচনের পরীক্ষা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন যেতে পারবে না।”

সংবাদ সম্মেলনের পর নগরীর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের চাঁনমারি, বান্ধাবাজার, লবণচড়া, রূপসা স্ট্যান্ড রোড এলাকায় গণসংযোগ করেন মঞ্জু।