আপিল করে ভোটের সুযোগ আছে খালেদার

নৈতিক স্খলনজনিত কারণে দুই বছরের বেশি কারাদণ্ডে নির্বাচনে অযোগ্য হলেও আপিল করে ভোটে অংশ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার।

মঈনুল হক চৌধুরীও পিয়াস তালুকদারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Feb 2018, 10:55 AM
Updated : 8 Feb 2018, 01:14 PM

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বৃহস্পতিবার ঢাকার আদালতে রায় হওয়ার আগ থেকেই তার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা-অযোগ্যতার প্রসঙ্গ ছিল আলোচনায়।

বিএনপি নেতারা এবং  খালেদা জিয়া নিজেও বুধবার সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, তাকে সাজা দিয়ে সরকার আসলে ভোট থেকে তাকে বাদ দেওয়ার উদ্দেশ্যই বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে।

এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আনা ২ কোটির বেশি টাকা আত্মসাতের এই মামলায়  সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদাকে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায়, ক্ষমতায় থেকে অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে ‘অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের’ কারণে পাঁচ বছর সাজা দিয়েছে আদালত।

সংবিধান ও নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ন্যূনতম দুই বছর দণ্ডিত হলে সংসদ সদস্য হওয়ার ও থাকবার যোগ্যতা হারান যে কেউ। মুক্তি লাভের ৫ বছর পার না হওয়া পর্যন্ত ভোটে অংশ নেওয়া যায় না।

এই আইন অনুযায়ী খালেদা জিয়া ভোট করার যোগ্যতা হারিয়েছেন; তবে আপিল করলে বিষয়টি হবে ভিন্ন।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিম্ন আদালতের সাজা নিয়ে আপিল হবে। সেক্ষেত্রে বিচারাধীন অবস্থায় ভোটে অংশ নিতে বাধা নেই।”

নবম সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর-১ আসন থেকে এভাবেই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন মহীউদ্দীন খান আলমগীর। অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় তার ১৩ বছর সাজা হয়েছিল।

রায়ের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনেও খালেদা অভিযোগ করেন, তাকে ভোট থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টায় সরকার

সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নৈতিক স্খলনজনিত কারণে অভিযুক্ত হয়ে কারও দুই বছরের অধিক সাজা হলে সাজার পরবর্তী পাঁচ বছর তিনি নির্বোচনে অযোগ্য হবেন- এই হল বিধান।

“কিন্তু সাজাটি সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত যেতে হবে। বিচারিক আদালত হলে হাই কোর্টে আপিল হবে, তারপর আবার আপিল বিভাগে আপিল হবে। সে পর্যন্ত গিয়ে যদি সাজা টিকে যায়, তাহলে তিনি সাজা খাটার পরবর্তী পাঁচ বছর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য হবেন।”

একাদশ সংসদ নির্বাচন এই বছরই হবে বলে বাস্তব অবস্থায় এই সময়ের মধ্যে হাই কোর্ট ও আপিল বিভাগ পেরিয়ে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির সম্ভাবনা কম।

শফিক আহমেদ বলেন, হাই কোর্ট কিংবা আপিল বিভাগে বিচারিক আদালতের সাজা স্থগিত হয়ে গেলে বা জামিনে থাকলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারা যায়।

“তবে সর্বোচ্চ আদালতে বিচারিক আদালতের সাজা টিকে গেলে তখন যদি তিনি সংসদ সদস্য হন, তাহলে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হয়ে যাবে।”

সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোবারক জানান, বাংলাদেশের নির্বাচনী আইনে উচ্চ আদালতে বিচারাধীন অবস্থায় অংশ নিতে বাধা না থাকলেও ভারতের নির্বাচনী আইনে নিম্ন আদালতে দোষী সাব্যস্ত হলেই নির্বাচনে অযোগ্য হওয়ার বিধান রয়েছে।

রায়ের আগে ছাত্রদলের অবস্থান থেকে খালেদা জিয়ার প্রতি সমর্থনের প্রকাশ

এই সাজা হওয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে সরাসরি উত্তর না দিয়ে তা উচ্চ আদালত এবং নির্বাচন কমিশনের উপর নির্ভর করছে বলে মন্তব্য করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

তিনি বলেন, “হাই কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের দুটি রায় আছে, যেখানে এ ব্যাপারে কিন্তু সুনিশ্চিত বলা হয়েছে আপিল যতক্ষণ পর্যন্ত শেষ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই মামলাটা পূর্ণাঙ্গ স্থানে যায়নি সেজন্য দণ্ডপ্রাপ্ত হননি সেজন্য ইলেকশন করতে পারবেন, আবার আরেকটা রায়ে আছে পারবেন না।

“এখন উনার (খালেদা) ব্যাপারে আপিল বিভাগ এবং স্বাধীন নির্বাচন কমিশন কী সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটা তাদের ব্যাপার।”

আনিসুল হক বলেন, রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি পাওয়ার পর খালেদা জিয়া  আপিল করতে পারবেন এবং জামিনও চাইতে পারবেন।

৬ শতাধিক পৃষ্ঠার রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি পেতে দিনকয়েক সময় লাগার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, তা পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হবে।