একলা চল নীতি হবে আত্মঘাতী: মেনন

রাশেদ খান মেননের বিমান মন্ত্রণালয় হারানোয় অনেকে তার প্রতি সরকার প্রধানের বিরাগভাজন হওয়ার ইঙ্গিত দেখলেও আওয়ামী লীগের জোট ছাড়ার কথা ভাবছেন না এই বাম নেতা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Jan 2018, 03:24 PM
Updated : 4 Jan 2018, 03:24 PM

বৃহস্পতিবার বিমান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার পর জাতীয় প্রেস ক্লাবে ওয়ার্কার্স পার্টির পূর্ব নির্ধারিত এক সংবাদ সম্মেলনে আসার পর তাকে ছেঁকে ধরেন সাংবাদিকরা।

এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে ওয়ার্কার্স পার্টির না থাকার কোনো সম্ভাবনা রয়েছে কি না?

উত্তরে মেনন বলেন, “আন্দোলন ও নির্বাচন ১৪ দলগতভাবে এক সাথে করতে চাই। আমি মনে করি, ১৪ দলের ঐক্য অব্যাহত থাকবে এবং ১৪ দলের ঐক্যকে সঠিকভাবে কার্যকর করতে হবে। একলা চল নীতিতে বিজয় আনা সম্ভব না।

“২০০৮ সালের নির্বাচন, ১০১৪ সালের নির্বাচন করে সংবিধানকে সমুন্নত রাখা, সব কিছুই সম্ভব হয়েছে ঐক্যের কারণে। আমি বলব, আমিও যদি এখন একলা চলতে চাই সেটাও আত্নঘাতী হবে।”

বামফ্রন্টে থাকা মেননের ওয়ার্কার্স পার্টি এক দশক আগে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে যোগ দেয়।

আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর মেননকে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন শেখ হাসিনা।

চার বছর পর আকস্মিকভাবে মন্ত্রিসভায় কিছু রদবদলে বিমান থেকে সরিয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে মেননকে।

মেয়াদের শেষে মন্ত্রিসভায় এই রদবদলকে কীভাবে দেখছেন- জানতে চাইলে মেনন বলেন, “নির্বাচন যখন আসে তখন নানাবিদ ইকোয়েশন আসে। এই পরিবর্তন একটা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে অনেক হিসাব নিকাশ থেকে।”

দলের ২১ দফার কর্মসূচিকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে আগামী ৩ মার্চ শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে ওয়ার্কার্স পার্টি।

সংবাদ সম্মেলনে দলটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, “এবছরটি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ বছরে জাতীয় সংসদের নির্বাচন হতে চলেছে। এবছরই নির্ধারিত হবে যে ২০০৮ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত যে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও উন্নয়নের ধারায় দেশ এগিয়েছে তা অব্যাহত থাকবে, নাকি বিএনপি-জায়ামাত জোট শাসনের দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন, সন্ত্রাস-সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ-জঙ্গিবাদের পুনরুত্থানে দেশ আবার পিছিয়ে যাবে অন্ধকারের পথে।”

সরকার উন্নয়ন করলেও সেই সঙ্গে বৈষম্যও বাড়ছে বলে দাবি করেন সংসদ সদস্য বাদশা।

“দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে বাংলাদেশের এই উন্নয়নের পাশাপাশি গরিব-বড়লোকের মধ্যে ধন বৈষম্য বেড়েছে বহুগুণ। পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত হিসাবে গত পাঁচ বছরে উপরতলার ১০ ভাগ মানুষের হাতে দেশের অধিকাংশ সম্পদ পুঞ্জীভূত হয়েছে। বেড়েছে গ্রাম-শহরের বৈষম্যও।”

ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যাংক খাতে অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, শিক্ষা খাতে বাণিজ্য প্রশ্নপত্র ফাঁসের সমালোচনা করেন।

তিনি বলেন, “একথা অস্বীকার করার উপায় নাই যে, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন, আদর্শহীনতা, সাম্প্রদায়িকতা দেশের রাজনীতির প্রধান ধারায় পরিণত হয়েছে। নির্বাচন পরিণত হয়েছে টাকার খেলায়। যে কারণে এত উন্নয়ন ও ভবিষ্যতের অপার সম্ভাবনার পরও এদেশের মানুষ, বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম এক স্বপ্নহীন অবস্থায় রয়েছে।”

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় পলিটব্যুরো সদস্য বিমল বিশ্বাস, আনিসুর রহমান মল্লিক, নুরুল হাসান, মাহমুদুল হাসান মানিক, সুশান্ত দাস, নুর আহমদ বকুল, হাজেরা সুলতানা, কামরূল আহসান।