মঙ্গলবার সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের এই সাংসদ বলেন, “গোটা জেলখানাইতো ওনাকে দেওয়া হয়েছে। কত আরাম আয়েশে… আবার বলা হয় অমুক দেওয়া হয় নাই, ওনাকে ফাইভ স্টার হোটেল সোনারগাঁওয়ে রাখা হবে?
“চুরি করে টাকা আত্মসাৎ করেছে, ওনাকে কনডেম সেলে রাখা উচিত।”
খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলায় গত বৃহস্পতিবার তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত।
এরপর বিএনপি চেয়ারপারসনকে রাখা হয়েছে নাজিমউদ্দিন রোডে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পুরানো ভবনে। দুই বছর আগে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জে স্থানান্তর করায় এখন তিনিই সেখানে একমাত্র বন্দি।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তার সুবিধার জন্যই তাকে এই কারাগারে রাখা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগালে নিয়ে গেলে আদালতে আনা-নেওয়া করতে হলে দীর্ঘ পথে তার অনেক ধরনের অসুবিধা হত।
“তার একটা সামাজিক ভ্যালুও রয়েছে, তিনি একাধিকবার দেশের প্রাইম মিনিস্টার ছিলেন। এ সমস্ত চিন্তাভাবনা করেই তাকে একটা সুন্দর জায়গায় অবস্থানের জন্যই ঢাকায় এই কারাগোরে রাখা হয়েছে।”
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায়ও সম্পৃক্ততার অভিযোগ করেছেন দলটির নেতা শেখ সেলিম।
তিনি দাবি করেন, বঙ্গবন্ধু হত্যায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত পলাতক আব্দুর রশিদ ও শরীফুল হক ডালিমকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময় পরিচয় গোপন করে ঢাকায় আনা হয়েছিল।
“কথা আছে ওই সময় কর্নেল রশিদ, ডালিম ঢাকায় ছিল। অন্য নামে তাদের ঢাকায় আনা হয়। হামলা শেষে ওই রাতে তাজুল ইসলামসহ চারজনকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে ডিজিএফআইয়ের রুমি খালেদা জিয়াকে বলেছিলেন, ম্যাডাম এদের কী করে পাঠানো হয়? জবাবে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, চুপ কর। তুমি এর ভেতর নাক গলাবা না। এ ঘটনার সঙ্গে খালেদা জিয়াও জড়িত ছিল।”
সুযোগ থাকলে খালেদা জিয়াকে ওই মামলার এক নম্বর আসামি করার দাবি জানান তিনি।
তিনি বলেন, “বিএনপি বিদেশিদের কাছে ধর্ণা দেয়। নালিশ করে। ওরা কারা? আমার দেশের গণতন্ত্র আমার দেশের জনগণ ঠিক করবে। অন্য কেউ নিয়ন্ত্রণ করবে না।”
খালেদা জিয়ার রায়ের আগের দিন লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশনে হামলার জন্য বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দায়ী করে তার গ্রেপ্তারের দাবি জানান শেখ সেলিম।
তিনি বলেন, “তারেকের নির্দেশে লন্ডনে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলছে। তার নির্দেশে লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশনে হামলা ও ভাংচুর করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ছবিও তারা ভাংচুর করে, সেদিন হাই কমিশনের ভেতরে ঢুকে হামলা করল, বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাংচুর করল।”
এই হামলায় জড়িতরা এখনও গ্রেপ্তার না হওয়ায় যুক্তরাজ্য সরকারের সমালোচনা করে সেলিম বলেন, “ব্রিটিশ সরকারের কাছে আমার প্রশ্ন- এই সন্ত্রাসী, জঙ্গিরা কীভাবে আমাদের হাই কমিশনে ঢুকল? এখানে আপনারা কী ব্যবস্থা নিয়েছেন? আজ এখানে আপনাদের কোনো হাই কমিশনে যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটত সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতাম।
“এটা আপনাদের ব্যর্থতা। এর সঙ্গে জড়িত তারেক রহমান। সে একজন সন্ত্রাসী, জঙ্গি ও সাজাপ্রাপ্ত আসামি। আপনাদের ওখানে বসে অপকর্ম করবে আর আপনারা দেখবেন না- এটা হতে পারে না। আপনাদের বলব, অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে যে সাজা হয় তা দিন।”
বাংলাদেশের আদালতে দণ্ডিত তারেক রহমানকে নির্বিঘ্নে বিচরণ করতে দিয়ে যুক্তরাজ্য নিজেদের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ব্রিটিশ সরকারের উদ্দেশে ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা বলেন, “আপনারা নিজেদের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন। তাকে বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করুন। এই অপকর্ম থেকে যাতে আপনারাও রেহাই পান।”