ভোটের সময় সাংসদদের নিয়ে মন্ত্রিসভা চান এরশাদ

সংসদ সদস্যদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভা গঠনের দাবি জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 March 2018, 10:13 AM
Updated : 24 March 2018, 12:21 PM

শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ কথা বলেন তিনি।

এরশাদ বলেন, “অনেকেই আমার কাছে জানতে চান, আগামী নির্বাচন কেমন হবে, নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা কী? উত্তরে আমি বলতে চাই, আমরা জাতীয় পার্টি সুষ্ঠু নির্বাচন চাই।

“নির্বাচনের সময় জাতীয় সংসদ সদস্যদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করতে হবে। আমরা সাধারণ কাজকর্ম করব। নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন থাকবে এবং একে (নির্বাচন কমিশন) পূর্ণ ক্ষমতা দিতে হবে। ইনশাল্লাহ, সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে বাধ্য থাকবে।”

জাতীয় পার্টি আগামী জাতীয় সংসদ নিরবাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করার মতো শক্তি অর্জন করেছে বলেও এরশাদের দাবি।

বিএনপির বর্জনের পর নানা নাটকীয়তার মধ্যে ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল জাতীয় পার্টি। এরপর বিরোধী দলের আসনে বসে তারা, রওশন হন বিরোধীদলীয় নেতা।

পরে জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর তিন সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ মন্ত্রী এবং মুজিবুল হক চুন্নু ও মশিউর রহমান রাঙ্গা প্রতিমন্ত্রী হন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদকেও করা হয় মন্ত্রীর মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। জাতীয় পার্টির দ্বিমুখী অবস্থানের সমালোচনাও রয়েছে বিভিন্ন মহলে।

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শনিবার জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশে দলের সিনিয়র কো- চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ।

তবে এবার জাতীয় পার্টি আত্মবিশ্বাসী জানিয়ে এরশাদ বলেন, “আজকের সমাবেশ শুধু সমাবেশ নয়। এ যেন গণসমুদ্র, মহাসমুদ্র। আমার মন ভরে গেছে আজ, কানায় কানায় পূর্ণ।

“ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য জাতীয় পার্টি আজ প্রস্তুত। আজকের সমাবেশে আমরা তা প্রমাণ করেছি। এখান থেকে একটা বার্তা আমি দেশবাসীকে দিতে চাই- নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠনের শক্তি আমরা আর্জন করেছি। এই শক্তির উৎস আপনারা।”

বক্তৃতায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, কর্মসংস্থান, শিক্ষা ব্যবস্থার কঠোর সমালোচনা করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, “গত ২৫-৩০ বছরে দুই দল জনগণকে কী দিয়েছে?- অন্যায় অবিচার। আপনাদের উন্নয়ন মানে ঢাকা শহরের চাকচিক্য। ঢাকার বাইরে গিয়ে দেখেন দেশের কী অবস্থা, মানুষ কেমন আছে। তখন বুঝবেন কতটা উন্নয়ন হয়েছে।”

“খবরের কাগজ খুললেই হত্যা-ধর্ষণ। জনগণের কোনো নিরাপত্তা নাই। তারা রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারে না। লক্ষ লক্ষ যুবক-যুবতী বেকার। ব্যাংকে টাকা নাই। শিক্ষা ব্যবস্থায় পচন ধরেছে। আগে পাস করা কঠিন ছিল, এখন ফেল করা কঠিন। মানুষ শান্তিতে থাকতে চায়। আমরা দেশবাসীকে নিরাপত্তা দেব, শান্তি দেব। একটাই কথা- উই আর রেডি অর নট- উই আর রেডি।”

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শনিবার জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশের একাংশ।

সমাবেশে যোগ দিতে সকাল থেকেই সোহরাওয়ার্দীতে জড়ো হতে থাকেন লোকজন। মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, আব্দুস সবুর আসুদ, সালমা ইসলাম, মশিউর রহমান রাঙ্গার সমর্থকরা ছাড়াও বড় বড় মিছিল নিয়ে সমাবেশে উপস্থিত হন জাতীয় যুব সংহতি, জাতীয় মহিলা পার্টি, জাতীয় শ্রমিক পার্টি, জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টি, জাতীয় ছাত্র সমাজসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের, মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলদার, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, সাহিদুর রহমান টেপা, এসএম ফয়সাল চিশতী, সুনীল শুভরায়, অবসরপ্রাপ্ত মেজর খালেদ আখতার, জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোটের শরিক নেতা এম এ মতিন, আবু নাসের ওয়াহেদ ফারুক প্রমুখ।

সমাবেশ পরিচালনা করেন চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা রেজাউল ইসলাম ভূইয়া, ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন রাজু এবং জহিরুল ইসলাম জহির।