শনিবার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কর্মসূচি পালনে জড়ো হওয়া নেতা-কর্মীদের লাঠিপেটা এবং জল কামান থেকে পানি ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।
আটক করা হয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুলসহ কয়েকজনকে।
শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশি বিনা উসকানিতে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
পুলিশ বলছে, বিএনপি নেতা-কর্মীরা সড়ক দখল করে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটানোয় তারা ব্যবস্থা নিয়েছেন।
জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি আদালতের রায়ের পর থেকে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
তার মুক্তি দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। ২২ জানুয়ারি দলটি ঢাকায় সমাবেশ করতে চাইলেও পুলিশ অনুমতি না দেওয়ায় তার প্রতিবাদে শনিবার ঢাকায় দেওয়া হয়েছিল কালো পতাকা প্রদর্শনের কর্মসূচি।
কর্মসূচি পালনে সকাল থেকে বিএনপি নেতা-কর্মীরা নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হচ্ছিলেন।
অন্যদিকে কার্যালয়টি ঘিরে পুলিশও জলকামান ও সাঁজোয়া যান নিয়ে অবস্থান নেয়।
মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, মওদুদ আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী ও আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, সাবেক সংসদ সদস্য নীলোফার চৌধুরী মনি ছিলেন সেখানে।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কয়েকশ কর্মী কার্যালয়ের সামনে সড়কে কালো পতাকা নিয়ে বসে পড়েন। খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে স্লোগান শুরু করেন তারা।
সঙ্গে সঙ্গে লাঠিপেটা শুরু করে পুলিশ; জলকামান থেকে রঙিন পানিও ছুড়তে থাকে।
লাঠিপেটায় ফজলুল হক মিলন, ঢালী ও মনি আহত হন। তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এসময় ১১ জনকে আটক করে পুলিশের ভ্যানে তুলতে দেখা যায়।
রঙিন পানিতে আক্রান্ত বিএনপি মহাসচিবসহ অন্য নেতারা কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থান নেন। ভেতর থেকে ফটক আটকে স্লোগান দিতে থাকেন কর্মীরা।
কার্যালয়ের বাইরে যে প্যান্ডেল করা হয়েছিল, তা পুলিশ ভেঙে দেয়। কালো পতাকাগুলো ছড়িয়ে পড়ে থাকে সড়কের বিভিন্ন স্থানে।
ছত্রভঙ্গ হয়ে বিভিন্ন গলিতে আশ্রয় নেওয়া বিএনপির কর্মীদের আটকে অভিযান চালাতে থাকে পুলিশ।
সকাল ১১টার দিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান কার্যালয়ে ঢোকার সময় আরেক দফা আক্রমণ চালায় পুলিশ।
লাঠিপেটার পাশাপাশি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল ও কেন্দ্রীয় নেতা হালিমা নেওয়াজ আরলিকে আটক করা হয়।
পুলিশি হামলার নিন্দা এবং গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়ে হামলার দুপুর ১২টার দিকে দলীয় কার্যালয়ের ভেতরে সংবাদ সম্মেলন করেন ফখরুল।
তিনি বলেন, তাদের ‘সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি’তে পুলিশ বিনা উসকানিতে হামলা চালিয়ে অনেককে আহত এবং অসংখ্য জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
বিএনপির অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় ঘটনাস্থলে থাকা ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার এ এস এম শিবলী নোমান সাংবাদিকদের বলেন, “সড়ক দখল করে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটানো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি হতে পারে না। তাই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।”
সংবাদ সম্মেলন শেষে নিচে নামার পর কার্যালয়ের সামনে থেকে আলালকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ।
এরপর বেলা দেড়টার দিকে দুটি অ্যাম্বুলেন্সে করে আহত নারী নেতা-কর্মীদের নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। এর পরপরই ফখরুল, মির্জা আব্বাস, মিন্টু, ফারুক, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস কার্যালয়ের ভেতরে থাকা নেতা-কর্মীদের নিয়ে বেরিয়ে যান।
বিকালে রুহুল কবির রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থেকে দেড় শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আহত হয়েছেন অন্তত ২৩০ জন।
পুলিশি হামলার প্রতিবাদে সোমবার ঢাকায় থানায় থানায় এবং সব মহানগর ও জেলা সদরে প্রতিবাদ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।