বিএনপিকে নির্বাচনকালীন সরকারে ডাকব কোন যুক্তিতে: কাদের

নির্বাচনের সময় যে ছোট সরকার গঠনের কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাতে বিএনপিকে স্থান না দেওয়ার ইঙ্গিত দিলেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

লালমনিরহাট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Jan 2018, 01:14 PM
Updated : 25 Jan 2018, 01:14 PM

তিনি বলেছেন, “এবার যেহেতু তারা (বিএনপি) সংসদে নেই, তাহলে কোন যুক্তিতে আমরা তাদের নির্বাচনকালীন সরকারে অংশ নিতে বলব।”

ভোটের বছরের শুরুতে বৃহস্পতিবার লালমনিরহাটে জেলা পরিষদ মিলনায়তন প্রাঙ্গণে জেলা আওয়ামী লীগের কর্মিসভার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নে একথা বলেন কাদের।

প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পর বিএনপির পক্ষ থেকে আলোচনায়  আগ্রহ প্রকাশের প্রেক্ষাপটে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদকের কাছ থেকে এই বক্তব্য এল।

সরকারের চতুর্থ বছর পূর্তিতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে শেখ হাসিনা একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেও ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাতে সব দলের অংশগ্রহণের আশা প্রকাশ করেন।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে না হওয়ায় বিএনপির বর্জনের কারণে দশম সংসদ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে দেশে-বিদেশে প্রশ্ন উঠেছিল।

শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতে আপত্তি জানিয়ে আসা বিএনপি নিজেরা নির্বাচনকালীন সরকারের একটি রূপরেখা দেওয়ার কথা বললেও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর তা নিয়ে সংলাপ ডাকার আহ্বান জানিয়ে ছিল।

বিএনপির আলোচনার প্রস্তাব উড়িয়ে দেওয়ার পর এবারের নির্বাচনকালীন সরকারে তাদের না ডাকার পক্ষে দলটির গতবারের আচরণকে কারণ দেখান মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, “বিএনপি যখন সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছিল, তখন নিবার্চনকালীন সরকারে আসার জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা তাদেরকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যন্ত দিতে চেয়েছিল।”

দশম সংসদ নির্বাচনের আগে সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল দলগুলোকে নিয়ে  নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করেছিলেন শেখ হাসিনা। তখন আলোচনার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আমন্ত্রণ জানিয়েও প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

এরপর খালেদা জিয়ার ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর তাকে সান্ত্বনা দিতে গেলেও ভেতর থেকে বন্ধ দ্বার থেকে ফিরে আসতে হয়েছিল শেখ হাসিনাকে।

এসব কারণ দেখিয়ে বিএনপিকে নতুন করে আলোচনায় ডাকতে নারাজ ক্ষমতাসীনরা। সেই সঙ্গে সরকার হটাতে বিএনপির আন্দোলনের সামর্থ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলে আসছেন ওবায়দুল কাদের।

“খালেদা জিয়া প্রত্যেক ঈদের আগে বলে ঈদের পরে আন্দোলন হবে। কিন্তু আন্দোলন আর হয় না। তাই মরা গাঙ্গে জোয়ার আর আসে না।”

বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে’ বলেও দাবি করেন তিনি।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় রায়ের দিন ঠিক হওয়ার দিন লালমনিরহাটের কর্মিসভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, “এই মামলা আমরা দিইনি। তার এই দুর্নীতির মামলা ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে হয়েছে। অথচ বিএনপি মিথ্যাচার করে বলছে, আমরা নাকি তাদেরকে হয়রানি করছি।

“বিচার সরকার নয়, আদালত করছে। খালেদা জিয়া দোষী সাব্যস্ত হলে তার সাজা হবে। আর যদি নির্দোষ প্রমাণিত হন, তা হলে ছাড় পাবেন, এটাই তো কথা।”

আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানান দলীয় সাধারণ সম্পাদক কাদের।

“ত্যাগী নেতাকর্মীদের নিয়ে কমিটি করুন। কোনো অতিথি পাখি যেন জায়গা না পায়। কোনো পকেট কমিটি চলবে না। ক্ষমতার অপব্যবহার করবেন না। করলে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন না।”

লালমনিরহাটে গিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উত্তরাঞ্চলের উন্নয়নে নেওয়া সরকারের নানা পদক্ষেপগুলোও তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, রংপুর থেকে বুড়িমারী পর্যন্ত সড়ককে চার লেইনে উন্নীতকরণের কাজ শিগগিরই শুরু হবে। লালমনিরহাটের বিমানবন্দর চালুর বিষয়ে আগামীতে ক্ষমতায় গিয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

জেলা শহরের অদূরে মোগলহাট স্থলবন্দর চালুর বিষয়টি নিয়ে নৌপরিবহনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দেন তিনি।

ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির বিষয়ে  তিনি বলেন, ভারত সরকার তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়ন করবেন বলে তিনি আশাবাদী।

লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেনের সভাপতিত্বে এই কর্মিসভায় কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, জেলা সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান বক্তব্য রাখেন। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী মিঠু, লালমনিরহাট-২ আসনের সাংসদ ও সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহম্মেদ, লালমনিরহাট-৩ আসনের সাংসদ আবু সাঈদ দুলাল, সংরক্ষিত মহিলা সাংসদ সফুরা বেগম রুমী।