নেতৃত্বে নারী: প্রতিশ্রুতিতেই পার হচ্ছে দলগুলো

নিবন্ধন নিয়ে ১১ বছর পার করতে চললেও শর্ত অনুযায়ী সব স্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব আনতে পারেনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো।

মঈনুল হক চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 March 2018, 06:13 PM
Updated : 7 March 2018, 06:59 PM

২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করে রাজনৈতিক দলুগলোর জন্য বিধিমালা প্রণয়নের সময় ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্বের শর্ত রাখে।

তখন ২০২০ সালের মধ্যে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের সব কমিটিতে এক-তৃতীয়াংশ নারী প্রতিনিধিত্ব রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েই নিবন্ধন নেয় দলগুলো।

আর দুই বছর বাকি থাকায় ই শর্ত পালনে কত দূর অগ্রগতি হল, তা জানতে চাওয়ার পর দলগুলো যে প্রতিবেদন ইসিকে দিয়েছে, তাতে দেখা যায় এক্ষেত্রে দলগুলো রয়েছে পিছিয়ে।

পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ৪০টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে একটি মাত্র দল নেতৃত্বে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধি আনতে পেরেছে। এই বাম দলটি হল গণফ্রন্ট।  

সব স্তরে ১৫%-২০% নারী প্রতিনিধিত্ব আনতে পেরেছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মতো বড় দলগুলো, যাদের শীর্ষ নেতৃত্বে রয়েছেন নারীরা।

 

ইসি সচিবালয়ের নির্বাচন সমন্বয় ও সহায়তা শাখার উপ সচিব আব্দুল হালিম খান ‘নিবন্ধন শর্ত প্রতিপালন সংক্রান্ত প্রতিবেদন’ কমিশনের কাছে উপস্থাপন করেছেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা সব দলের প্রতিবেদন পেয়েছি; সব দলই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ২০২০ সালের মধ্যে পূরণ করবে। এখন বলা মুশকিল তারা তা পূরণ করতে পারবে কি না?”

হালিম খান জানান, নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পর করণীয় বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে কমিশন।

নিবন্ধন বিধি প্রণয়নের সময়কার নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,  “আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল নারীর ক্ষমতায়নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। দলগুলো তাতে সাড়া দিচ্ছে, এখন ২০২০ সালে পূরণ করতে পারবে কি না, তা-ই দেখার বিষয়।”

তার মতে, নির্ধারিত সময়ে লক্ষ্যপূরণ করতে না পারলে নিবন্ধন বাতিলের মতো কোনো নির্দেশনাও আইনে বলা হয়নি। তবে আরপিও সংশোধন করে আবার সময় বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনার সুযোগ রয়েছে।

কার কী অবস্থা

৪০টি দলের মধ্যে ১০টি দল নারী নেতৃত্বের বিষয়ে বর্তমানে দলের কী অবস্থান, কত শতাংশ পূরণ করেছে তা জানিয়েছে। বাকি ৩০টি দল নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করার বিষয়ে ইসিকে আশ্বস্ত করেছে।

গণফ্রন্ট: দলটি সব কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধি রাখার কথা জানিয়েছে।

গণফ্রন্টের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের ৫১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ১৭ জন নারী সদস্য। এভাবে সব স্থানীয় ও তৃণমূলের কটিতেও এক তৃতীয়াংশ নারী রাখা হয়েছে। ইসির বেঁধে দেওয়া নিয়ম মেনেই আমরা তা পূরণ করেছি।”

দলের সদিচ্ছা থাকলে দ্রুত অন্য দলগুলোও শর্তপূরণ করতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

আওয়ামী লীগ: দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের ৮১ জনের মধ্যে ১৫ জন নারী; শতকরা হারে তা ১৮ ভাগ। সংসদে দলের সরাসরি আসনে বিজয়ী ১৬ জন নারী রয়েছে।

বিএনপি: দলের সব স্তরের কমিটিতে ১৫ ভাগ নারী সদস্য রয়েছে।

জাতীয় পার্টি: সব পর্যায়ের কমিটিতে ২০ শতাংশ নারী রয়েছে।

বাংলাদেশ মুসলিম লীগ: কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৬ শতাংশ নারী সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

জাগপা: ১২ শতাংশ পূরণ করে আশা প্রকাশ করেছে, ২০২০ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ পূরণ সম্ভব হবে।

গণতন্ত্রী পার্টি: সব স্তরের কমিটিতে ১৫ শতাংশ নারী রয়েছে।

প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল-পিডিপি: ইসিতে দেওয়া প্রতিবেদনে দলটি দাবি করেছে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য সব কমিটিতে নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে দলটির কো-চেয়ারম্যান নিলোফার পান্না কোরেশী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা ইসির নির্দেশনা মেনে কাজ করছি। এখন সঠিক পার্সেন্টেজটা বলতে পারছি না।”

বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট: সব স্তরের কমিটিতে ১% নারী রয়েছে বলে ইসলামী দলটির।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ: কেন্দ্রীয় কমিটিতে ১১ দশমিক ৯৯ এবং জেলা কমিটিতে ৮ থেকে ১০ শতাংশ নারী সদস্য আছেন।

প্রতিশ্রুতি যাদের

২০২০ সালের মধ্যে দলের সব স্তরে ৩৩% নারী প্রতিনিধিত্ব রাখা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং তা পূরণে সচেষ্ট থাকবে বলে জানিয়েছে অধিকাংশ দলই।

এরমধ্যে রয়েছে- জাতীয় পার্টি-জেপি, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ,  জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি,  বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ।

এলডিপি: এখনও আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে তারা ইসিকে বলেছে, প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে এবং নির্ধারিত সময়ে শর্তটি সম্পূর্ণ প্রতিপালন সম্ভব হবে বলে তারা আশাবাদী।

বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ: এখনও না পারলেও নির্ধারিত সময়ে শর্ত পুরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে।

বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট: নারী নেতৃত্ব আনায় অগ্রগতি রয়েছে বলে জানিয়েছে দলটি।

জাকের পার্টি: শর্তাদি প্রতিপালনে বদ্ধপরিকর বলে প্রতিশ্রুতি দলটির।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস: নারী সদস্য রাখার বিধানটি বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে ইসলামী দলটি।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ: প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে এই ইসলামী দলটিরও ভাষ্য।

ইসলামী ঐক্যজোট: সব শর্ত যথাযথভাবে প্রতিপালন করে আসছে বলে জানিয়েছে এই ইসলামী দলটি।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি: ২০২০ সালের মধ্যে লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে বলে আশাবাদী বাম দলটি।

বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন: সব কমিটিতে নারীর রাখার বিধানটি পূরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ: সব কমিটিতে নারী অন্তর্ভুক্তের জন্য গঠনতন্ত্র সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। তারা বলেছে, সব কমিটিতে মহিলা ইউনিট গঠনের কাজ চলছে।

বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল: প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে দলটি।

বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি: নির্ধারিত সময়ে পূরণ সম্ভব হবে বলে আশা দিয়েছে দলটি।

গণফোরাম, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন,  তরীকত ফেডারেশন ও আরেকটি দল দেরিতে সাড়া দিলেও শর্ত প্রতিপালনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসি কর্মকর্তা হালিম খান।