হলফনামার সঙ্গে দেওয়া সম্ভাব্য নির্বাচনী ব্যয় এবং অর্থ প্রাপ্তির উৎস-সম্পর্কিত বিবরণীতে এমন তথ্যই তারা দিয়েছেন।
আগামী ১৫ মে অনুষ্ঠেয় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় নির্বাচনে ভোট হবে দলীয় প্রতীকে। মেয়র পদে জাহাঙ্গীর ও হাসান সরকার- দুজনের মনোনয়নপত্রই বৈধতা পেয়েছে।
২৩ এপ্রিল প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় পার হলে শুরু হবে আনুষ্ঠানিক প্রচার। তখন থেকে ভোট পর্যন্ত প্রার্থীরা বিধি মেনে ব্যয় করছেন কিনা- সে বিষয়ে নজরদারির জন্য ইতোমধ্যে কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচনী বিধিমালা অনুযায়ী গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থীরা নির্বাচনে ৩০ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন।
সেই টাকা কোথা থেকে আসবে এবং কোন খাতে কত খরচ করা হবে- তার একটি সম্ভাব্য বিবরণী হলফনামার সঙ্গে জমা দিতে হয়েছে তাদের।
হলফনামায় তিনি বলেছেন, ভোটের খরচের পুরো ৩০ লাখ টাকাই তিনি নিজের ব্যবসার টাকা থেকে খরচ করতে চান। এজন্য তাকে কোনো ধার করতে হবে না।
অন্যদিকে গতবারের মেয়র এম এ মান্নানকে বাদ দিয়ে বিএনপি এবার প্রার্থী করেছে ৭০ বছর বয়সী হাসান সরকারকে।
তিনি নিজের ব্যবসা ও ঘরভাড়া থেকে ২০ লাখ এবং স্ত্রীর কাছ থেকে নিয়ে বাকি ১০ লাখ টাকা খরচের পরিকল্পনা ইসিকে জানিয়েছেন। তার স্ত্রী সুলতানা রাজিয়া গৃহসম্পত্তির ভাড়া ও গাড়ি বিক্রি থেকে ওই টাকা তাকে দেবেন।
# আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর হলফনামায় বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ২ কোটি ১৬ লাখ টাকার বেশি। ২০১৭-১৮ কর বছরে ৭ কোটি ৯ লাখ ৪৫ হাজার ৪৮৭ টাকার সম্পদের বিপরীতে তিনি কর দিয়েছেন ৭৮ লাখ ২ হাজার ২৫৯ টাকা।
# আর বিএনপি প্রার্থী হাসান সরকার জানিয়েছেন, তার বার্ষিক আয় প্রায় ১১ লাখ টাকা। ৮২ লাখ ৩৫ হাজার ৯৩৪ টাকার সম্পদের বিপরীতে তিনি কর দিয়েছেন ৮০ হাজার ৫৬৪ টাকা।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মণ্ডল বলেন, মেয়র প্রার্থীরা ওই ৩০ লাখ টাকার বাইরে নির্বাচনের সময় ব্যক্তিগত খরচ হিসেবে আরও দেড় লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন। ভোটের প্রচারের সময় প্রার্থীর নিজের খাবার বা জ্বালানি খরচের বিষয়গুলো ব্যক্তিগত খরচ হিসেবে দেখানো যাবে।
মেয়র পদে এই সিটির বাকি সাত প্রার্থীও কেউ নিজের আয় থেকে, কেউ জমি বিক্রি করে, আবার কেউ বাবা, শ্বশুর, মামা, ভাই-বোন বা আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ধার করে ভোটের পরিকল্পনা ইসিতে জমা দিয়েছেন।
>> ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী ফজলুর রহমান নির্বাচনে পুরো ৩০ লাখ টাকাই খরচ করতে চান। আর পুরো টাকাটাই তিনি দেবেন নিজের পকেট থেকে।
>> স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সানাউল্লাহ সম্ভাব্য ব্যয় দেখিয়েছেন ২৫ লাখ ৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে তার শিক্ষকতা পেশা থেকে, কৃষি ও অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে খরচ করবেন ৮ লাখ ৫ হাজার টাকা। ভগ্নীপতি নূরুল ইসলামের ব্যবসা থেকে ধার নিবেন ৪ লাখ টাকা। বোন ইসরানা নাসরিন ৫ লাখ এবং শ্বশুর ডা. নূর মোহাম্মদ ৫ লাখ টাকা ‘স্বেচ্ছায়’ দেবেন। আরও একজন তাকে ‘স্বেচ্ছায়’ ৩ লাখ টাকা দিবেন, যার নাম-ঠিকানা হলফনামায় লেখা হয়নি।
>> জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) প্রার্থী রাশেদুল হাসান রানা নির্বাচনে ব্যয় করবেন ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এর মধ্যে নিজের ব্যবসা থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার আসবে। বড় বোন সীমা ধার দেবেন ১ লাখ টাকা। আর বাবা জালাল উদ্দিন এক লাখ টাকা দিবেন।
>> ইসলামিক আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মো. নাসির উদ্দিন ৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা দিয়েছেন। এর মধ্যে নিজের সঞ্চিত অর্থ থেকে ৩ লাখ এবং শ্বশুর মো. আব্দুল্লাহর কাছ থেকে ৪০ হাজার, মামা মো. সেলিমের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা ধার করবেন। এছাড়া তিন ব্যক্তি এক লাখ ৪০ হাজার এবং ‘সমর্থকগোষ্ঠী ও কর্মীরা’ ৮০ হাজার টাকা তাকে স্বেচ্ছায় দেবেন।
>> স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ আহমদ এ নির্বচনে ৪ লাখ টাকা খরচ করার কথা ভাবছেন। এর মধ্যে ২ লাখ টাকা নিচের পকেট থেকে দেনে। বড় ভাই ফরহাদ হোসেন তার ওষুধের ব্যবসা ও ঘরভাড়া থেকে ‘স্বেচ্ছায়’ তাকে দেবেন ২ লাখ টাকা।
>> বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী জালাল উদ্দিন খরচ করবেন ৬ লাখ ১৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে নিজের ব্যবসা থেকে ৫ লাখ আসবে। আত্মীয় আব্দুল আজিজ খান তাকে দেবেন ১ লাখ ১৮ হাজার টাকা।
সবচেয়ে বেশি আলোচনায় থাকা দুই প্রার্থীর মধ্যে হাসান উদ্দিন সরকার ৯ লাখ টাকায় তিন লাখ পোস্টার ছাপাতে চান।
এছাড়া ঘরোয়া বৈঠক বা সভায় ৩ লাখ ১৩ হাজার; নির্বাচনী ক্যাম্প বা অফিস খরচ হিসেবে ৫০ হাজার; কেন্দ্রীয় ক্যাম্পের জন্য ৮০ হাজার; এজেন্টদের যাতায়াত বাবদ ১ লাখ ৪৪ হাজার; লিফলেটে ২ লাখ আর হ্যান্ডবিলে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা খরচ করতে চান তিনি।
বিএনপির এই প্রার্থী ডিজিটাল ব্যনার বানাবেন ৩৪২টি, তাতে খরচ হবে ২ লাখ ৪ হাজার ৪০০ টাকা। ১৭১টি পথসভায় তিনি ব্যয় করবেন ১ লাখ ৩৬ হাজার ৮০০। প্রচার মাইকের পেছনে যাবে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।
এছাড়া অফিস আপ্যায়নে ৬০ হাজার; ৫৭০ জন কর্মীর খরচ বাবদ ২ লাখ ২৮ হাজার; ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় প্রচারে ১ লাখ এবং ১ লাখ টাকা বিবিধ খাতে সম্ভাব্য খরচ দেখিয়েছেন হাসান সরকার।
ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম আট লাখ টাকা খরচ করে ১০ লাখ লিফলেট বিলি করতে চান তার ভোটের প্রচারে। আর পোস্টারের জন্য তিনি ৩ লাখ ৪২ হাজার টাকা ব্যয় ধরেছেন।
নির্বাচনী ক্যাম্প ও কর্মীদের জন্য খরচ ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা; কেন্দ্রীয় ক্যাম্প বা অফিস খরচ ২ লাখ ৩০ হাজার; যাতায়াতে ২ লাখ ৫০ হাজার; ঘরোয়া বৈঠকে ২ লাখ ৫৬ হাজার ৫০০ টাকা খরচের ফর্দ ধরেছেন আওয়ামী লীগের এই প্রার্থী।
এছাড়া ৫৭টি পথসভার জন্য ৪৫ হাজার ৬০০, মাইকের পেছনে ৯৬ হাজার ৯০০, অফিস আপ্যায়নে ১ লাখ ৭৪ হাজার এবং ৩ হাজার ৪২০ জন কর্মীর পেছনে ৫ লাখ ১৩ হাজার টাকা খরচের পরিকল্পনা রয়েছে জাহাঙ্গীরের।
এই সংক্রান্ত আরও খবর