কারাগারে খালেদা জিয়া ভালো নেই: ফখরুল

কারাগারে গিয়ে অসুস্থ খালেদা জিয়াকে দেখে এসে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তাদের চেয়ারপারসন ‘খুব একটা ভালো নেই’।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 April 2018, 01:17 PM
Updated : 6 April 2018, 07:46 PM

শুক্রবার বিকাল পৌনে ৫টার দিকে মির্জা ফখরুল একাই নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে যান। এক ঘণ্টা পর তিনি বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

ফখরুল বলেন, “ম্যাডামের স্বাস্থ্য খুব একটা ভালো নয়। তার আর্থরাইটিসের সমস্যা বেশ বেড়ে গেছে। তার হাঁটতেও কষ্ট হয়। যেটাকে কিছুটা স্নায়ুবিক সমস্যা বলা হয়, সেটাও দেখা দিয়েছে। সত্যিকার অর্থেই তিনি কিছুটা স্বাস্থ্য সমস্যায় পড়েছেন।”

এজন্য যে চিকিৎসা দরকার, কারাগারে খালেদা জিয়া তা পাচ্ছেন না অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “যারা তার চিকিৎসা করতেন, সেই ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের এখনো দেখা করতে দেওয়া হয়নি।”

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের সাজার রায়ের পর থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ওই কারাগারে রাখা হয়েছে। সেখানে তিনিই এখন একমাত্র বন্দি।

এর আগে গত ২৯ মার্চ খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে রওনা হয়েও পরে সাক্ষাৎ স্থগিত করা হয় বিএনপিনেত্রীর অসুস্থতার কারণে। 

ওই খবরে বিএনপির উদ্বেগের মধ্যে সরকার এক সপ্তাহ আগে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে। চার সদস্যের এই বোর্ডের সদস্যরা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর অসুস্থতা ‘গুরুতর নয়’।

কিন্তু ওই মেডিকেল বোর্ডকে ‘লোক দেখানো’ হিসেবে বর্ণনা করে খালেদার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের মাধ্যমে তার চিকিৎসা করানোর দাবি জানিয়ে আসছেন বিএনপি নেতারা।

মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা মনে করি, যারা তার নিয়মিত চিকিৎসা করেন, তাদেরকে দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হোক এবং যে চিকিৎসা দরকার, অবিলম্বে তা দেওয়া হোক।”

খালেদা জিয়াকে কেমন দেখলেন- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আপনারা যেটা জানতে চাইছেন… বন্দি জীবনে উনি (খালেদা জিয়া) অভ্যস্ত নন। তাকে যখন বন্দি করে রাখা হয়, তখন চাপ পড়েই। তবে উনার মনোবল অনেক দৃঢ়। উনি আমাদের চেয়েও দৃঢ় মনের মানুষ।

“উনি বার বার এ কথা বলেছেন যে, ‘আমার জন্য আপনারা ভাববেন না। আমি ভালো আছি, আমি শক্ত আছি এবং এসব ছোটো-খাটো বিষয় আমার কোনো সমস্যা করবে না।”

এই সাক্ষাতে চেয়ারপারসনের কাছে কোনো বার্তা পেয়েছেন কি না- এ প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, “তিনি মনে করেন, দেশে যে সঙ্কট বিরাজ করছে, সেই সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য একমাত্র পথ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। সেজন্য যে   আন্দোলন চলমান আছে, তা তিনি চালিয়ে যেতে বলেছেন।”

খালেদা জিয়া এখন আন্দোলনকেই ‘গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার একমাত্র পথ’ বলে মনে করছেন জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “সরকারের উচিৎ হবে এ বিষয়টি আমলে নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।”

ফখরুল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান ও মহাসচিবের একান্ত সহকারী ইউনুস আলী সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

কারাগারে সাক্ষাৎ শেষে ফখরুল শাহবাগের ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন তার মা ফাতিমা আমিনকে দেখতে যান।

এর আগে গত ৭ মার্চ মির্জা ফখরুলসহ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাত নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারে দেখা করার সুযোগ পেয়েছিলেন।

ওইদিন স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, আবদুলমঈন খান,  আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এম বি এম আবদুস সাত্তারও ছিলেন ফখরুলের সঙ্গে।

খালেদা জিয়ার বোন সেলিনা ইসলাম, ছোট ভাই শামীম এস্কান্দর, স্ত্রী কানিজ ফাতিমাসহ পরিবারের সদস্যরা একাধিকবার কারাগারে গিয়ে দেখা করে এসেছেন। 

এছাড়া খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরাও দুই দফা কারাগারে দেখা করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে।