বুধবার এক অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত তাদের বিভিন্ন সুপারিশের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন নাগরিক সমাজের কয়েকজন প্রতিনিধিও।
আগামী ডিসেম্বরে একাদশ সংসদ নির্বাচনের তোড়জোড়ের মধ্যে কয়েক মাস আগে ‘অবাধ-নিরপেক্ষ, অর্থবহ নির্বাচন: নির্বাচনকালীন সরকার, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ও নির্বাচন ব্যবস্থার মৌলিক সংস্কার’ শীর্ষক এই মতবিনিময় সভা আয়োজন করে বাম দল দুটি।
সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম দুই দলের পক্ষে নির্বাচন ব্যবস্থা সং স্কারে সুনির্দিষ্ট ১৮টি সুপারিশ তুলে ধরেন।
এর মধ্যে রয়েছে নির্বাচনকালীন সরকার ও নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া; সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার প্রবর্তন; প্রার্থীদের সমান সুযোগ; সন্ত্রাসমুক্ত নির্বাচন; নির্বাচনে ধর্মের ব্যবহার রোধ; রাজনৈতিক দলে গণতন্ত্র চর্চা নিশ্চিত; নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন ইত্যাদি।
সেলিম বলেন, “আমাদের প্রস্তাবনাগুলো আরও মজবুত করে দেশবাসীর কাছে যাব। দেশবাসী যেসব বিষয় নিয়ে বিচলিত সেগুলো নিয়ে আমাদের সংগ্রাম চলছে, সংগ্রাম চলবে।
“আমাদের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার বাড়ছে, এর বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ আরও জোরদার করতে হবে।”
ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামানের সভাপতিত্বে এই সভায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান, সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, কলামনিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ , ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য্য, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত, নাগরিক ঐক্যের নেতা এস এম আকরাম, গণফোরামের নির্বাহী সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা কাজল দেবনাথ বক্তব্য দেন।
‘ভোট বিতর্কিত হলে অরাজকতা’
গতবারের মতো এবারের সংসদ নির্বাচনও বিতর্কিত হলে বাংলাদেশ অরাজতার মধ্যে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।
আগামী ডিসেম্বরে একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চললেও তাতে সব দলের অংশগ্রহণে হবে কি না, তা এখনও নিঃসংশয় নয় বলে অনেকের মধ্যে শঙ্কা রয়েছে।
সিপিবি-বাসদের আলোচনায় তিনি বদিউল আলম বলেন, “আমি সব সময় বলছি যে, আবারও যদি দেশে বিতর্কিত নির্বাচন হয়, তাহলে দেশে অপশক্তির উত্থান ঘটবে। এর জন্য পুরো জাতিকে মাশুল দিতে হবে।”
সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, “কারচুপির মাধ্যমে পার্লামেন্টারি সরকার সামরিক শাসন ও সামন্ততান্ত্রিকের মধ্যে কোনো তফাৎ নেই। এই জন্য সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
“আর ভালো নির্বাচন করতে হলে শুধু নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে সম্ভব নয়, সমাজের মানুষ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশন মেরুদণ্ড সোজা করে কাজ করতে পারলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।”
হাফিজউদ্দিন খান বলেন, “নির্বাচন মানেই হল অবাধ, ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার। এখন নির্বাচন কী হয়, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। চোখের সামনে থেকে দেখেছি ব্যালট পেপার ছিনতাই, সেটা চালু হয়ে গেছে এবং এখন চলছে, এবং চলবে মনে হচ্ছে।”
সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কোনো আশা দেখছেন না ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এই মুহুর্তে সামনে যে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা হল পার্লামেন্ট বহাল থাকবে। অত্যন্ত ক্ষমতাধর ব্যক্তি থাকবেন উপস্থিত, সেখানে স্বাধীন ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না।”
ক্ষমতাসীন দল দেশব্যাপী নির্বাচনী প্রচার চালালেও বিরোধী দলগুলো সেই সুযোগ পাচ্ছে না বলে অভিযোগ তোলেন হাফিজউদ্দিন।
তিনি বলেন, “এক দলের নেতা ইলেকশনের ক্যাম্পেইন করে বেড়াচ্ছেন। অন্যান্য দল, বিএনপি ঘর থেকে বের হতে পারছে না। এটা নাকি নির্বাচন কমিশনের কিছু করার নেই। ৪৫ দিন আগে শিডিউল ডিক্লেয়ার করবে, তখন কী কিছু করা যাবে?”
নির্বাচনের আগে আগে উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়ে সরকারি দল মানুষের সঙ্গে ‘প্রতারণা’ করছে দাবি করে তা বন্ধে আইন প্রণয়নের পক্ষে মত দেন তিনি।
রানা দাশগুপ্ত বলেন, “নির্বাচনের বাকি আর ছয় মাস। ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচনী সংস্কার করার মতো সময় এখন আছে কি না, এটা ভেবে দেখা দরকার।”
একাদশ নির্বাচন নিয়ে সবার মধ্যে একটি আশঙ্কা রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সম্প্রতি বরিশাল থেকে ঘুরে এসেছেন জানিয়ে পঙ্কজ ভট্টাচার্য্য বলেন, “সাধারণ মানুষের মধ্যে নির্বাচনের কোনো হাওয়া দেখছি না। একটা তীব্র বিচ্ছিন্নতায় জনগোষ্ঠী আক্রান্ত। নির্বাচন নিয়ে বিচ্ছিন্নতা, গণতন্ত্র, সংসদ, রাজনীতি নিয়ে বিচ্ছিন্নতা মধ্যে সদূর প্রসারী মৌলিক বিষয়ে আলোচনা খুব গুরুত্বপূর্ণ।”
রাজনীতি এখন রাজনীতিকদের হাতে নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এখন রাজনীতির নির্ধারক একচেটিয়া ব্যবসায়ীরা, লুটেরা। যারা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করছে, কিন্তু তাদের বিচার হচ্ছে না, ব্যাংক লুট করছে যাদের বিচার হচ্ছে না।”