ভোটে স্থগিতাদেশ: রাষ্ট্রপক্ষ আপিলে গেল না কেন, প্রশ্ন বিএনপির

ঢাকার সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের ‘নীরবতাই’ তাদের ‘যোগসাজশের’ প্রমাণ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Jan 2018, 09:09 AM
Updated : 19 Jan 2018, 10:44 AM

শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, সরকার যদি সত্যিই নির্বাচন চাইত, তাহলে হাই কোর্টের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে যেত।

“তাহলে হাই কোর্টের আদেশ স্থগিত হয়ে যেত এবং নির্বাচন হয়ে যেত। এখন তারা হাত-পা গুটিয়ে ফেলেছেন। এমন একটা ভাব, যে এই স্থগিতাদেশ একটা স্থায়ী বিষয়ে, এর বিরুদ্ধে যেন আপিল করা যায় না।”

মওদুদ বলেন, “এটাই প্রমাণ করে, সরকার ও নির্বাচন কমিশনের যোগসাজশে এই নির্বাচন স্থগিত হয়েছে।… আমার বলতে হবে, তারা একই পথের যাত্রী এই ব্যাপারে। তারা হেরে যাবেন বলেই এ কাজগুলো করেছেন।”

ঢাকা উত্তরের মেয়র পদে উপনির্বাচন এবং দুই সিটিতে নতুন যুক্ত হওয়া ৩৬টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর নির্বাচনের জন্য ২৬ ফেব্রুয়ারি ভোটের দিন ঠিক করে তফসিল দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন।

কিন্তু বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দুই ইউপি চেয়ারম্যানের রিট আবেদনে গত বুধবার হাই কোর্ট উত্তরের ভোট স্থগিত করে দেয়। এরপর বৃহস্পতিবার দক্ষিণের নির্বাচনের ওপরও আদালতের স্থগিতাদেশ আসে এক ভোটারের রিট আবেদনের কারণে।

এসব রিট আবেদনের অভিযোগ ছিল, নির্বাচন কমিশনের তফসিলে ১৮ জানুয়ারির মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বলা হলেও এখনও পর্যন্ত তারা চূড়ান্ত ভোটার তালিকাই প্রকাশ করেনি।  

বিএনপি সেদিনই অভিযোগ তোলে, ঢাকার সিটি নির্বাচন স্থগিত হয়েছে ‘সরকারের ইঙ্গিতে’। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, আদালতের আদেশের পেছনে সরকারের কোনো ভূমিকা নেই।

হাই কোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কি না- সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানায়নি নির্বাচন কমিশন। ইসির আইনজীবী শুধু বলেছেন, কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বিএনপির ২০০১-০৬ মেয়াদের সরকারের আইনমন্ত্রী মওদুদ বলেন, সরকার নির্বাচন চাইলে রাষ্ট্রপক্ষ এখনও ‘আপিল’ করতে পারে।

ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “তাহলে আপনারা যান না কেন? আগামী নির্বাচনে কী হতে যাচ্ছে- এটা এখন দেশের মানুষ নিশ্চিই বুঝতে পারছে।”

এক্ষেত্রে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মওদুদ।

“আমার প্রশ্ন হল- এত গুরুত্বপূর্ণ একটা মামলার শুনানি হল। প্রথম দিন অ্যাটর্নি জেনারেল আসলেন না। আদালত বললেন, ‘আগামী দিন আদেশের জন্য রাখছি, যাতে আমরা তার বক্তব্য শুনতে পারি।’ তার পরের দিন আদেশের জন্য যখন মামলা উঠল, অ্যাটর্নি জেনারেল তখনও আসলেন না। তাকে খবর দেওয়া হল। আদালত অপেক্ষা করেছিল তার আসার জন্য। কিন্তু তিনি আসলেন না।

“এর অর্থ কী? এর অর্থ হল, সরকার চেয়েছে, স্থগিতাদেশ দিয়ে দিক। এ জন্যই অ্যাটর্নি জেনারেল যাননি।”   

নির্বাচন কমিশনের আইনজীবীও সেদিন ‘দায়সারা একটা আবেদন’ করেছিলেন মন্তব্য করে মওদুদ বলেন, “তারাও চেয়েছেন যেন, এটা স্থগিত হয়ে যায়।”

‘জাগপা ছাত্রলীগ’ এর ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

সংগঠনের সভাপতি সাইফুল আলমের সভাপতিত্বে জাগপা সভানেত্রী অধ্যাপিকা রেহানা প্রধান, সহসভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুর রহমান আসাদ আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন।

জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে শেরেবাংলা নগরে তার কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে শুক্রবার সকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ভোট স্থগিত নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।  

মওদুদের মত তিনিও বলেন, “বর্তমান নির্বাচন কমিশন যোগ্য নয়। তারা সরকারের আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগসাজশ করে এই কাজটা করেছে্।”

ফখরুলের দাবি, নির্বাচনে ‘পরাজয় নিশ্চিত’ জেনেই সরকার ‘রিট আবেদন করিয়ে ভোট স্থগিতের’ ব্যবস্থা করেছে।

তাহলে বিএনপির একজন ইউপি চেয়ারম্যান রিট করলেন কোন উদ্দেশ্যে- এমন প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, “মামলা করেছে সেটা তো বড় কথা নয়। মামলা কেন হয়েছে? কেন স্থগিত হল? মূল বিষয় হল যে ইউনিয়নগুলো সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, সেগুলোর সীমানা নির্ধারণ হয়নি, ভোটার তালিকা হয়নি। এ কারণেই স্থগিত হয়েছে।”

আর এ জন্য নির্বাচন কমিশন ও আইন মন্ত্রণালয়কে দায়ী করেন বিএনপি মহাসচিব।

“এটা নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা। যে সমস্ত কাজ করা দরকার সেগুলো না করেই তারা নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা করেছে। আইনমন্ত্রণালয়ে দায়িত্বে এই কাজগুলো করা দরকার ছিল, তারা করেনি।”

দেশের এই পরিস্থিতিতে সরকার আলোচনা বা সমঝোতার পথে না এসে, নির্বাচনকালীন সময়ে সবার জন্য সমান মাঠ তৈরি করা না করে, খালেদা জিয়াকে মুক্ত রেখে সব দলকে সমান সুযোগ না দিয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করলেও তাতে কোনো কাজ হবে না বলে মন্তব্য করেন ফখরুল।