সংকট দেখা দিলে পরিস্থিতি বলে দেবে: সংলাপ নিয়ে কাদের

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিএনপির সংলাপের আহ্বান নাকচ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এখন তারা সংলাপের প্রয়োজন দেখছেন না, সে রকম সঙ্কট দেখা দিলে পরিস্থিতিই তা ঠিক করে দেবে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Jan 2018, 01:38 PM
Updated : 13 Jan 2018, 03:20 PM

সরকারের চার বছর পূর্তিতে শুক্রবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে ওই সময়ের জন্য ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ গঠনের কথা বলেন তিনি।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে আসা বিএনপি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে তাদের সঙ্গে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছে।

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শনিবার বিকালে এই আহ্বান জানানোর পর তা নাকচ করেন ওবায়দুল কাদের।

ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “প্রয়োজন হলে সংলাপ হবে, এখন সংলাপের কোনো প্রয়োজন আমরা দেখছি না। সে রকম কোনো সংকট দেখা দিলে পরিস্থিতি বলে দেবে।”

কোন ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হলে আওয়ামী লীগ বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসবে-এ প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, “চির দিনের জন্য সংলাপের দরজা বন্ধ নয়। কারণ এই নির্বাচনের সব কিছু বিএনপির সাথে ঠিক করা আছে। এখানে নির্বাচন কমিশনেও তাদের প্রতিনিধি আছে। আগামী নির্বাচনের আগে কোনো সংলাপ নয়, সেটা সময় হলে দেখা যাবে।”

বিএনপির কার্যকর আন্দোলন গড়ে তোলার সম্ভাবনা দেখছেন না বলেই এখন তাদের সঙ্গে সংলাপে বসার প্রয়োজন বোধ করছেন না বলে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে ইঙ্গিত পাওয়া যায়। 

তিনি বলেন, “ক্রাইসিস পরিস্থিতি জনগণ দিয়ে করতে পারবে না। জনগণকে নিয়ে আন্দোলন তারা করতে পারবে না। সেই অবস্থা তাদের নেই। জনগণ আন্দোলনে আসবে না।

“আগুন সন্ত্রাস করবে? সেটা যদি করে তাহলে জনগণই সেই আগুন সন্ত্রাস প্রতিরোধ করবে, সেই সংলাপ হবে মাঠে।”

বিএনপির সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “সংলাপ নিয়ে মির্জা ফখরুল সাহেব কথা বলেন। সমঝোতা কার সঙ্গে, যারা আগুন সন্ত্রাসী? যারা নিজের বাড়িতে প্রধানমন্ত্রীর সাথে খারাপ আচরণ করেছে তাদের সঙ্গে?”

তিনি বলেন, “নির্বাচনে আসা বিএনপির গণতান্ত্রিক অধিকার, এটা তাদের সুযোগ নয়। অধিকার কি সরকার থেকে দয়া দান হিসেবে নেবে তারা?”

পাকিস্তানের স্বৈরশাসক আইয়ূব খানের সঙ্গে বর্তমান সরকারের তুলনা করায় বিএনপি মহাসচিবের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “এই স্বাধীন দেশেও ঔপনিবেশিক আমলের স্বৈরশাসক আইয়ূব খানের দৃষ্টান্ত তুলে ধরছেন আজকে বিএনপির মহাসচিব।স্বৈরশাসক আইয়ূবের রেফারেন্স দিয়েছেন।আইয়ূবের উন্নয়নের বিষয় তারা টেনে এনেছেন। এখানে কোনো উন্নয়নই হয়নি তৎকালীন সময়ে।

“আইয়ূবের উন্নয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের উন্নয়নের তুলনামূলক চিত্র যারা তুলে ধরেন, তারা জেনে শুনেই পাকিস্তানের ভাবধারায় বিশ্বাসী। পাকিস্তানি ভাবধারাই তাদের রাজনীতি, এটা তারা আবার প্রমাণ করেছেন, এটা তারা বুঝিয়ে দিয়েছেন।”

হতাশা থেকে বিএনপি ‘আবোলতাবোল’ বকছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “দলমত নির্বেশেষে, এমনকি বিএনপির সমর্থকরাও প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণকে গঠনমূলক বলেছে ও প্রশংসা করেছে। এই ভাষণে জনগণ খুশি, আর বিএনপি চরম হতাশ।

“এমন সুন্দর চমৎকার ভাষণ মানুষে গ্রহণ করেছে। মানুষের গ্রহণ, সমর্থন বিএনপিকে আবার হতাশ করেছে। তারা যদি ধরে নেয় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ভোটের রাজনীতির তবে বিএনপি ভোটের রাজনীতিতে হেরে যাওয়ার ভয়ে এমন কথা বলছে।”

‘নির্বাচনকালীন সরকারের’ কথাও সংবিধানে নেই বলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তাকে সংবিধান পড়তে বলেন ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, “মওদুদ আহমদ সাহেবের ব্যাপারে যতো কম কথা বলা যায় ততো ভালো। তিনি সেই আইনমন্ত্রী যিনি একটা বাড়ি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে ৪০ বছর। আদালতে মৃত ব্যক্তির নামে কাগজপত্র দিয়ে তিনি মামলায় খালাস পেতে গিয়েছিলেন। ইনি হচ্ছেন মমওদুদ আহমদ সাহেব, যিনি দিনকে রাত বানান, রাতকে দিন বানান। আইনের মুখোশ পরে তিনি বেআইনি কাজ করেন।

“সংবিধানে সব আছে। আবারও সংবিধানটা মওদুদ সাহেবকে পাঠ করার অনুরোধ জানাই।”

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহম্মদ হোসেন, দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, উপ-দপ্তর বিপ্লব বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।