বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার সাজা হওয়াটা তার দলের জন্য ‘চ্যালেঞ্জ’ হয়ে দাঁড়ালেও রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির জন্য আগামী নির্বাচনে মনোযোগী হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরাও মনে করি পরিস্থিতি বেশ জটিল।”
তবে খালেদার বিরুদ্ধে মামলা ও তার সাজা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ল্যামবার্ট।
তিনি বলেন, “সত্যিকার অর্থেই বেগম জিয়ার দল চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তারপরও আমি মনে করি, রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের (বিএনপি) নির্বাচনে মনোযোগী হওয়াটাই জরুরি।”
“আমরা জানি এই মুহূর্তে সংগঠন গোছানো, প্রচারণায়ও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেও আলোচনা করেছি।”
মূলত রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে ল্যামবার্টের নেতৃত্বে বাংলাদেশে এসেছে ১১ সদস্যের ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এই প্রতিনিধি দল।
চার দিনের সফরের শেষ দিন প্রতিনিধি দলটি নির্বাচন কমিশন এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেন।
এছাড়াও আগামী নির্বাচনের বাজেট, সক্ষমতা ও ব্যবস্থাপনা নিয়েও আলোচনা করেন বলে জানান তিনি।
“বাংলাদেশের জনগণ যাতে নিজেদের পছন্দ মতো ভোট দিতে পারে, তা নিশ্চিত করতে সব দল নির্বাচনে আসবে বলে আমরা আশাবাদী। জনগণের জন্য এটা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ,” বলেন ল্যামবার্ট।
এক লিখিত বিবৃতিতে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির ‘অবনতি’ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এই প্রতিনিধিরা। সভা-সমাবেশ ও বাক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং নারীর প্রতি সহিংসতার খবর নজরে আসার কথা জানিয়েছেন তারা।
বাল্যবিয়েকে এখনও বাংলাদেশের গুরুতর সমস্যা বলে চিহ্নিত করেছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদ্স্যরা। মুক্তমনা লেখক ও ব্লগার, ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং তৃতীয় লিঙ্গ ও সমকামীদের ওপর সহিংসতা বন্ধের কথা বলেছেন তারা।
আগামী দিনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ‘কম শত্রুতা ও সংঘাতপূর্ণ‘ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এই সদস্যরা। ২০১৯ সালে অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
বিএনপি নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ
সংবাদ সম্মেলনের পর রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গিয়ে দলটির নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধিরা।
বৈঠকের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, “দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা, দেশনেত্রীর মামলার রায় এবং বর্তমানে গণতন্ত্রের যে অবস্থা সে বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশনেত্রীর রায়ের বিষয়টি আমরা তাদেরকে অবহিত করেছি।”
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এই রায় আগামী নির্বাচনের অন্তরায় হবে কি না সেই বিষয়টা ‘তারা দেখছেন’।
“অবজারভার পাঠানোর জন্য নির্বাচন কমিশন তাদের চিঠি দিয়েছেন, তারা পাঠাবেন কি পাঠাবেন না- প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন না হলে সাধারণত নির্বাচন পর্যবেক্ষক তারা পাঠান না। গতবার (দশম সংসদ নির্বাচন) তারা পাঠাননি।”
ল্যামবার্টের নেতৃত্বে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এই প্রতিনিধি দলে ছিলেন জেমস নিকোলসন, রিচার্ড করবেট, ওয়াযিদ খান ও সাজ্জাদ করিম।
প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে বিএনপির ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন মির্জা ফখরুল। অন্যরা হলেন-স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য রিয়াজ রহমান, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, আবদুল কাইয়ুম, বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব আবদুস সাত্তার।