রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের আলাদা দুটি আবেদন শুনে চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী মঙ্গলবার কোনো আদেশ না দিয়ে বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং দুদকের পক্ষে খুরশীদ আলম খান শুনানি করেন। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন এজে মোহাম্মদ আলী।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে এতিমখানা দুর্নীতি মামলার রায়ের পর থেকে গত ৩২ দিন ধরে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
নিম্ন আদালত থেকে ওই মামলার নথি হাই কোর্টে আসার পর তা দেখে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার তাকে চার মাসের জামিন দেয়।
সেই সঙ্গে তার আপিল শুনানির জন্য ওই সময়ের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখাকে পেপারবুক তৈরি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
খালেদা জিয়ার জামিনের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষ দ্রুততম সময়ের মধ্যে আপিল শুনানি শুরুর আদেশ চাইলেও হাই কোর্ট চারটি যুক্তিতে জামিন মঞ্জুর করে।
এগুলো হল- ১. নিম্ন আদালত পাঁচ বছরের সাজা দিয়েছে, এই সাজায় হাই কোর্টে জামিনের রেওয়াজ আছে। সে বিবেচনায় তিনি জামিন পেতে পারেন। ২. বিচারিক আদালতের নথি এসেছে, কিন্তু আপিল শুনানির জন্য এখনও প্রস্তুত হয়নি। ফলে আসামি জামিনের সুবিধা পেতে পারেন। ৩. বিচারিক আদালতে মামলা চলাকালে খালেদা জিয়া জামিনে ছিলেন; এর অপব্যবহার করেননি। আদালতে নিয়মিত উপস্থিত ছিলেন। ৪. বয়স এবং বয়সজনিত শারীরিক অসুস্থতা বিবেচনায় নিয়ে তাকে জামিন দেওয়া যায়।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম সোমবারই বলেছিলেন, তারা হাই কোর্টের জামিন আদেশের বিরুদ্ধ চেম্বার আদালতে যাবেন।
এর ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার তারা আলাদাভাবে আবেদন করেন। কিন্তু চেম্বার আদালতের সাড়া না পাওয়ায় এখন তাদের আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
অবশ্য অ্যাটর্নি জেনারেল মনে করছেন, আপিল বিভাগ যদি খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়, তারপরও এখনই তার মুক্তি মিলবে না, কারণ নাশকতার একটি মামলায় কুমিল্লার আদালত তাকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে।
চেম্বার আদালতে শুনানির পর মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, কুমিল্লার আদালত যে হাজিরা পরোয়ানা জারি হয়েছে, সে মামলাতেও খালেদা জিয়াকে জামিন নিতে হবে।
“কাস্টডি ওয়ারেন্ট দেওয়ার অর্থই হল সে মামলাতেও তিনি এখন অবরুদ্ধ। তিনি সেই মামলায় জেলে আছেন বলে ধরতে হবে। কাজেই ওই মামলাতে তাকে জামিন না নিয়ে মুক্তি পাওয়ার কোনো অবকাশ নেই।”
খালেদা জিয়াকে দীর্ঘদিন কারাগারে রাখতেই এসব জটিলতা তৈরি করা হচ্ছে- বিএনপি নেতাদের এমন অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “এসব কথার কোনো সারবত্তা নেই।”
এদিকে খালেদা জিয়ার জামিন আদেশে হাই কোর্টের বিচারকদের স্বাক্ষরের পর তা মঙ্গলবার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত (সিএমএম) ও বিশেষ জজ আদালতে পাঠানো হয়।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী কায়সার কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজ যখন জামিন আদেশ পাঠানো হয়েছে, ততক্ষণে আদালত কর্মঘণ্টা শেষ হয়ে গেছে। ফলে আগামীকাল সকালে আমাদের আইনজীবীরা মুখ্য মহানগর আদালতে গিয়ে জামিননামা জমা দেবেন এবং সেখান থেকে জামিননামার একটি একটি অনুলিপি কারা কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেবেন।”
জামিননামা পাওয়ার পর কারা কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যবস্থা করবে বলে জানান এই আইনজীবী।
এদিকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের আদালত প্রতিবেদক জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে জামিন দিয়ে হাই কোর্টের জামিনের আদেশ ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে পৌঁছলেও সময়ের অভাবে জামিননামা দাখিল করতে পারেননি তার আইনজীবীরা।
হাই কোর্ট বিভাগের আদান-প্রদান শাখার অফিস সহায়ক তাজউদ্দিন আহমেদ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার পর একটি বাইসাইকেলে করে ওই আদেশ মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তা ফারুক চৌধুরীকে দেন।
অফিস সময় শেষ হওয়ায় জামিননামা দাখিল করা যায়নি বলে সাংবাদিকদের জানান খালেদার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া।
তিনি বলেন, “যেহেতু উচ্চ আদালতের কোনো স্থগিতাদেশ নেই, তাই বুধবার ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) জামিনামা দাখিল করা হবে।”