রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে মঙ্গলবারই শপথ নিলেন আবদুল হামিদ; বঙ্গভবনে এই শপথ অনুষ্ঠান হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে।
আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ আবদুল হামিদ দীর্ঘ দিন সংসদ সদস্য থাকার পর স্পিকার, বিরোধী দলের উপনেতার দায়িত্ব সামলে ২০১৩ সালে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ দায়িত্বটিতে আসেন।
প্রথম মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর বঙ্গভবনের নিয়ন্ত্রিত জীবন নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা বলেছেন ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত হওয়া আবদুল হামিদ।
তার মতে, তৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজনীতিকদের জন্য বঙ্গভবনের নিয়ন্ত্রিত জীবন ‘সব সময় আরামদায়ক’ নয়।
তার ভাষায়- “খাঁচার পাখিরে যতই ভালো খাবার দেওয়া হোক, সে তো আর বনের পাখি না। আমি একটা দায়িত্ব হিসেবে এখানে এসেছি। সংসদে মনের খোরাক পেতাম, বঙ্গভবনে পাই না। মনটা অনেক কিছু চায়।”
প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব পাওয়ার পর এক অনুষ্ঠানে বঙ্গভবনের পরিবেশ নিয়ে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেছিলেন, “জিয়াউর রহমানের আমলে জেলে ছিলাম। এখনও জেলে আছি। পার্থক্য আগে স্যালুট দিত না, এখন দেয়।”
কিশোরগঞ্জের আবদুল হামিদ ১৯৯৬ সালে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার পর স্বভাবজাত হাস্যরস দিয়ে সংসদ মাতিয়ে তুলে বেশ জনপ্রিয়তা পান।
পরে স্পিকারের দায়িত্ব পালনের পর এক মেয়াদে সংসদে বিরোধী দলের উপনেতাও ছিলেন আওয়ামী লীগের এই নেতা। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর নিয়ম অনুসারে দলের সঙ্গে তার সম্পর্কচ্ছেদ ঘটাতে হয়।
১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে জন্ম আবদুল হামিদের।
কৈশোরেই তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন; কলেজ জীবনে ছিলেন ছাত্রলীগের নেতা।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১৮ আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে পরে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।
১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ, ১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ, ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ এবং সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
সপ্তম সংসদে ১৯৯৬ সালের ১৩ জুলাই থেকে ২০০১ এর ১০ জুলাই পর্যন্ত ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালনের পর ২০০১ এর ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত স্পিকার হিসাবে সংসদ পরিচালনা করেন আবদুল হামিদ। আর নবম সংসদে নির্বাচিত হওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো স্পিকার হন।
২০১৩ সালে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর বঙ্গভবনের বাসিন্দা হন আবদুল হামিদ।
এই দায়িত্বে ধরাবাঁধা নিয়মের ছকে থেকেও বিভিন্ন অনুষ্ঠান স্বভাবসুলভ হাস্যরসের মধ্যে দিয়ে তিনি পৌঁছে গেছেন মানুষের খুব কাছে।
‘মিতব্যয়ী’ আবদুল হামিদ প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর চিকিৎসার জন্য বাইরে গিয়ে নিজের এবং সফরসঙ্গীদের খরচ কমিয়ে সংবাদের শিরোনামে আসেন।
২০১৪ সালের ২৬ এপ্রিল এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “বিদেশ সফরে হোটেলের ভাড়া কমিয়েছি। সিঙ্গাপুরে আমার হোটেলের ভাড়া ছিল ৬ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার। সেটা কমিয়ে ৬০০ ডলারে এনেছি। স্পিকার থাকার সময় একা যেতাম। এখন তো আর সে উপায় নেই। সফরসঙ্গীদের হোটেল ভাড়াও অর্ধেক করেছি।”
রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ বেড়ে যাওয়া নিয়েও কথা বলেছেন আবদুল হামিদ।
২০১৫ সালের অক্টোবরে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ ব্যবসায়ীদের হাতে থাকা দেশের জন্য ‘কলঙ্কজনক’।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে ১৯ মেয়াদে এ পর্যন্ত ১৬ জন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই হিসাবে আবদুল হামিদ এই পদে সপ্তদশ ব্যক্তি।
তবে কেবল আবদুল হামিদই টানা দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হতে যাচ্ছেন। সংবিধানে সর্বোচ্চ দুই বার রাষ্ট্রপতি পদে থাকার সুযোগ থাকায় এটাই হবে তার শেষ মেয়াদ।
এই সম্পর্কিত খবর