সমাবেশ করতে না পেরে ঢাকায় বিক্ষোভের ঘোষণা বিএনপির

দশম সংসদ নির্বাচনের চতুর্থ বছরপূর্তির দিন রাজধানীতে সমাবেশ করতে না দেওয়ার প্রতিবাদে শনিবার ঢাকা মহানগরীর থানায় থানায় বিক্ষোভের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Jan 2018, 07:45 AM
Updated : 5 Jan 2018, 08:06 AM

শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ যে গণতন্ত্র হত্যাকারী দল- তার প্রমাণ হল, আজ বিএনপিকে ঢাকায় সমাবেশ করতে বাধা দেওয়া। তারা নিজেরা আজকে ঢাকায় দুইটা সমাবেশ করবে। আর বিএনপিকে সমাবেশ করতে দিল না।

“বিএনপিকে সমাবেশে করতে বাধা দিয়ে সরকার গণতন্ত্র ও গণতন্ত্রের স্বীকৃত বিরোধী দলের অধিকারের ওপর দুর্বৃত্তমূলক আচরণের বর্হিপ্রকাশ ঘটাল।”

চার বছর আগের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ৫ জানুয়ারিকে ‘গণতন্ত্র হত্যার কালো দিবস’ আখ্যায়িত করে এবার দিনটি ঘিরে সমাবেশের অনুমতি না পাওয়ার প্রতিবাদে শনিবার ঢাকা মহানগরীর থানায় থানায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন রিজভী।

বিএনপির বর্জনের মধ্যে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে জিতে টানা দ্বিতীয়বারের মতো দেশ পরিচালনার ভার নেয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার।

ওই নির্বাচন ঠেকানোর ডাক দিয়ে ব্যর্থ দলটি ভোটের প্রথম বছরপূর্তির দিন ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে সরকার হঠানোর আন্দোলনে নামে। সেসময় টানা তিন মাসের হরতাল-অবরোধে নাশকতা ও পেট্রোল বোমায় দেড় শতাধিক মানুষের প্রাণহানি হয় বলে সরকারের ভাষ্য।

এরপর থেকে বিএনপি প্রতি বছর ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে প্রতিবাদী সমাবেশের ডাক দিয়ে আসছে। তবে সমাবেশের স্থান ও সময় নিয়ে আপত্তিতে পুলিশের অনুমতি না পেয়ে সেই কর্মসূচি কয়েকদিন পিছিয়েও পালন করতে দেখা গেছে দলটিকে।

এবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে আবেদন করা হলেও অনুমতি না দেওয়াকে সরকারের ‘পোড়ামাটির নীতি’ অবলম্বন করা বলছেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচির রিজভী।

তিনি বলেন, “ভোটারবিহীন সেদিনের নির্বাচন দেশে-বিদেশে যে বির্তকিত ও কলঙ্কিত নির্বাচন হিসেবে গণ্য হয়েছে, কেউ তাদের সেই নির্বাচনকে স্বীকৃত দেয়নি বলে তাদের সেই লজ্জ্বা ঢাকতেই বিএনপিসহ বিরোধী দলের কন্ঠরোধ করতে আজকে কর্মসূচিতে দুর্বিনীত কায়দায় বাধা দিল।” 

দিনটিকে ঘিরে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন মহানগর, জেলা ও উপজেলায় ঘোষিত কালো পতাকা মিছিলে পুলিশ ও ক্ষমতাসীনরা হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন এই বিএনপি নেতা।

তিনি বলেন, “গাজীপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে দলের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে পুলিশ। সারা ময়মনসিংহ জেলাতে যেন এক অঘোষিত কার্ফু চলছে। ৫ জানুয়ারির কালো দিবসের কর্মসূচিতে বাধা দিতে উন্মুক্ত সন্ত্রাসী দলের ন্যায় আচরণ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিভিন্ন স্থানে চলছে পুলিশের তাণ্ডব।”

সমাবেশের অনুমতি না পেয়ে নয়া পল্টনে রিজভী যখন এই সংবাদ সম্মেলনে আসেন, তার আগে সকাল থেকেই বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও তার পাশপাশের অলিগলিতে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন দেখা যায়। কার্যালয়ের কাছাকাছি জলকামান ও প্রিজন ভ্যানও রাখা হয়।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘স্বভাবসুলভ মিথ্যাচার করেন’ বলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের (আইইবি) সাধারণ সম্পাদক এম এ সবুরের করা মন্তব্যকে ‘রুচি বিবর্জিত ও অশালীন’ আখ্যায়িত করে সংবাদ সম্মেলনে তার নিন্দা জানান এই বিএনপি নেতা।

২ জানুয়ারি ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা অনুষ্ঠান করতে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন ব্যবহারের সব আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছিল দাবি করে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী বলেন, “আইইবি সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, বিএনপি মহাসচিব নাকী স্বভাবসুলভ মিথ্যাচার করেন।

“একজন প্রকৌশলী হিসেবে আইইবির মতো প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল পদে অধিষ্ঠিত থেকে বিএনপি মহাসচিবের মতো একজন জাতীয় নেতার বক্তব্য নিয়ে সবুর সাহেবের এ  ধরনের বক্তব্য দেশের জনগণের কাছে অমার্জিত ও অরুচিকর হিসেবেই প্রতীয়মান হয়েছে। আমি সবুর সাহেবের এ ধরনের বক্তব্যের তীব্র ধিক্কার ও ঘৃনা জানাই।”

সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, কেন্দ্রীয় নেতা নাজিমউদ্দিন আলম, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সানাউল্লাহ মিয়া, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মীর সরফত আলী সপু উপস্থিত ছিলেন।