রায় ঘোষণা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র: বিএনপি

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া এতিম খানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণাকে আগামী জাতীয় নির্বাচনেও বিএনপিকে বাইরে রাখার ‘ষড়যন্ত্রের’ অংশ মনে করছে দলটি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Jan 2018, 04:58 PM
Updated : 27 Jan 2018, 07:50 PM

শনিবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই মত এসেছে বলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন।

বৈঠকের ফাঁকে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “জাতীয় স্থায়ী কমিটির আজকের সভা থেকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ কয়েকজন নিরাপরাধ ব্যক্তিকে মিথ্যা, বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দিয়ে সরকারের আইন-আদালতের নিয়মনীতির বিরুদ্ধ আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

“এ ব্যাপারে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে বিচারের নামে সরকারি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া আহ্বান জানাচ্ছে।”

রায়ের তারিখ ঘিরে কোনো কর্মসূচি থাকছে কি না- প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এটা জানাব রায় ঘোষণা হওয়ার পরে। পুরো বিষয়টা আমরা আবার জানাব রায় ঘোষণা হলেই।”

আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করবে ঢাকার পঞ্চম জজ আদালত। বিএনপি-জামায়াত জোটের ২০০১-২০০৬ মেয়াদে সরকারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের এ মামলার প্রধান আসামি।

অভিযোগ প্রমাণিত হলে এ মামলায় খালেদা জিয়ার সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে। সেক্ষেত্রে তিনি আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়বেন।

বিএনপি অভিযোগ করে আসছে, ক্ষমতাসীনরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে ‘অন্তঃসারশূন্য’ এই মামলাকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, “এই রায়ের তারিখ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে গোটা জাতি আজকে উদ্বিগ্ন, ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ। আমরা মনে করি, এটা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য এবং সকলের অংশগ্রহণে ইনক্লুসিভ ইলেকশন নষ্ট করার জন্য এটা একটা গভীর ষড়যন্ত্র।”

তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে নব্বইয়ের পর প্রথম সংসদের বাইরে চলে এসেছে বিএনপি। এ বছরের শেষ দিকে অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখেও তারা নির্দলীয় সরকারের অধীনে ভোটের দাবি জানাচ্ছে। তবে সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে অনড় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

এই প্রেক্ষাপটে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা ত্বরাণ্বিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন বিএনপি নেতারা। 

মির্জা ফখরুল বলেন, “গত ২৫ জানুয়ারি বিশেষ জজ আদালতে বিবাদী পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য হঠাৎ সমাপ্ত করে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের উপস্থিত প্রবীণ আইনজীবীদের মতে, এমন ঘটনা শুধু অস্বাভাবিক ও অপ্রত্যাশিত নয়, রহস্যজনক।

“জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি ও দেশনেত্রীকে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে বাইরে রাখার জন্য দ্রুত রায় ঘোষণা সেই অপচেষ্টার অংশ বলেই দেশবাসী মনে করে।”

এই মামলা নিয়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এইচএম এরশাদের সাম্প্রতিক বক্তব্যে রায় কী হবে সে সম্পর্কে ইঙ্গিত রয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব।

তিনি বলেন, “মামলা আদালতে বিচারাধীন থাকলেও তার রায় কী হবে তা সরকার ও সরকারি দলের জানা আছে বলেই মনে হয় তাদের বক্তব্যে।

“স্পষ্টত বোঝা যাচ্ছে যে, জাল-জালিয়াতি করে বিচারের নামে প্রহসন ও বিরোধী পক্ষকে দমন করার জন্য আদালতকে ব্যবহার করার আরেকটি নোংরা দৃষ্টান্ত স্থাপিত হতে যাচ্ছে। বিচার বিভাগ ও আইনের শাসন নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের এমন আচরণে দেশের জনগণ আজ ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ।”

খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে রাত সাড়ে ৯টায় বৈঠক শুরু হয়। ঘণ্টাখানেক পরে বাইরে এসে বৈঠকের আলোচনা নিয়ে সাংবাদিকদের জানান মির্জা ফখরুল। পরে রাত ১২টার কয়েক মিনিট আগে বৈঠক শেষ হয়।

খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে বৈঠকে মহাসচিব ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।