পরিস্থিতি সংঘাতের দিকে নিচ্ছে সরকার: ফখরুল

বিএনপিকে কর্মসূচি পালনে বাধা দিয়ে সরকার পরিস্থিতি সংঘাতের দিকে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Feb 2018, 06:23 AM
Updated : 24 Feb 2018, 12:32 PM

নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে কালো পতাকা প্রদর্শনের কর্মসূচিতে পুলিশি হামলা এবং নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে এই অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।

খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে সমাবেশ করতে না দেওয়ার প্রতিবাদে শনিবার সকালে কালো পতাকা প্রদর্শনের কর্মসূচি দিয়েছিল বিএনপি।

পুলিশের হামলায় বিএনপির এই কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায়। বিএনপি নেতা-কর্মীরা সড়কে নামার পর লাঠিপেটা এবং জলকামান থেকে রঙিন পানি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ কয়েকজনকে।

বাইরে পুলিশের অবস্থানের মধ্যে দুপুরে দলীয় কার্যালয়ের ভেতরে সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, “আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আপনারা দেখেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিনা উসকানিতে অতর্কিতে হামলা করে।

“এই অবৈধ সরকারের মন্ত্রীরা সারাক্ষণ চেষ্টা করছে উসকানি দিয়ে  এবং এই ধরনের নির্যাতন-অত্যাচার চালিয়ে পুরো পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করার। পুরো পরিস্থিতিকে তারা নিজেরাই এমন জায়গায় নিয়ে যেতে চাইছে যে, সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করা।”

বিএনপি নেতা-কর্মীদের উপর জলকামান থেকে রঙিন পানি ছোড়ে পুলিশ

দিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমাদের এই কর্মসূচি ছিল সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। রাস্তা ব্লক না করে কালো পতাকা প্রদর্শনের ব্যবস্থা আমরা করেছিলাম। কিন্তু পুলিশ নেতা-কর্মীদের বেপরোয়াভাবে গ্রেপ্তার করে, টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে তোলে, লাঠিচার্জও করে।

“আমি পুলিশ সদস্যদের এহেন আচরণের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তারা এর কোনো জবাব না দিয়ে রঙিন পানি ছুড়তে থাকে এবং বেধড়ক লাঠিচার্জ ও গ্রেপ্তার অব্যাহত রাখে। রঙিন পানিতে আমাকেসহ দলের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দ ও উপস্থিত অসংখ্য নেতা-কর্মীকে সম্পূর্ণ ভিজিয়ে দিয়ে লাঠিচার্জ করতে থাকে।

“এর কিছুক্ষণ পর আমাদের কার্যালয়ে টিয়ারগ্যাস ছুড়লে ভেতরে দম বন্ধ করা হিটলারের গ্যাস চেম্বারের মতো এক বীভৎস পরিবেশের সৃষ্টি হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিনা উসকানিতে বিএনপির কর্মসূচিতে আক্রমণ করে আবার প্রমাণ করল, দেশ এখন দুর্বিনীত দুঃশাসনের করাল গ্রাসে।”

নয়া পল্টন থেকে দলটির বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে আটক করে পুলিশ

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কয়েকশ কর্মী কার্যালয়ের সামনে সড়কে কালো পতাকা নিয়ে বসে পড়লে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে, জলকামান থেকে রঙিন পানিও ছুড়তে থাকে।

লাঠিপেটায় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজূলুল হক মিলন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আতাউর রহমান ঢালী ও সাবেক সংসদ সদস্য নীলোফার চৌধুরী মনিসহ কয়েকজন আহত হন।

রঙিন পানিতে আক্রান্ত হন বিএনপি মহাসচিব ফখরুলসহ অন্য নেতারাও।

ঘটনাস্থলে থাকা ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার এ এস এম শিবলী নোমান সাংবাদিকদের বলেন, “সড়ক দখল করে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটানো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি হতে পারে না। তাই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।”

কর্মসূচি পালনের অনুমতি না নেওয়ার যে কথা পুলিশ বলছে, সে বিষয়ে ফখরুল বলেন, “এই কর্মসূচিতে অনুমতি লাগবে কেন? সব কর্মসূচিতে অনুমতি লাগবে কেন?  আমরা তো রাস্তা ব্লক করিনি, মিছিল করিনি।

“সভা-সমিতি করা যাবে না, ঠিক আছে। কিন্তু ফুটপাতে দাঁড়িয়ে কালো পতাকা দেখানো যাবে না? এটা কীভাবে হয়? এটা একটি মৌলিক অধিকার। তাহলে কি সংবাদ সম্মেলন করতে অনুমতি লাগবে, আমার বাড়িতে কয়েকজন নেতার সাথে আলাপ করতে অনুমতি লাগবে?”

ফখরুল বলেন, “গণতন্ত্রের শেষ নিশানাকে নিশ্চিহ্ন করার জন্যই সরকার এই অগণতান্ত্রিক ও দমনমূলক পন্থা অবলম্বন করেছে। সংবিধানে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। এখন বাস্তবতা হচ্ছে, এখন প্রজাতন্ত্রের মালিক আওয়ামী লীগ ও তাদের সাজানো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।”

পুলিশের লাঠিপেটার মুখে ফটক আটকে দলীয় কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন বিএনপিকর্মীরা

হামলা ও গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “মহিলাদের কী নির্মমভাবে পুলিশ আক্রমণ চালিয়েছে! তাদেরকে পুরুষ পুলিশরা ধরে গ্রেপ্তার করেছে।  এটা আগে কখনও দেখিনি। অফিসের ভেতর ঢুকে গলায় পাড়া দিয়ে থেকে টেনে হিঁচড়ে গ্রেপ্তার করেছে।

“আমাদের দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনের উপর পুলিশ এমনভাবে আক্রমণ করেছে যে সে গুরুতর আহত। মোস্তাফিজুর রহমান বাবুলকে নিচে ফেলে দিয়ে পিটিয়ে গাড়িতে তোলা হয়েছে। এই যদি অবস্থা হয় এদেশে, তারা যখন গণতন্ত্রের কথা বলে, সেই গণতন্ত্র মুনাফেকি ছাড়া আর কিছু নয়।”

ক্ষমতাসীনদের উসকানির পরও বিএনপি ‘সম্পূর্ণভাবে শান্তিপূর্ণ’ কর্মসূচি চালিয়ে যাবে বলে জানান ফখরুল।

সংবাদ সম্মেলনে ফখরুলের সঙ্গে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, রুহুল আলম চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, গোলাম আকবর খন্দকার, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, হারুনুর রশীদ, তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলন শেষে মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল কার্যালয় থেকে বেরুলে তাকে গোয়েন্দা পুলিশ গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়।

এরপর বেলা দেড়টার দিকে দুটি অ্যাম্বুলেন্সে করে আহত মহিলা নেতা-কর্মীদের নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। এর পরপরই ফখরুল,  মির্জা আব্বাস, মিন্টু, ফারুক, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস কার্যালয়ের ভেতরে থাকা নেতা-কর্মীদের নিয়ে বেরিয়ে যান।