নৌকার প্রার্থী হতে সোমবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার পর এই প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হতে আতিকসহ মোট ১৮ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম জমা দেন।
এদের মধ্য থেকে একজনকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেবে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই বৈঠক হবে।
অকাল প্রয়াত আনিসুল হকের উত্তরসূরি ঠিক করতে এই উপ-নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হতে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন আগামী ১৮ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার।
আনিসুল হকের মতোই বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আতিকই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে চলছেন বলে জোর আলোচনা রয়েছে। তিনি নিজেও দাবি করেছেন, শীর্ষ পর্যায়ের ইঙ্গিত পেয়েই মাঠে নেমেছেন তিনি।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর আতিককে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, মনোনয়ন না পেলে তিনি কী করবেন?
উত্তরে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন, তার পক্ষ হয়ে কাজ করব।”
রাজনীতিতে নবিশ আতিকের এক ভাই সাবেক প্রধান বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলাম; আরেক ভাই অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মইনুল ইসলাম।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় আতিকের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান এবং আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক, ব্যবসায়ী নেতা টিপু মুন্সি।
ব্যবসায়ী থেকে রাজনৈতিক দায়িত্ব পালনে আসার আগ্রহের বিষয়ে আতিক বলেন, “প্রধানমন্ত্রী একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিয়েছেন, আনিসুল হক অরাজনৈতিক ব্যক্তি হয়েও কী সুন্দর করে ঢাকা সাজিয়েছেন। এ থেকেই প্রমাণ হয় যে রাজনীতিবিদরা ব্যবসায় আসতে পারেন, ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে আসতে পারেন।”
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে হাজারেরও বেশি সমর্থক নিয়ে ফরম জমা দেন তিনি।
ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পেলে দল-মত নির্বিশেষে একটি আধুনিক, নিরাপদ ঢাকা গড়ার সুযোগ দেওয়ার জন্য সবার কাছে আহ্বান জানাবেন আতিক।
তিনি বলেন, “মেয়র আনিসুল হক ঢাকাকে নতুন করে সাজানোর জন্য যে ধারাবাহিকতা রেখে গেছেন, সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে। নতুন এই ঢাকায় থাকবে খেলার মাঠ, বাচ্চাদের জন্য একটি সুন্দর খেলার জায়গা। এই ঢাকা হবে নতুন প্রজন্মের স্মার্ট ঢাকা। এই ঢাকা হবে খেটে খাওয়া মানুষের ঢাকা।”
‘আনিসের কাজ এগিয়ে নেবেন’ ইকবাল
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম জমা দিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য এইচ বি এম ইকবাল সাংবাদিকদের বলেছেন, প্রয়াত আনিসুল হকের কাজ এগিয়ে নেওয়াই তার লক্ষ্য।
“প্রয়াত আনিসুল হকের ‘গ্রিন ঢাকা ক্লিন ঢাকা’ নিয়ে অনেক আগে ২০০৯ সালে আমি কাজ করেছি। সেই ধারাবাহিকতায় আনিসুল হক কাজ করেছেন, আমিও করব।”
১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে ঢাকার রমন-তেজগাঁও আসনে নৌকা প্রতীকে জয়ী হলেও পর নানা বিতর্কিত কাজে জড়িয়ে পড়ার পর আর মনোনয়ন পাননি ইকবাল।
মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে কতটুকু আশাবাদী- এ প্রশ্নের জবাবে ইকবাল বলেন, “দলের নেতাকর্মীরা আমাকে সমর্থন দিয়েছে। নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দেবে, এটাই আমি আশা করছি, করতেই পারি।
“আমি মনোনয়ন পেলে ১৯৯৬ সালে মতো আবার এই সিটি উপহার দিব। মনোনয়ন পেলে নেত্রীকে জয় উপহারের মাধ্যমে ঢাকাকে নতুন রূপে সবার সামনে তুলে ধরব।”
মনোনয়ন না পেলে কী করবেন- প্রশ্নে ইকবাল বলেন, “দলের বাইরেও অন্যরা মনোনয়ন চাচ্ছে, নেত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন, তার পক্ষ হয়ে কাজ করব।”
অন্যরা যা বললেন
মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার পর রাসেল আশেকী সাংবাদিকদের বলেন, “ঢাকাকে একটি উন্নত, মানবিক ও সম্প্রীতির শহর হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এ ছাড়া নিরাপদ খাবার নিশ্চিতসহ একটি পরিকল্পিত শহর গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।”
সকালে নৌকার মিছিল নিয়ে রাসেল আশেকীই প্রথম ফরম জমা দেন। তারপর থেকে এক একে আসেন অন্য ১৭ জন।
উত্তরের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শামীম হাসান বলেন, “আমি দলের পরীক্ষিত কর্মী। আমি মনোনয়ন পেলে নিজের সর্বোচ্চটাই করে যাব।”
ব্যান্ড দলের বাজনার সঙ্গে কর্মীদের নিয়ে মনোনয়ন ফরম জমা দেন শামীম।
বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করা আবেদ মনসুরের পক্ষে থেকে তার ভাই মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। এক বিবৃতিতে আবেদ মনসুর বলেছেন, “ভোটের আগে গলাবাজি করে মানুষের সাথে প্রতারণা করে কী লাভ? সত্যি বলতে দুই বছর খুব বেশি সময় না হলেও মানুষের মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য যথেষ্ট, যা আনিসুল সাহেব অনেকটাই পেরেছেন। বাকি কাজটুকু চেষ্টা করব।”
ভিনাইল ওয়ার্ল্ড গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবেদ মনসুরের সমর্থকরা পিকআপ ভ্যানে করে আসেন।
এছাড়া মনোনয়ন ফরম জমা দেন মনিপুর স্কুল ও কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন, সাবেক অধ্যক্ষ গাজী আলমগীর, এফবিসিসিআইর পরিচালক হেলাল উদ্দিন, বাংলাদেশ টুডের সম্পাদক জোবায়ের আলম, জেরিন সুলতানা কান্তা, শাহীন খান, আবুল বাসার, মো. ওসমান গনি, সাবেক সাংসদ আসমা জেরিন জুমা, মমতাজ উদ্দিন মেহেদী হাসান, ইয়াদ আলী।
সাবেক সংসদ সদস্য ইকবাল, হক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আদম তমিজি হক, শাহ আলম রোববারই মনোনয়ন ফরম জমা দেন।
সিদ্ধান্ত মঙ্গলবার
মেয়র প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়ে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ সাংবাদিকদের বলেন, “আগামীকাল সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা।”
সেখানে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার হবে। এজন্য সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সব প্রার্থীদের গণভবনে উপস্থিত হতে অনুরোধ জানান গোলাপ।
তিনি বলেন, “এরপর নৌকার প্রার্থী হিসেবে কে মেয়র নির্বাচন করবেন, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।”