রায়ের কপি নিয়ে ছলচাতুরিতে সরকার: মওদুদ

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায়ের ‘সার্টিফাইড’ কপি’ নিয়ে সরকার ‘ছলচাতুরি’ করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Feb 2018, 08:27 AM
Updated : 16 Feb 2018, 08:31 AM

বিএনপি চেয়ারপারসনকে বেশি দিন কারাগারে আটকে রাখতেই সরকার এই ‘ছলচাতুরি’র আশ্রয় নিয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি আদালত খালেদাকে ৫ বছর কারাদণ্ড দেওয়ার পর থেকে তিনি বন্দি আছেন।

৬ শতাধিক পৃষ্ঠার এই রায়ের অনুলিপি পাওয়ার আশায় আছেন বিএনপির আইনজীবীরা। তা  পেয়ে হাই কোর্টে আপিল করে খালেদা জামিন নিয়ে বেরিয়ে আসবেন বলে আশায় আছে বিএনপি।

শুক্রবার এক আলোচনা সভায় সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ বলেন, “রায় হয়েছে ৮ ফেব্রুয়ারি। রোববার, সোমবার, মঙ্গলবার, বুধবার, বৃহস্পতিবার গেল- এখন পর্যন্ত রায়ের কপি পাওয়া যায়নি।

“এই যে ছলচাতুরি, এটা করার অর্থই হলো যে যতদিন পারা যায়, একটা দিন যদি বেশি রাখা যায় বেগম জিয়াকে জেলখানায়।”

তবে তা ‍বুমেরাং হচ্ছে বলেও সরকারকে সতর্ক করে দেন তিনি। তার মতে, এতে সরকারের জনপ্রিয়তা কমছে।

আপিলের পর খালেদার জামিনের বিষয়ে দৃঢ় আশাবাদী আইনজীবী মওদুদ।

“যখনই রায়ের নকল পাব, আমরা আপিল ফাইল করব। আপিলের সাথে সাথে আমরা তার জামিন চাইব। আমরা বিশ্বাস করি, ৫ বছরের (সাজার মেয়াদ) জন্য জামিন এমনিতেই অন্তত লিবারেলি কোর্ট দেখে। ৫ বছরের ব্যাপারে এমন কিছু না।”

বিএনপি চেয়ারপারসনকে পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কারাগারে ‘নির্জন কারাবাসে’ রাখা সংবিধান ও কারাবিধির ‘পরিপন্থি’ বলে দাবি করেন মওদুদ।

জাতীয় প্রেস ক্লা্বে জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের উদ্যোগে ‘প্রতিহিংসার বিচারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন তিনি।

খালেদাকে বন্দি করে সরকার রাজনৈতিক সমঝোতার পথও দূরে ঠেলে  দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি নেতা।

“এখন আমাদের দুটি চ্যালেঞ্জ। একটি হল, বেগম জিয়াকে কারাগার থেকে বের করে আনা; আরেকটি হল, আন্দোলন করে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।”

দমন-পীড়ন চালিয়ে সরকারের শেষ রক্ষা হবে না বলেও হুঁশিয়ার করেন মওদুদ।

“দমন-পীড়ন করে সরকার যদি মনে করে যে, দেশের জনগণ ও জাতীয়তাবাদী শক্তি দুর্বল হয়ে গেছে, এটা তারা মারাত্মক ভুল করবেন। তারা (সরকার) বুঝতে পারছে না দেশের মানুষের মনের অবস্থা। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এবার আওয়ামী লীগের খবর আছে।”

সরকারের ‘নিষেধাজ্ঞা’

সরকারের ‘নিষেধাজ্ঞার’ কারণে রায়ের কপি পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

দুর্নীতি মামলার রায়ের আগে আদালতের পথে খালেদা জিয়া

নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “রুলস অনুযায়ী রায়ের ৫ দিনের মধ্যে বিবাদী পক্ষকে রায়ের কপি সরবরাহের বিধান থাকলেও এক্ষেত্রে রুলস মানা হচ্ছে না। এটা বিচার বিভাগের উপর সরকারের আগ্রাসী হস্তক্ষেপ প্রমাণ করে।

“সরকারের নিষেধের কারণেই রায়ের কপি পাওয়া যাচ্ছে না। এতেই প্রমাণিত হয় দেশনেত্রীকে সাজা দেওয়ার মাস্টারমাইন্ড হচ্ছেন শেখ হাসিনা ও হুসেইন মো. এরশাদ।”

বিএনপির অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছেন, এই রায় কিংবা এর অনুলিপি দেওয়ার বিষয়ে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। এটা আদালতের বিষয়।

রিজভী বলেন, “দেশের প্রথিতযশা আইনজীবী, সংবিধান বিশেষজ্ঞ, আইন বিশেষজ্ঞ ও স্বাধীন ‍বুদ্ধিজীবীবৃন্দ বিস্মিত হয়েছেন রায়ের কপি না দেয়াতে।

“তাহলে নিশ্চয়ই রায় সংশোধন করা হচ্ছে। নিশ্চয়ই তাহলে আওয়ামী লীগের নির্দেশ মতো মনগড়াভাবে রায় সংশোধন করা হচ্ছে- এই প্রশ্ন এখন সাধারণ মানুষের মুখে মুখে।

“বিচারক ৬৩২ পৃষ্ঠার রায় ১০ দিনে ‍লিখে শেষ করতে পারেননি, এতেই প্রমাণিত হয়, পুরো রায় না লিখে তড়িঘড়ি সাজার অংশটুকুর লিখে বিচারক রায় দিয়ে দিয়েছেন।”