শনিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “সত্যিকার অর্থে জানি, আমি অবসরে যাচ্ছি। এ বছরের ডিসেম্বরেই অবসরে যাব।”
আগের দিন এক আলোচনা সভায় ব্যাংক খাতে একের পর এক কেলেঙ্কারির জন্য অর্থমন্ত্রী মুহিত এবং প্রশ্নফাঁসের জন্য শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের কঠোর সমালোচনা করেন বিকল্পধারার সভাপতি বি চৌধুরী।
‘ভালো মানুষ’ নাহিদকে অন্য কোনো মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “শিশু মন্ত্রণালয় আছে, ধর্ম মন্ত্রণালয় আছে- ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা মন্ত্রণালয় আছে না, সেই ঠাণ্ডা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেন।”
“এরপরও যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাকে ক্ষমা করে দেন... ক্ষমা করা উত্তম কিন্তু উত্তমের পন্থা ছেড়ে দেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আমাদের অর্থনীতি যেন একেবারে ধ্বংস না হয়ে যায়।”
তার এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বয়সে বছরখানেকের ছোট মুহিত বলেন, “বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মনে হয় অবসর নিয়ে কোনো ধারণা নেই। তাকে উপদেশ দিতে চেয়েছিলাম- জীবনে একটা সময় আসে, তখন অবসরে যাওয়াই আমাদের জন্য ভালো এবং রিটায়ারের পর যেভাবে থাকা যায়, সেভাবেই আমাদের থাকা উচিত।”
১৯৩২ সালের ১ নভেম্বর জন্ম নেওয়া বদরুদ্দোজা চৌধুরী পেশাগত জীবনে চিকিৎসক।তিনি রাজনীতিতে আসেন সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের আমলে, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব তিনি। জিয়ার মন্ত্রিসভার সদস্য বি চৌধুরী খালেদা জিয়া নেতৃত্বাধীন সরকারের মন্ত্রিসভায়ও ছিলেন।
অপরদিকে ১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি জন্ম নেওয়া মুহিত ষাট বছরের বেশি কর্মজীবন পার করেছেন। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেওয়ার পর তখনকার পাকিস্তান এবং পরে স্বাধীন বাংলাদেশে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
১৯৮২-৮৩ সালে তৎকালীন এরশাদ সরকারে প্রথমবারের মতো অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্বে আসেন মুহিত। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি, যা এখনও সামলানোর দায়িত্ব তার কাঁধেই।
বিকালে লো মেরিডিয়ান হোটেলে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যের শুরুতেই বাংলাদেশের আর্থিক খাতের অবস্থা ভালো কি না সে বিষয়ে প্রশ্ন আছে বলে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী মুহিত।
তিনি বলেন, “আজকে সকালে পত্রিকায় দেখলাম এ দেশের একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীকে উপদেশ দিয়েছেন, দুজন ব্যক্তিকে যেখানে দায়িত্বটা গুরুত্বপূর্ণ না, সেখানে পাঠিয়ে দিতে। সে দুজন ব্যক্তির একজন আমার বন্ধু, আমাদের সুযোগ্য শিক্ষামন্ত্রী। আর দুই নম্বর ব্যক্তি আমি, আবুল মাল আবদুল মুহিত- অর্থমন্ত্রী।
“তিনি (বদরুদ্দোজা চৌধুরী) বলেছেন, হ্যাঁ দেশে কিছু কাজ-টাজ করেছেন, কিন্তু অবসর না নেন তাহলে নিরাপদ মন্ত্রণালয়ের কোথাও পাঠিয়ে দিতে। আমার প্রথমে মনে হয়েছিল, আজকে এখানে বক্তব্য করব রিটায়ারমেন্টের উপরে। রিটায়ার কখন করা উচিত এবং রিটায়ারমেন্ট কীভাবে নেওয়া উচিত, সেই সম্বন্ধে আজকে বক্তব্যটি রাখব।
বি চৌধুরীর উদ্দেশে অবসর নিয়ে নিজের ওই ভাবনা তুলে ধরে মুহিত বলেন, “ক্যারিয়ারে বহু দিন থাকলে নিশ্চয় পচন আসে। সেই পচনের পরিণতিটা মানুষের মধ্যে বেশি পরিমাণে। সুতরাং আমরাও সে রকম ধরনের চিন্তা-ভাবনা করি। এইবারে আমি সত্যিকারভাবে অবসরে যাচ্ছি, আগামী ডিসেম্বরে। এখন থেকে ১১ মাস পরে।”
ঋণ খেলাপ রোধে অর্থমন্ত্রীর দুই উপদেশ
অগ্রণী ব্যাংকের এই সম্মেলনে খেলাপি ঋণ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, গভর্নর ফজলে কবির, আর্থিক খাতের সচিব ইউনুছুর রহমানসহ সব বক্তাই খেলাপি ঋণকে ব্যাংকিং খাতের অন্যতম প্রধান সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেন।
এ বিষয়ে মুহিত বলেন, “ঋণ খেলাপি হওয়া প্রতিরোধ করতে ব্যাংকারদের দুটি বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রথমত, ঋণ গ্রহীতার প্রকল্প প্রস্তাবনা ভালোমতো খতিয়ে দেখতে হবে। প্রকল্পটি টেকসই হবে কি না সে বিষয়গুলো বিবেচনায় আনতে হবে।
“দ্বিতীয়ত, ঋণ গ্রহীতার বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে তার সঙ্গে ব্যাংকের সম্পর্ক উন্নত করতে হবে।”