ওই প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয়েছে হরিপুর উপজেলার আমগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রফিকুল ইসলামের জন্য, যিনি ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
আর ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দবিরুল ইসলাম গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
সংসদের প্যাডে তার স্বাক্ষরে ওই প্রত্যয়নপত্রে বলা হয়েছে, রফিকুল রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কাজে ‘জড়িত নন’।
এমপি দবিরুল বলছেন, তিনি ওই ব্যক্তিকে চেনেন আওয়ামী লীগের শরিক দল জাতীয় পার্টির কর্মী হিসেবে। আর রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কাজে সে ‘জড়িত নয়’ বলেই তিনি প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন।
তবে যেভাবে ওই প্রত্যয়নপত্র যুক্ত করে আদালতের কাছে জামিনের আবেদন করা হয়েছে, তা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন ঠাকুরগাঁও জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি শেখর কুমার রায়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভূষণ চন্দ্র বর্মন জানান, গত ৫ ফেব্রুয়ারি গোপন বৈঠক করে সরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে বিএনপি নেতা রফিকুলসহ চারজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
ওইদিনই হরিপুর থানার এসআই রেজাউল আলম ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ (১) (ক) ধারায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রফিকুলকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
সেখানে বলা হয়, “রফিকুল ইসলামকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তিনি আমার নির্বাচনী এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা এবং জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক। তিনি বর্তমানে ২ নম্বর আমগাঁও ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। আমার জানা মতে, তিনি কোনো সমাজ বা রাষ্ট্রদ্রোহী কার্যকলাপের সাথে জড়িত নহে।”
পিপি শেখর কুমার রায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সাংসদ দবিরুল ইসলামের প্রত্যয়নপত্রটি সঠিক কিনা, সে বিষয়ে খোঁজ-খবর নিতে বিচারক তাকে নির্দেশনা দিয়েছেন। তবে তিনি দুইবার ফোন করেও সাংসদকে পাননি।
“আবেদনটা ট্যাক্টফুলি করেছে। সরাসরি সুপারিশ করেনি, মামলার নম্বর দেয়নি। ‘সে অন্তর্ঘাতমূলক কার্যকলাপে জড়িত নয়, ভালো লোক’- এ ধরনের সার্টিফিকেট দিয়েছে।… আমি এ বিষয়ে অবজেকশন দিয়েছি কোর্টে।”
নাশকতার মামলার আসামির জন্য প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সে জড়িত না, সে রাষ্ট্রবিরোধী কাজে জড়িত না। সে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য।”
ওই প্রত্যয়নপত্র যুক্ত করে বিএনপি নেতা রফিকুলের জন্য আদালতে জামিনের আবেদন করা হয়েছে জানালে দবিরুল বলেন, “বিএনপি না, আমি জানি, সে জাতীয় পার্টি করে।”
জাতীয় পার্টি করে বলেই নাশকতার মামলার একজন আসামির জন্য সুপারিশ করেছেন কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “জাতীয় পার্টির লোকগুলোতো আমাদের পক্ষে কাজ করতেছে, জোটের পক্ষে।”
রফিকুলের দলীয় পরিচয় জানতে আমগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবু তাহেরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম আমার কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। সে হরিপুর উপজেলা বিএনপির ৯৫ নম্বর সদস্য। তার বাড়ি আমগাঁও ইউনিয়নের ভেটনা গ্রামে।”
সাংসদ দবিরুল এর আগে ২০১৬ সালের ১৬ নভেম্বর সদর উপজেলা জামায়াতের আমির শামসুজ্জামান দুলালকে ‘সন্ত্রাস বিরোধী মামলা’ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার বরাবর সুপারিশ করে সমালোচনায় পড়েছিলেন।