বুধবার বিকাল ৪টায় শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মাদুর পেতে অনশনে বসেছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাসহ তাদের জোটসঙ্গী দল এবং বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
কর্মসূচিস্থল ঘিরে রাখার পর পুলিশ কর্মকর্তারা দুপুরের মধ্যে তা শেষ করতে বলেন বিএনপি নেতাদের।
তখন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমাদের অনশন কর্মসূচি ৪টা পর্যন্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অনুরোধে আমরা এটা ১টা পর্যন্ত করে দিয়েছি।”
এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বিএনপি নেতাদের পানি পান করিয়ে অনশন ভঙ্গ করান।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা বন্দি হওয়ার পর দুদিনের বিক্ষোভের পর মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি শেষে এই প্রতীকী অনশনে বসে বিএনপি। অনশন চলার সময় নেতাদের বক্তব্যের সঙ্গে টানা স্লোগান দিয়ে যাচ্ছিলেন কর্মীরা।
কর্মসূচির সমাপ্তি টেনে ফখরুল বলেন, “আমরা এই অনশন কর্মসূচি থেকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি এবং সব ধরনের নির্যাতনমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।”
স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, “খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে সাজা দেওয়া হয়েছে। আমরা এই রায় মানি না। এই রায় হল একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আমাদের নেত্রীকে দুর্বল করার জন্য।”
শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমেই দলীয় নেত্রীকে মুক্ত করার আশা প্রকাশ করেন তিনি।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “দেশনেত্রীকে বন্দি করা হয়েছে, আজ পর্যন্ত তার রায়ের কাগজ দেওয়া হয়নি। দীর্ঘসূত্রতা করে তাকে আটকে রাখার ষড়যন্ত্র করছে।”
যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল বলেন, “দেশনেত্রী নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের কথা বলেছেন। আমরা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু সবাইকে বলে দিতে চাই, এটাকে কেউ দুর্বলতা ভাববেন না। জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমিক সৈনিক একজন বেঁচে থাকতে ষড়যন্ত্রকারীরা কেউ পার পাবে না।”
২০ দলীয় জোটের শরিক বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, “সরকারকে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশের কোনো আদালতের খোঁচায় কিংবা কোনো নির্বাহী আদেশের কলমের খোঁচায় তাকে বন্দি করে রাখা যাবে না, তাকে ছাড়া কোনো রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা যাবে না।”
সরকারকে হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, “আমার নেত্রী প্রধানমন্ত্রী হবেন বাংলাদেশের, ইনশাল্লাহ। আমরা তাদের বিচার করব।”
অনশনকালে সমাবেশে সঞ্চালনায় ছিলেন প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সহ সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল।
প্রেস ক্লাবের সামনের এই কর্মসূচিতে বিএনপির কয়েক হাজার নেতা-কর্মীর অবস্থানে সড়কের এক পাশে গাড়ি চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।
পুলিশ অনশনস্থল ঘিরে রেখে বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীদের ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তারা বেষ্টনি ছোট করে আনে, ফলে সকাল ১০টায় যে বেষ্টনী ছিলো সচিবালয়ের মোড় থেকে কদম ফোয়ারা পর্যন্ত, তা ১২টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ফটকের চারপাশের এলাকায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে।
অনশনের শেষ দিকে ভিড় ডিঙিয়ে জামায়াতে ইসলামীর অধ্যাপক আবদুল হালিম অনশনস্থলে আসেন। তিনি দুই মিনিট থেকে নেতাদের সঙ্গে করমর্দন করে চলে যান।
তিন ঘণ্টার অনশন কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন ২০ দলীয় জোটের শরিক খেলাফত মজলিশের মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, ইসলামী ঐক্যজোটের এম এ রকীব, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির একাংশের মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, অন্য অংশের হামদুল্লাহ আল মেহেদী, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, এলডিপির সাহাদাত হোসেন সেলিম, ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া।
বিএনপি সমর্থক শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবীও অনশনের কর্মসূচির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেন। অনশনে বিএনপি নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আতাউর রহসান ঢালী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সালাহউদ্দিন আহমেদ, রিয়াজুল ইসলাম রিজু, মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, কাজী আবুল বাশার, আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদ, মোরতাজুল করীম বাদরু, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, শফিউল বারী বাবু, আনোয়ার হোসেইন, মামুনুর রশীদ, আসাদুজ্জামান আসাদ।
হেলাল খান, হেলেন জেরিন খান, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক খান, হাফেজ এম এ মালেক, শাহ নেসারুল হক।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে না এসে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনশনে বসেন জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদসহ অফিস কর্মীরা।
নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয় ঘিরে পুলিশের বেষ্টনী থাকায় তারা গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে অফিসের ভেতরেই থাকছেন।