খালেদার জামিন প্রশ্নে রায় ১৫ মে

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়াকে হাই কোর্টের দেওয়া জামিন বহাল থাকবে কি না- সে বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত জানা যাবে আগামী ১৫ মে।  

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 May 2018, 07:30 AM
Updated : 9 May 2018, 01:42 PM

হাই কোর্টের ওই জামিন আদেশের বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আপিল শুনানি শেষে বুধবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রায়ের জন্য আগামী মঙ্গলবার দিন ঠিক করে দেয়।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চে মঙ্গল ও বুধবার খালেদা জিয়ার জামিন প্রশ্নে শুনানি চলে।

মঙ্গলবার দুদকের পক্ষে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান এবং রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন। কেন খালেদা জিয়ার জামিন বাতিল হওয়া উচিৎ- সে বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতের সামনে নিজেদের যুক্তি তুলে ধরেন তারা।

বিএনপি চেয়ারপারসনের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন মওদুদ আহমদ, এ জে মোহাম্মদ আলী, খন্দকার মাহবুব হোসেন ও জয়নুল আবেদীন। খালেদা জিয়াকে হাই কোর্টের দেওয়া জামিন কেন বহাল রাখা উচিৎ- সেই যুক্তি আপিল বিভাগের সামনে তুলে ধরেন তারা।

বুধবার রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের দেওয়া যুক্তি খণ্ডন করতে দাঁড়িয়ে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, “আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, হাই কোর্টের দেওয়া জামিন আপিল বিভাগে বহাল থাকবে। জামিনে হস্তক্ষেপ করে আপিল বিভাগ ব্যতিক্রম কোনো নজির সৃষ্টি করবে না।”

যুক্তি খণ্ডন করতে এসে খুরশীদ আলম হাই কোর্টে খালেদা জিয়ার মূল আপিল শুনানির নির্দেশনা চেয়ে জামিন বাতিলের আবেদন জানান।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, খালেদা জিয়ার যেসব অসুস্থতার যুক্তি দেখিয়ে তার আইনজীবীরা জামিন চাইছেন, সেসব সমস্যা বিএনপিনেত্রীর আগেও ছিল।    

“তা নিয়েই তিনি রাজনীতি করে আসছিলেন। সুতরাং সেটা সহনীয় পর্যায়ের। এখন তাকে জামিন দিলে বিচারে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হবে। আপিলের পেপরাবুক যেহেতু তৈরি হয়েছে, তার জামিন বাতিল করে আপিল শুনানি শুরু করা প্রয়োজন।”

খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের মধ্যে সাবেক স্পিকার মুহাম্মদ জমিরউদ্দিন সরকার ও সানাউল্লাহ মিয়াও উপস্থিত ছিলেন শুনানিতে। আদালতে ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি রায়ের পর কারাগারের পথে খালেদা জিয়া

এই দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছরের সাজার রায়ের পর থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে। জজ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল করে জামিন পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আপিল বিভাগ তা স্থগিত করে দিলে খালেদার মুক্তি আটকে যায়।

হাই কোর্টে আপিল চলমান থাকা অবস্থায় ৭৩ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ জামিন পাবেন কি না- তা এখন আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করছে।

অবশ্য জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় জামিন হলেও অন্য মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে তার ‘মুক্তি বিলম্বিত করার কৌশল’ সরকার নিতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে বিএনপি নেতাদের মধ্যে।

খালেদা জিয়া পরিত্যক্ত ওই কারাগারে থেকে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন দাবি করে তাকে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়ার দাবিও তারা জানিয়ে আসছেন।

বিদেশ থেকে জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টের নামে আসা দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের এই মামলা দায়ের করা হয়েছিল জরুরি অবস্থার মধ্যে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই।

রমনা থানায় দুদকের করা এই মামলার বিচার চলে পুরো দশ বছর। ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আখতারুজ্জামান গত ৮ ফেব্রুয়ারি এ মামলার রায়ে খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সাজা দেওয়ার পাশাপাশি তার ছেলে তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদকে দশ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেন।

পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হওয়ার পর মামলার নথি নিম্ন আদালত থেকে এনে তা দেখে গত ১২ মার্চ খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দেয় হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ।

দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গেলে সর্বোচ্চ আদালত গত ১৪ মার্চ জামিন স্থগিত করে নিয়মিত আলিভ টু আপিল করতে বলে। এরপর ১৯ মার্চ দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষকে আপিলের অনুমতি দিয়ে ৮ মে শুনানির দিন ঠিক করে দেয় আপিল বিভাগ। ফলে খালেদার জামিন স্থগিতই থাকে।

অদৃশ্য দ্রুততায় মামলা এগোচ্ছে: মোহাম্মদ আলী

সকাল সোয়া ৯টায় দ্বিতীয় দিনের শুনানির শুরুতে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মশিউর রহমান ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের জামিনের উদাহরণ টেনে এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, শুধু এ দুটি মামলাই নয়, শতকরা ৯৯.৯৯ ভাগ মামলায় হাই কোর্ট জামিন দিলে আপিল বিভাগ তাতে হস্তক্ষেপ করেনি।

তখন আদালত বলে, ২৫ বছর পলাতক ছিল। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করার পরের দিন হাই কোর্ট তাকে জামিন দিয়েছে। সেই নজিরও তো রয়েছে।

জবাবে মোহাম্মদ আলী বলেন, ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত কখনও আইন হতে পারে না। এই মামলাকে (খালেদা জিয়ার জামিনের বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আপিল) অন্য সব মামলা থেকে আলাদা করে দ্রুত বিচার করার চেষ্টা করছে রাষ্ট্র।

“আমরা মানি বা না মানি গোটা রাষ্ট্রকে এই মামলায় যুক্ত করা হয়েছে। এটা এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা। এমনকি বিচার প্রশাসনে হস্তক্ষেপের শামিল। সারাদেশেই আইনজীবীদের মধ্যে এমন একটা ধারণা, কোনো মামলায় জামিন হবে কি হবে না, সেটা নির্ভর করছে বিশেষ ক্লিয়ারেন্স আছে কি না, সেটার উপর।”

এসময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আলীর বক্তব্যে আপত্তি জানিয়ে বলেন, এটা সত্য নয়।

তখন মাহবুবে আলমকে থামিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, “আমি তো বলছি। আপনি কেন কথা বলছেন?”

মোহাম্মদ আলী বলেন, “খালেদা জিয়াকে নির্জন পরিত্যক্ত কারাগারে রাখা হয়েছে। তখন এটা কারাগার ছিল। কিন্তু সেটাকে এখনও কারাগার ঘোষণা করা হয়নি। আমার বলার পর হয়ত সরকার একটা ফাইল তৈরি করে ফেলবে। এভাবেই এরকম স্বেচ্ছাচারিতা করা হচ্ছে।

“এরই ধারাবাহিকতায় খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধিতে রিভিশন আবেদন করা হয়েছে এবং অদৃশ্য দ্রুততার সঙ্গে এ মামলা নিষ্পত্তি করতে চাচ্ছে। এটা অপ্রত্যাশিত।”

জামিন চেয়ে  তিনি বলেন, “আমরা মনে করি হাই কোর্ট তার বয়স, স্বাস্থ্যগত অবস্থা, লঘু সাজা সব বিবেচনায় যথাযথভাবেই জামিন দিয়েছে। ন্যায় বিচারের স্বার্থে এবং বিচারের স্বাভাবিক ধারা অব্যাহত রাখতে এই জামিন বহাল রাখা হোক।

“আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, হাই কোর্টের দেওয়া জামিন আপিল বিভাগে বহাল থাকবে। জামিনে হস্তক্ষেপ করে আপিল বিভাগ ব্যতিক্রম কোনো নজির সৃষ্টি করবে না।”

বিচারিক আদালতের রায়ের প্রসঙ্গে তিনি মোহাম্মদ আলী বলেন, নিম্ন আদালতের রায়ে বলা হয়েছে খালেদা জিয়া অর্থনৈতিক অপরাধ করেছেন। এজন্য তার শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু অর্থনৈতিক অপরাধ হলে তার বিচারের জন্য দেশে অন্য আইন রয়েছে।

“দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় এই অপরাধের বিচারের সুযোগ নেই। এই মামলায় অর্থনৈতিক অপরাধ উল্লেখ করার মধ্য দিয়ে বিচারিক আদালত প্রমাণ করেছে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে।”

খালেদাকে মাইনাসের চেষ্টা: খন্দকার মাহবুব

এ জে মোহাম্মদ আলীর পর শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন ভারতের সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা ও লালু প্রসাদ যাদবের জামিনের উদাহরণ টানেন।

শুনানি শেষে বেরিয়ে আসছেন খালেদার আইনজীবীরা (মঙ্গলবারের ছবি)

তিনি বলেন, “জয়ললিতার চার বছর সাজা হয়েছিল। সাত দিনের মধ্যে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট তাকে জামিন দিয়েছে। আর লালু প্রসাদ যাদবের ৫ বছরের সাজায় দুই মাসের মাথায় সুপ্রিম কোর্ট তাকে জামিন দিয়েছে। সুতরাং খালেদা জিয়ার জামিন বহাল রাখা হোক।”

তিনি বলেন, “আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, তারা (রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদক) একটি মামলাও দেখাতে পারবে না যে, হাই কোর্ট জামিন দেওয়ার পর আপিল বিভাগ হস্তক্ষেপ করেছে। মূলত সরকার মাইনাস ওয়ান থিওরি নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে খালেদা জিয়াকে মাইনাস করতে চান আদালতের উপরে দোষ চাপিয়ে। এটা একটা অশুভ লক্ষণ।

“সারা দেশে ৩৩ লাখের উপরে মামলা। এর মধ্যে হাই কোর্টে ৪ লাখ ৭৬ হাজার। আর আপিল বিভাগে আছে ১৬ হাজারের ওপরে। লাখ লাখ মামলা থাকা সত্ত্বেও খালেদা জিয়ার মামলা দ্রুততার সঙ্গে শুনানি করতে চান কেন অ্যাটর্নি জেনারেল?”

এই মামলাটি সরকার ও দুদক বেছে নিয়েছে: জয়নুল

খন্দকার মাহবুবের পর শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন।

তিনি বলেন, “অ্যাটর্নি জেনারেল কোন কর্তৃত্ববলে বক্তব্য (শুনানি করেছেন) দিয়েছেন। আইন তো তা অনুমোদন করে না।”

তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, “তাহলে আপনারা কেন আপিলে রাষ্ট্রকে পক্ষ করলেন?”

জবাবে জয়নুল আবেদীন বলেন, “এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। করতে হয় তাই করেছি।”

তিনি বলেন, বিশেষ আইনের মামলা বিশেষভাবেই দেখতে হবে। সরকার ভিন্ন একটা উদ্দেশ্য নিয়ে এই আপিল করেছে।

তখন আদালত বলে, ভুল হোক আর শুদ্ধ হোক সরকারকে আপিল করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

জবাবে জয়নুল আবেদীন বলেন, “তা হলে ভুল হোক আর শুদ্ধ হোক, হাই কোর্ট তাকে জামিন দিয়েছে, তা বহাল রাখা হোক। আপনারা তাতে হস্তক্ষেপ করবেন না।”

দুদক ও সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে  সন্দেহ তুলে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মামলা হাই কোর্ট বাতিল করেছে, তার বিরুদ্ধে দুদক এবং রাষ্ট্র আসেনি। শুধু একটা নয়, শেখ হাসিনাসহ সরকারদলীয় অনেক নেতার বিরুদ্ধে মামলায় হাই কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্র আপিল করেনি।

“কিন্তু এই একটা মামলা সরকার এবং দুদক বেছে নিয়েছে। সরকার এটা করে আদালতের ঘাড়ে বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে। দুদক এবং সরকার যখন এক হয়ে আপিল করেছে, তখন থেকে আমাদের মধ্যে আতঙ্ক ন্যায় বিচার নিয়ে।”

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে জয়নুল আবেদীন বলেন, “তাকে জামিন দেওয়া হলে আজ তার শারীরিক অবস্থার এত অবনতি হত না। আদালতের জন্য মানুষ না, মানুষের জন্য আদালত। সুতরাং, সব কিছুই আদালতকে দেখতে হবে।”

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি আদালতকে উদ্দেশ করে বলেন, “এই আদালতের মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের। আমাদেরও দায়িত্ব আছে আপনাদের সহায়তা করার। এ অবস্থায় সরকারের স্বেচ্ছাচারী কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করা ঠিক হবে না।”

তখন আদালত বলে, সরকারে গেলে আপনারাও তাই করবেন।

জয়নুল আবেদীন বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে বলেন, “সরকার নিজেই স্বীকার করেছে, খালেদা জিয়া অসুস্থ। এ কারণে তাকে পাঁচবার বিচারিক আদালতে হাজির করেনি। কারাগার থেকে প্রতিবেদন দিয়ে বলা হয়েছে, তাকে আদালতে হাজির করার তার শারীরিক অবস্থা উপযুক্ত নয়।”

আপিলের শুনানি শুরু করতে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, “তাহলে জামিন বহাল থাক। (আমরা) আপিলের শুনানি করব।”

আমরা তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক: মওদুদ

শুনানিতে সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ বলেন, বিরোধী দলের নেতাদের এখন ‘তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।   

“বিচারিক আদালতের দেওয়া রায়ে কে মূল অভিযুক্ত, আর কে সহযোগী অপরাধী, তা উল্লেখ করা হয়নি। আপনারা সংবাদপত্র পড়েন। দেশে কী হচ্ছে না হচ্ছে, সেটা আপনারা দেখতে পান। রাজনীতির কারণে এটা কোর্টে এসেছে। খালেদা জিয়া বিএনপির চেয়ারপারসন না হলে, মামলাটা এ পর্যায়ে আসত না।

“বিরোধী দলকে বাদ দেওয়ার জন্যই এই মামলা। সাজা দিতে হবে, সেজন্যই সাজা দিয়েছে। দেশে কোটি কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে, এটা তো দুই কোটি টাকার ব্যাপার। অথচ সরকারের কাছে এটা বড় হয়ে যাচ্ছে।”

মওদুদ বলেন, “দেশে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তাতে আমরা ভিকটিম। দেশে আমরা তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক। আমরা অপরাধ না করলেও মামলা হয়, আর তারা অপরাধ করলেও মামলা হয় না।

“মহীউদ্দীন খান আলমগীরের মামলায় আপনারাই রায় দিয়েছেন, এখানেও সেরকমই প্রত্যাশা করছি। আমাদের একজন আইনজীবী এম ইউ আহমেদ। তাকে আপনারা জামিন দেননি। এরপর সে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে। আজ যদি খালেদা জিয়াকে জামিন না দেন, উনার যদি কিছু হয়, তার দায় সরকার আপনাদের ওপর চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে।”

মূল আপিলের নিষ্পত্তি চায় দুদক

খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের বক্তব্যের পর শুনানি করেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

তিনি বলেন, “দুদক কোনো পক্ষপাতিত্ব করছে না। সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির ক্ষেত্রেও আপিল করেছে। নাজমুল হুদার মামলায় ৯০ দিনের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তি না হওয়ায় তাকে জামিন দিয়েছে। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা যেসব মামলার উদাহরণ দিয়েছে, প্রত্যেকটির ক্ষেত্রেই দেড় থেকে দু’বছর কারাভোগ করেছেন আসামিরা। এ কারণেই আদালত জামিন দিয়েছেন।”

তখন আদালত বিএনপির সাবেক এমপি মশিউর রহমানের মামলায় দুদকের রিভিউ না চাওয়ার কারণ জানতে চায়।

জবাবে খুরশীদ আলম বলেন, “যুক্তি নাই বলে রিভিউ করিনি।”

খুরশীদ আলম মূল আপিল শুনানির জন্য বেঞ্চ নির্ধারণের নির্দেশনার আরজি জানিয়ে বলেন, “একটা বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন। সেখানে মূল আপিলের নিষ্পত্তি হোক। তা না হলে মামলার নথি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।”

অসুস্থ যুক্তিতে জামিন হতে পারে না: অ্যাটর্নি জেনারেল

সবশেষে শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, মশিউর রহমানের মামলা এবং খালেদা জিয়ার মামলার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এ মামলায় রাষ্ট্রের টাকা ‘চুরি করা হয়েছে’।

মাহবুবে আলম

এসময় বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা এজলাসে হট্টগোল শুরু করেন। মাহবুবে আলমকে উদ্দেশ করে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপও করতে থাকেন তারা।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “রাষ্ট্রের টাকা নিয়ে গেছে, এটা বলতে পারব না। এটা আমাকে বলতে হবে।”

তখন আদালত কক্ষে আবারও হট্টগোল শুরু করেন বিএনপির আইনজীবীরা।

এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে বলেন, “আপনি উত্তেজিত হবেন না, জবাব দিন।”

মাহবুবে আলম বলেন, “আমার পক্ষে এ অবস্থায় শুনানি করা সম্ভব না, কাল শুনানি হোক।”

একথা শুনে বিএনপির আইনজীবীরা আবার হৈ চৈ শুরু করেন।

জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “দলবল নিয়ে এসেছে আদালতকে চাপ সৃষ্টির জন্য।”

এসময় প্রধান বিচারপতি বলেন, “উভয় পক্ষের আইনজীবীরা এমন করলে কোর্ট চালানো সম্ভব না।”

পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

অ্যাটর্নি জেনারেল তখন খালেদার অসুস্থতার কথা তুলে ধরে বলেন, “এই রোগ নিয়েই তিনি রাজনীতি করে আসছেন, প্রধানমন্ত্রিত্ব করেছেন। এটা তার সহনীয়। এ যুক্তিতে জামিন হতে পারে না।

“আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় এভাবে জামিন হতে থাকলে দেখা যাবে জামিন নিয়ে চলে যাবে। সাজা ভোগ করতে হবে না। এভাবেই ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা পরিত্যক্ত হয়ে যাবে।

এরপর আদালত আগামী মঙ্গলবার রায়ের দিন ঠিক করে শুনানিতে ইতি টানে।

পুরনো খবর