কোটা বাতিলের ঘোষণায় ‘কূটচাল’ দেখছে বিএনপি

সরকারি চাকরির কোটা বাতিল করে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে ‘কূটচাল’ হিসেবে দেখছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 April 2018, 12:53 PM
Updated : 12 April 2018, 12:53 PM

কোটা সংস্কারের আন্দোলনের মধ্যে বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে সরকারি চাকরির কোটা বাতিলই করে দেওয়ার কথা বলেন।

বৃহস্পতিবার নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেন।

তিনি বলেন, “জাতীয় সংসদে কোটা বাতিলের কথা বলে প্রধানমন্ত্রী গোটা জাতিকে হতাশ করেছেন। তিনি আন্দোলনকারীদের দাবি সঠিকভাবে মূল্যায়ন না করে ক্ষোভের বশর্বতী হয়ে কোটা বাতিলের কথা বলেছেন। সরকার মুক্ত মন নিয়ে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের দাবিকে আমলে নেননি।

“প্রধানমন্ত্রী যে ঘোষণা দিয়েছেন এটা আসলে কোনো সমাধানের পথ দেননি। প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা একটি কূটচাল ছাড়া আর অন্য কিছু নয়। এটা ক্ষোভ, বিরক্তি ও হুমকির শামিল ছাড়া অন্যকিছু নয়।”

রিজভী বলেন,“সংবিধানে অনগ্রসর জাতি-গোষ্ঠিকে কোটা দেওয়ার বিধান সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। আমাদের দলের অবস্থানও মহাসচিবও পরিষ্কার করেছেন। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও তার বক্তব্যে এই কোটার বিষয়ে কথা বলেছেন। অর্থাৎ প্রান্তিক ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠি, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও প্রতিবন্ধী- এদের কোটাটা বহাল থাকবে। এটা বিএনপিরও অবস্থান ও যারা আন্দোলন করছেন তাদেরও দাবি।

“কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সব কোটা বাতিল করে দিলেন এটা রহস্যজনক। গতকাল সরকার প্রধানের কোটা বাতিলের ঘোষণা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক।”

তিনি আরো বলেন, “প্রধানমন্ত্রী গতকাল তার বক্তব্যে বলেছেন, ছাত্রছাত্রীদের এই আন্দোলনে তিনি খুব উৎকণ্ঠিত, রাত্রে তার ঘুম আসে না। বিশেষ করে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্রীদের জন্য তিনি টেনশনে থাকেন। আসলে কী তাই? গতকালই প্রধানমন্ত্রী সুরের ধারার রজতজয়ন্তী উৎসবে সঙ্গীত উপভোগ করেন। তার সঙ্গীতানুষ্ঠান উপভোগে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।

“আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, ঢাকাসহ সারাদেশ যখন আন্দোলনে উত্তাল, যখন রাজধানী স্থবির হয়ে পড়েছে, যখন সরকারি বাহিনীর হাতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শরীর থেকে রক্ত ঝরছে, তখন সুরের ধারা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গানের সুরে তাল মেলাচ্ছেন। এ যেন রোম পুড়ছে আর নিরো বাঁশি বাজাচ্ছে।”

কোটা সংস্কারের আন্দোলন নিয়ে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মামুন আহমেদের সঙ্গে তারেক রহমানের কথোপকথনের সম্পর্কিত এক প্রশ্নে রিজভী বলেন, “উনি (তারেক রহমান) একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের প্রধান। দেশে যে আন্দোলন হচ্ছে সে বিষয়ে তিনি কনসার্ন থাকবেন না, উনি উনার মতামত জানাবেন না? উনি যে কথাটা বিশ্বাস করেন, সেটা উনি দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাকে বলেছেন।

“আমার সাথে উনার (তারেক রহমান) সকালে কথা হয়েছে। উনি বলেছেন যে, ‘এটাতে (কথোপকথন) তো অন্যায় কিছু হয়নি। আমি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে আমার যে মতামত, আমি যে চিন্তা করি তা দলের একজন উপদেষ্টার সাথে আলোচনা করেছি। এটা তো অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা, এটাতে তো কোনো বিচ্যুতি ঘটেনি’।”

রিজভী বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে, সরকারে অনুগ্রহভাজন গণমাধ্যমের কেউ কেউ এটাকে দেখাতে চাচ্ছে অন্যভাবে। যেটি সত্য ও যা সুস্পষ্ট সেটা তারেক রহমান সুস্পষ্টভাবেই বলেছেন। এটা দেশবিরোধীও নয়, কিছুরই বিরোধী নয়। আজকে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন, তাদের দাবি বিষয়ে দলের কী অবস্থান- এটা তো দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলবেনই। এটাই স্বাভাবিক।”

সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবুল খায়ের ভুঁইয়া, আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, আবদুস সালাম আজাদ সিদ্দিকী, তাইফুল ইসলাম টিপু, সেলিমুজ্জামান সেলিম, কাজী রফিক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।