খালেদার জামিন স্থগিতে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন আদালতের: বিএনপি

খালেদা জিয়াকে হাই কোর্টের দেওয়ার জামিনের আদেশ আপিল বিভাগ স্থগিত করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 March 2018, 11:18 AM
Updated : 14 March 2018, 12:10 PM

বুধবার আপিল বিভাগের আদেশের পর নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে করে দলটি বলেছে, এতে আদালতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হল।

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালত ৫ বছর কারাদণ্ড দেওয়ার পর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া আপিল করে জামিনের আবেদন করলে হাই কোর্ট চার মাসের জন্য তাকে জামিন দিয়েছিল। দুদকের আবেদনে হাই কোর্টের ওই আদেশ রোববার পর্যন্ত স্থগিত করেছে আপিল বিভাগ।

এর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ বলেন, “আজকে আমরা ক্ষুব্ধ, দুঃখিত ও আশাহত হয়েছি।

“উচ্চতম আদালত যে কোনো আদেশ দিতে পারেন, কিন্তু এক পক্ষের বক্তব্য শুনে এই ধরনের আদেশ দেওয়া মোটেই যুক্তিসঙ্গত নয়। এতে দেশের উচ্চতম আদালতের ঐতিহ্য এবং ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে আমরা মনে করি।”

ব্যারিস্টার মওদুদ নিজেও এই মামলায় তার নেত্রীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন।  

তিনি বলেন, “শুনানির সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবীর বক্তব্য শোনার পর বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের কোনো বক্তব্য না শুনে জামিন আদেশ রোববার পর্যন্ত স্থগিত করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।

“এত তাড়াহুড়া করে অপর পক্ষকে না শুনে এরকম একটি রায় আমরা কেউ প্রত্যাশা করিনি। আইনজীবীরা এই একতরফা শুনানির তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।”

বিএনপি অভিযোগ করে আসছে, ‘সাজানো মামলায় গায়ের জোরে’ তাদের নেত্রীকে সাজা দেওয়া হয়েছে।

রায়ের পর সত্যায়িত অনুলিপি পাওয়া এবং জামিন পেতে দেরির পেছনে সরকারের হাত রয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের।

সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ অন্য মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার দেখানোর সমালোচনাও করেন।

তিনি বলেন, “শ্যোন অ্যারেস্ট সম্পূর্ণ বেআইনি। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে এটা একেবারেই  বেআইনি। তারপরও তারা (সরকার) করছেন। আজকে নিম্ন আদালত সম্পূর্ণভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হচ্ছে।”

সংবাদ সম্মেলনে খালেদার পক্ষে শুনানিতে থাকা আইনজীবীদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন ও জয়নাল আবেদীনও ছিলেন।

সপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব বলেন, “সব মানুষ যাতে সমভাবে আইনের শাসন পায়, আইনমত বিচার পায়, রাজনৈতিক নেতাদের চেহারা দেখে যাতে বিচার কার্য না চলে, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।”

সমিতির বর্তমান সভাপতি জয়নাল আবেদীন বলেন, “দেশে আইনের শাসন হুমকির সম্মুখীন। এই অবস্থা যদি চলতে থাকে, তাহলে দেশে বিচার ব্যবস্থা থাকবে না, সাধারণ মানুষ বিচার পাবে না।”

‘ওকালতনামা সই করতে দিচ্ছে না’

কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে ওকালতনামায় সই করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “হাই কোর্ট জামিন দেওয়ার পরে আবার দীর্ঘসূত্রতা শুরু  হয়েছে তার জামিন যাতে চূড়ান্ত না হতে পারে, তিনি যাতে বেরুতে না পারেন, সেজন্য সমস্ত ছল-চাতুরি করা হচ্ছে।

“সবচেয়ে বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, ওকালতনামায় সই করানো বা সই নেওয়া, এটা একজন কারাবন্দির অধিকার। তাকে (খালেদা জিয়া) ওকালতনামায় সই করা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।”

সরকার বিচার বিভাগকে ‘সম্পূর্ণভাবে দলীয়করণের’ চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।  

“সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে (সাবেক প্রধান বিচারপতি) জোর করে পদত্যাগ করে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। এরপর আমরা দেখেছি, সুপারসিড করে আজকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে সমগ্র বিচার ব্যবস্থায় এর প্রতিফলন পড়েছে।”

আগামী নির্বাচন থেকে বিএনপিকে দূরে রাখতে এসব মামলা চালানো হচ্ছে বলে দাবি করেন ফখরুল।

পুলিশি হেফাজতে তেজগাঁও কলেজ ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন মিলনের মৃত্যুর ঘটনাটি তুলে ধরে তিনি বলেন, “এরকম নিমর্মতা আগে আমরা কখনও দেখিনি। ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর এই ধরনের কার্য্ক্রম ছিল।”

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এ জে মোহাম্মদ আলী, আবদুস সালাম, আতাউর রহমান ঢালী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, নজরুল ইসলাম মনজু, কায়সার কামাল, নওশাদ জমির উপস্থিত ছিলেন।