কেউ ভোটে না এলে করার কিছু নেই: হাসিনা

বিএনপি নির্বাচনে না এলে তাদের বাদ দিয়েই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে ফেলার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Feb 2018, 02:11 PM
Updated : 19 Feb 2018, 05:34 PM

বিএনপির দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেছেন, “এবার না আসলে কিছু করার নেই। নির্বাচন সময় মতোই হবে। তারা ভোটে না আসলে জনগণ ভোট দেবে।

“সময়মতো নির্বাচন হবে, সংবিধানে যেভাবে বলা আছে। যাদের জনগণের ওপর বিশ্বাস ও আস্থা আছে; তারা নির্বাচনে আসবে।”

রোম সফর শেষে সোমবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে একথা বলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

একাদশ সংসদ নির্বাচন এই বছরের শেষে হবে বলে ইতোমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন শেখ হাসিনা; তবে নির্বাচনকালীন সরকারের পর দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা নিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপি দূরত্ব আরও বেড়েছে।

বিএনপি নেতারা ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, দলীয় চেয়ারপারসনকে কারাগারে রেখে কোনো নির্বাচনে তারা যাবেন না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “রায় তো কোর্ট দিয়েছে। রায় তো আমরা দিইনি।

“এতিমের টাকা মেরে খেলে  শাস্তি, এটা আদালতও দেয়, আল্লাহর তরফ হতেও দেয়। আমাদের তো কিছু করার নাই।”

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে দায়ের হওয়ার কথাও বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, “এই মামলাটা ১০ বছর চলেছে। এই মামলায় তিন বার জজ পরিবর্তন হয়েছে, সময় চেয়েছে ১০৯ বার। বহু টালবাহানা আপনারা দেখেছেন। ২৬১ দিনের মতো তারিখ পড়ল। আপিল বিভাগে ২২ বার  রিট করা হয়েছিল। এত কিছুর পর তিনি মাত্র ৪৩ দিন কোর্টে হাজির হয়েছিলেন।”

আরেক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন,“কেউ যদি এতিমের টাকা আসার পরও মায়া ত্যাগ করতে না পারে, তা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। আমি বলতে গেলেই তো..।”

কারাগারের পথে খালেদা জিয়া

খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার গৃহকর্মী ফাতেমারও কারাগারে থাকা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এটা নতুন কিছু না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে আমাকে শ্যাওলা ধরা একটি ভবনে রাখা হয়েছিল, খাট ছিল ভাঙা।

“তাকে রাখা হয়েছিল স্পিকারের বাড়িতে। তিনি রুম পছন্দ করে নিয়েছিলেন। তার সঙ্গে এই ফাতেমাকে দেওয়া হয়েছিল। এটা গোপন ছিল। ডিআইজি হায়দার (সামছুল হায়দার সিদ্দিকী) সাহেবকে জিজ্ঞাস করলেই জানতে পারবেন।” 

“আদালত দিয়েছেন। বেশি কিছু তো দেওয়ার নেই, একজন মেইড সার্ভেন্ট দিয়েছে। যদি আরও কিছু ডিমান্ড করে,”

হাসতে হাসতে নিজের দু’গালে হাত বুলিয়ে প্রসাধনীর কথা ঈঙ্গিত করেন শেখ হাসিনা।

খালেদা জিয়ার মতো কেউ ব্যক্তিগত গৃহকর্মী কারাগারে চাইলে কি হবে, সেই প্রশ্ন করেছিলেন এক সাংবাদিক।

এর উত্তর দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এনিয়ে কেউ যাতে রিট করতে না পারে; সেজন্য তার কাছ থেকে স্বেচ্ছায় কারাবরণের মুচলেকা নেওয়া হয়েছে।”

খালেদা জিয়ার রায় নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে কোনো টেলিফোন পাননি বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

‘বিএনপিতে কি কেউ নেই’

দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে খালেদা জিয়া বন্দি হওয়ার পর একই অভিযোগে দোষি সাব্যস্ত তারেক রহমানকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার সমালোচনাও করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

মায়ের সঙ্গে জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত তারেক রহমান মুদ্রা পাচারের মামলায়ও আদালতের দণ্ড নিয়ে  বিদেশে রয়েছেন।

গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা

ফেরারী তারেককে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার প্রসঙ্গ ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “বিএনপিতে কি একটাও নেতা নেই যিনি দেশে অবস্থান করছেন; যাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন করা যেত?

“বিএনপিতে দেখি অনেক নেতা আছেন; যারা দেখি কর্মঠ। তাদের মধ্যে থেকে কি একজনকেও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন করা যেত না? কারও কি যোগ্যতা ছিল না?”

বিএনপির অন্য নেতাদের উপর খালেদা জিয়ার আস্থা নেই বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

“বিএনপির কি এত দৈন্যদশা? বিএনপির চেয়ারপরসনের কি অন্য কারও ওপর ভরসা নেই?”

এই প্রসঙ্গে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে নিজে গ্রেপ্তার হওয়ার পর জিল্লুর রহমনাকে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি তো বোনকে বা ছেলেকে করিনি।”

বিএনপির গঠনতন্ত্র প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “বিএনপির একটি গঠনতন্ত্র আছে, ওটার কোনো খোঁজও পাওয়া যায় না।”

খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের আগেই বিএনপির গঠনতন্ত্রের একটি ধারা সংশোধনের সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা, যে ধারায় আদালতে দণ্ডিত কারও কারও বিএনপির সদস্যপদ না পাওয়ার শর্ত ছিল। 

চালের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষকদের স্বার্থে চালের দাম কিছুটা বৃদ্ধি করা হয়েছে। 
 
এছাড়া কখনও কখনও চালকল মালিকরাও চালের দাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।  
 
শেখ হাসিনা বলেন, “চালের দাম বাড়ানোয় মিডিয়ারও একটু অবদান আছে। ব্যবসায়ীরা যখন চালের দাম বাড়ায়, তখন আপনারা যারা বলেন, তাতে ব্যবসায়ীরা বলেন, আরেকটু বাড়িয়ে নিই। চালের দাম সিন্ডিকেটের জন্যও বাড়ে, আবার মিডিয়ার প্রচারের জন্যও বাড়ে।”