পদ্মা সেতু নিয়ে এবার সরব হলেন ফখরুল

পদ্মা সেতু নিয়ে এক মন্তব্যের জন্য খালেদা জিয়ার সমালোচনার মধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই অবকাঠামো নির্মাণ নিয়ে অনেক অভিযোগ তুললেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2018, 01:24 PM
Updated : 11 Jan 2018, 01:35 PM

‘ভুল’ নকশায় এই সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলছেন, দুর্নীতির জন্য সরকার এটা করছে। এর আন্তর্জাতিক তদন্ত চান তারা।

‘জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু করা হচ্ছে’ মন্তব্য করে তাতে অনুসারীদের উঠতে নিষেধ করে সমালোচনা শুনতে হচ্ছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে।

ওই বক্তব্যের জন্য খালেদা জিয়ার বুদ্ধিবৃত্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর বুধবার সংসদে বিএনপি নেত্রীকে ‘পাগল’ বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিভিন্ন বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে একমত হলেও পদ্মা সেতু নিয়ে খালেদার বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত জানিয়েছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী।

সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, “একটা ভ্রান্ত ও ভুল ডিজাইনের উপরে পদ্মাসেতু নির্মিত হলে সেটা যে টিকবে না, সেটা তো উনি (খালেদা জিয়া) ভুল বলেননি। বরং তিনি সাচ্চা দেশপ্রেমিকের কাজ করেছেন। তোমরা এখনও এলার্ট হও, চেঞ্জ দ্য ডিজাইন এবং সেটা সঠিকভাবে নির্মাণ হতে হবে।”

দুর্নীতির জন্যই সরকার এই প্রকল্প নিয়ে এগোচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, “এখানে আট হাজার কোটি টাকার প্রজেক্টকে নিয়ে চলে গেছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্টে। এখানে তোমরা সমানে দুর্নীতি করছ-এটা পত্র পত্রিকায় এসেছে। আমরা বলছি, এখানে দুর্নীতি হচ্ছে। এটার আন্তর্জাতিক তদন্ত হোক।”

পদ্ম সেতু নিয়ে দলীয় নেত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “পদ্মা সেতু নিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তো ভুল করে কথা বলেননি। বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকায় বিশেষজ্ঞদের যে বিভিন্ন মতামত উঠে এসেছে বলেই তো তিনি কথা বলেছেন।

“এটা সত্য প্রমাণিত হয়েছে যে, পদ্মা সেতু একটা রং ডিজাইনের উপরে নির্মিত হচ্ছে। এটা আমাদের কথা নয়, এটা বিশেষজ্ঞদের কথা। তারা বলছেন, ড্রিল মেশিন যে পর্যন্ত যায়, তার অনেক নিচে দেওয়া দরকার ছিল। এখন যে নকশা করা হয়েছে যার ভিত্তিতে দুইটা পিলার নির্মাণ করতে পেরেছে-এটা ঠিকই আছে। বাকীগুলো টিকছে না। কারণ স্লাইডিং মাড নিয়ে চলে যাচ্ছে। ফলে ওখানে পিলার দাঁড় করানো সম্ভব হচ্ছে না। এটা আপনার ইঞ্জিনিয়ারদের কথা।”

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

তারা কাঁদা ছুড়াছুড়ি চান না মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “উনিই (শেখ হাসিনা) সব সময় কাঁদা ছুড়াছুড়ি শুরু করে দেন। উদ্দেশ্য আছে অবশ্যই যে, কাঁদা ছুড়াছুড়ি করে গণতান্ত্রিক পরিবেশটাকে ঘোলাটে করে দেয়ার জন্য।”

ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি করে সেই অর্থ বিদেশে পাচারের অভিযোগ করে তিনি বলেন, “পত্র-পত্রিকায় এসেছে, সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে কত টাকা কার জমা আছে। আপনার আমেরিকার ফ্লোরিডায় কত টাকায় কত বাড়ি কেনা হয়েছে, কে কিনেছে। বেগমপাড়া নির্মিত হয়েছে কানাডাতে।

“মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম-কে কতটা বাড়ির মালিক হয়েছেন-সেগুলো সব চলে আসছে। ওয়াশিংটন ডিসিতে বাড়ি-ঘর তৈরি হচ্ছে, কেনা হচ্ছে। আমি শুনেছি যে, আমেরিকার নৈসর্গিক সৌদর্য আছে সেসব এলাকায় বাড়ি-ঘর তৈরি হচ্ছে।”

নির্বাচনের আগে জনগণের দৃষ্টি অন্য দিকে রাখতে সরকার প্রধান বিএনপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা অভিযোগ’ করছেন বলে দাবি করেন তিনি।

তিনি বলেন, “সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই বলেই তারা বন্দুকের ওপর ভরসা করে কুরুচিপূর্ণ মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে।”

সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মীর সরফত আলী সপু, এবিএম মোশাররফ হোসেন, নাজিমউদ্দিন আলম, আসাদুল করীম শাহিন, মুনির হোসেন, রফিক শিকদার  প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।