খালেদার আপিল রোববার

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজার রায়ের বিরুদ্ধে রোববার আপিল করা হবে বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Feb 2018, 12:41 PM
Updated : 8 Feb 2018, 12:43 PM

বৃহস্পতিবার রায়ের পর এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, “আমরা আজকেই চেষ্টা করছি রায়ের সত্যায়িত কপি পেতে। … সেই কপি পেলে আমরা রোববারই এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল ফাইল করব।”

সেই আপিলে জজ আদালতের রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ চাওয়ার পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপারসনের জামিন চাওয়া হবে বলে জানান তার আরেক আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন। 

ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আখতারুজ্জামান বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে জনাকীর্ণ আদালতে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টের নামে বিদেশ থেকে আসা দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

এছাড়া খালেদা জিয়ার বড় ছেলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং মাগুরার সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদের দশ বছর করে কারাদণ্ড এবং দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার টাকা করে জরিমানার রায় হয়েছে।

রায়ের পর খালেদা। টিভি থেকে নেওয়া ছবি

রায়ের পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, নৈতিক স্খলনের জন্য দুই বছরের বেশি সাজা হলে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ নেওয়া যায় না।

আবার আপিল শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত যেহেতু একটি মামলার বিচার পূর্ণাঙ্গভাবে শেষ হয় না, সেই অবস্থায় নির্বাচন করা যাবে কি না- সে বিষয়ে হাই কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের দুই রকম দুটি রায় রয়েছে।

এই অবস্থায় খালেদা জিয়ার বিষয়টি আপিল বিভাগ ও নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে বলে মনে করছেন আইনমন্ত্রী।

তার ওই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সংবাদ সম্মেলনে সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ বলেন, “এটা আইনমন্ত্রীর ব্যাপার না। এটা আদালতের ব্যাপার। উনি (খালেদা জিয়া) পারবেন কি পারবেন না সেটা কি আইনমন্ত্রী ঠিক করবেন?

“যদি প্রয়োজন পড়ে তাহলে এটা আদালতে গড়াবে। তখন সুপ্রিম কোর্টই সিদ্ধান্ত দেবে- তিনি পারেন কি পারেন না। আমাদের মতে তিনি (খালেদা জিয়া) পারেন।… ফার্স্ট কোর্ট, তারপরে হাই কোর্ট, তারপরে সুপ্রিম কোর্ট। শেষ পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত না হলে তিনি অবশ্যই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। আমরা মনে করি যতদিন পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হবে ততদিন পর্যন্ত তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।”

কারাগারের পথে খালেদা। টিভি থেকে নেওয়া ছবি

মওদুদ ছাড়াও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান রুহুল আলম চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ নেতৃবৃন্দ এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

সাজা মাথায় নিয়ে খালেদা জিয়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন কি না- জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন সুপ্রিম কোর্টে নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “এখন নির্বাচনের প্রশ্ন নেই। এখনো তো জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাই হয়নি। তবে সাজা স্থগিত হলে নির্বাচনে প্রার্থী হতে আইনগত কোন বাধা নেই।”

তিনি বলেন, রায় স্থগিত হলে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অনেক নজির রয়েছে। নিম্ন আদালতে সাজা হওয়ার কারণে উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনে অনেক প্রার্থীর প্রার্থীতা বাতিল হয়েছিল। পরে হাই কোর্টে নিম্ন আদালতের সাজা স্থগিত হওয়ায় তারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন এবং অনেকে বিজয়ী হয়ে দায়িত্ব পালনও করছেন।

রায়ের পর সুপ্রিম কোর্টে এদিন পক্ষে-বিপক্ষে পাল্টাপাল্টি মিছিল করেছে বিএনপি ও আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা।

তার আগে সকাল থেকেই সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ছিল উত্তেজনা। বিচারপ্রার্থীর উপস্থিতি সারাদিনই ছিল কম। তল্লাশি আর নিরাপত্তা কড়াকড়ির কারণে আইনজীবীর সুপারিশ ছাড়া বেশিরভাগ বিচারপ্রার্থীই এদিন সুপ্রিম কোর্টে ঢুকতে পারেননি।

বেলা ১১টার দিকে হাই কোর্ট মাজারের গেট দিয়ে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা মিছিল করে বের হতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি হয়। পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে তাদের আটকে দেয়। পরে মাজার গেট তালাবন্ধ করে দেয়।

এ সময় পুলিশকে জলকামান ও প্রিজন ভ্যান নিয়ে সেখানে অবস্থান নিতে দেখা যায়। গেইটের সামনে থেকে সাইফুল ইসলাম ও আমিনুল ইসলাম নামের দুজনকে আটকও করা হয়।

সাইফুল দাবি করেন, তিনি বিজয়নগর এলাকার ফুটপাতে কাপড়ের দোকান চালান। বঙ্গবাজার যাচ্ছিলেন কাপড় কিনতে। যাওয়ার পথে মাজার গেইটের সামনে থেকে তাকে আটক করা হয়।

আর আমিনুল ইসলাম দাবি করেন, তিনি খিলগাঁও এলাকায় রিকশা চালান। রাজনীতির সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

তবে তাদের আটক করে নিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি পুলিশ সদস্যরা।