কাকে ধন্যবাদ দেব- প্রধানমন্ত্রী নাকি যোগাযোগমন্ত্রীকে: মঞ্জু

চার লেইনে উন্নীত হওয়ার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বর্তমান অবস্থা দেখে মুগ্ধ পানিসম্পদমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেছেন, এজন্য প্রধানমন্ত্রী আর যোগাযোগমন্ত্রীর মধ্যে কাকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিৎ- তা তিনি ভেবে পাচ্ছেন না।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Jan 2018, 04:36 PM
Updated : 6 Jan 2018, 05:22 PM

মন্ত্রিসভার রদবদলে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে পানিসম্পদের দায়িত্ব পাওয়ার পরদিন বৃহস্পতিবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের উপস্থিতিতেই তার এ প্রশংসা আসে।  

এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নোয়াখালী খাল সংস্কার ও পুনঃখনন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। ওই প্রকল্পের অর্থায়নকারী সংস্থা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান মঞ্জু। দপ্তর বদলের পর এটাই ছিল কোনো সরকারি অনুষ্ঠানে তার প্রথম উপস্থিতি।   

সদ্য নতুন দায়িত্ব পাওয়া মন্ত্রী স্বাভাবিকভাবেই ওই প্রকল্পের বিষয়ে বিস্তারিত বলতে প্রস্তুত ছিলেন না। তার সাত মিনিটের বক্তব্যের বড় একটি অংশজুড়ে ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রশংসা। 

১৯৮৮-১৯৯০ সালে এইচএম এরশাদ সরকারের সময়ে এবং ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে শেখ হাসিনা সরকারের যোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন সাংবাদিক তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার ছেলে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। তার সময়েই যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হয়।

বক্তব্যের শেষভাগে এসে তিনি বর্তমান সরকারের সময়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন। 

“আমি যখন আগে ঢাকা থেকে চিটাগাং যেতাম, সেই রাস্তা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সময়ে যথেষ্ট উন্নত হয়েছিল। কিন্তু এখন ওই রাস্তায় যখন আমি যাই, তখন আমি কাকে ধন্যবাদ দেব… প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দেব, না যোগাযোগ মন্ত্রীকে ধন্যবাদ দেব- এটা সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য…।”

বক্তব্যের শুরুতে মঞ্জু প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকেন, “আমি প্রায় দশ বছর আপনার নেতৃত্বে চাকরি করে আসছি। যেখানেই আপনি আমাকে দিয়েছেন…। এর আগে প্রেসিডেন্ট এরশাদ সাহেবের সাথেও আমি পাঁচ বছরের বেশি কাল তার মন্ত্রী ছিলাম।… এছাড়া আমাদের  যথেষ্ট বয়স হয়েছে।”

প্রধানমন্ত্রী এ সময় ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী থাকার কথাও জেপি চেয়ারম্যানকে মনে করিয়ে দেন। 

নব্বইয়ের দশকে এরশাদের জাতীয় পার্টির গুরুত্বপূর্ণ নেতা আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ১৯৮৫ থেকে তিন বছর ছিলেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রীর দায়িত্বে। ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে এরশাদ সরকারের পতন হলে ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসে বিএনপি। সেই সরকারের পুরোটা সময় কারাগারে থাকা এরশাদ পার্টির মহাসচিবের দায়িত্ব দেন মঞ্জুকে।

১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হলে সরকার গঠনে সমর্থন দেয় এরশাদের জাতীয় পার্টি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে মন্ত্রী করে নেন।  

পরের বছর এরশাদ কারাগার থেকে মুক্তি পান; ২০০০ সালে কোন্দলে তিন ভাগ হয় এরশাদের জাতীয় পার্টি। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু গত ১৭ বছর ধরে তারই একটি ভাগের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করলে মঞ্জুকে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন শেখ হাসিনা। 

 

পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া- কাউখালী আসনের ছয়বারের এমপি মঞ্জু আওয়ামী লীগের বর্তমান সরকারের প্রশংসায় বলেন, “যার চোখ কান খোলা আছে তিনি উপলব্ধি করবেন, বাংলাদেশ সৃষ্টির পর অনেক সরকার এসেছে, অনেক পরিবর্তন হয়েছে অনেক পরিবর্ধন হয়েছে। কিন্তু আমি বিমুগ্ধ হয়ে যাই, এত কাজ আমি কখনও দেখি নাই।”   

আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসায় তিনি বলেন, “তার সঙ্গে কাজ করার একটা বৈশিষ্ট্য হল, তিনি নিরুৎসাহিত করেন না, উৎসাহিত করেন। কোনো জিনিস অসম্ভব- এটা তিনি বিশ্বাস করেন না।”

গত চার বছর পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনের সময় যে কোনো প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা পাওয়ার কথাও বলেন মঞ্জু।     

“এটা আমার সৌভাগ্য, উনি যখন যে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব আমাকে দিয়েছেন, তার সাথে আমি সরাসরি আমার মন্ত্রণালয়ের সমস্যাগুলির কথা আমি বলতে পারতাম। এবং তিনি তার সমাধান দিয়েছেন।”

বিভিন্ন সময়ে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনার অভিজ্ঞতা, পদ্মা সেতু নিয়ে সঙ্গে টানাপড়েন এবং সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ব ব্যাংকের সুর বদল নিয়েও কথা বলেন ৭৪ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ।

তিনি বলেন, “এবার পরিবেশ সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। তিনজন ভাইস প্রেসিডেন্ট এসে তিনজনই বললেন, তোমাদের দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে, কর্মকাণ্ড হচ্ছে এবং এর নেতৃত্বে তোমাদের যে নেতা আছেন, তাকে আমরা ধন্যবাদ জানাই।… বহির্বিশ্বে এই ধরনের মন্তব্য ৭২ থেকে ৯৫ সাল পর্যন্ত আমরা কখনও শুনি নাই। ৯৬ সালে প্রথম পরিবর্তনের বাতাস বইতে শুরু করল।”

দশ বছর মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব দিয়ে আস্থা রাখায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, “আমি কতটুকু সফল হয়েছি আমি জানি না। কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, আমি কখনও খোদার রহমতে আপনাদের দোয়ায় ব্যর্থ হই নাই।”