কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে হলে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর গত মঙ্গলবার রাতে এশাকে সাময়িক বহিষ্কার করেছিল ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি।
শুক্রবার ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংগঠনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ‘সম্পূর্ণ নির্দোষ’ প্রমাণিত হওয়ায় ওই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে হল সভাপতি পদে তাকে পুনর্বহাল করা হল।
অবশ্য ছাত্রলীগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তার নাম লেখা হয়েছে ‘ইশারাত জাহান ইশা’। এর আগে বহিষ্কার এবং তদন্ত কমিটি গঠনের সময়ও একই বানানে সংবাদবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল।
কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের টানা আন্দোলনের মধ্যে গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে সুফিয়া কামাল হলে উত্তেজনা তৈরি হয়। আন্দোলনকারীদের নির্যাতনের অভিযোগে হলের ছাত্রীরা এশাকে তার কক্ষে অবরুদ্ধ করে ফেলেন এবং তার বহিষ্কারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।
হলের শিক্ষার্থীরা সে সময় সাংবাদিকদের বলেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত তিন শিক্ষার্থীকে সোমবার রাতে ডেকে নিয়ে নির্যাতন চালান এশা। তবে ভয়ে তারা ঘটনাটি চেপে গিয়েছিলেন।
মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে মোর্শেদা আক্তার নামে উদ্ভিদ বিজ্ঞানের এক শিক্ষার্থীকে ডেকে নিয়ে আবারও নির্যাতন চালানোর পর ঘটনাটি প্রকাশ পেলে তাকে অবরুদ্ধ করে ফেলা হয়। মোর্শেদার ব্যান্ডেজ বাঁধা রক্তাক্ত পায়ের ছবিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
বিক্ষোভের খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী ওই হলে গিয়ে দর্শন বিভাগের ছাত্রী এশাকে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। পরে ওই রাতেই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি এশাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারের কথা জানিয়ে বিবৃতি পাঠায়।
এশার পক্ষে যারা, তারা দাবি করেন, মোর্শেদার পা কেউ কাটেনি, বরং এশার কক্ষের জানালার কাচে লাথি মারতে গিয়ে তার পা কেটে যায়।
এরই মধ্যে ছাত্রলীগের সাবেক একদল নেতা বৃহস্পতিবার বিকালে বনশ্রীতে এশার এক আত্মীয়ের বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন এবং তার প্রতি সমবেদনা জানান। এশাকে তাদের ফুলের মালা পরিয়ে দেওয়ার ছবিও ফেইসবুকে আসে।
এশাকে দেখতে যাওয়া ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সামসুল কবির রাহাত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই ছাত্রলীগ নেত্রীর উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা হয়েছে।
“মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে স্বাধীনতাবিরোধী একটি শক্তি তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করেছে। তার শরীরে প্রচুর মারের দাগ রয়েছে। বারবার আঁতকে উঠছে।”
ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটনসহ একদল সাবেক নেতা আলাদাভাবে বিবৃতি দিয়ে এশাকে ‘অপদস্থ করার’ নিন্দা জানিয়ে তার ‘সম্মানহানির’ সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন।
এশার বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহারের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সংগঠনের তদন্ত কমিটির সদস্য ছাত্রত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবিদ আল হাসান শুক্রবার মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “সেই রাতে পরিস্থিতিটাই তখন এমন ছিল যে তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিল।”
তদন্ত কমিটির আরেক সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স বলেন, “ওই ঘটনার সব ভিডিও এবং প্রমাণ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ওই হলের ছাত্রলীগরাই এশার ওপর নির্মমভাবে নির্যাতন চালিয়েছে। অভিযোগে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় সে অনুযায়ী প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।”