কমিটি ঘোষণার পর ফের দ্বন্দ্ব ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগে   

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের তৃণমূল কমিটিগুলো ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ডের নেতাদের দ্বন্দ্ব বেঁধেছে।

কাজী মোবারক হোসেন নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Jan 2018, 05:48 PM
Updated : 4 Jan 2018, 05:14 AM

ঘোষিত কমিটি বাতিলের দাবিতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কাদের খানের নেতৃত্বে প্রায় ১১ জন নেতা দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন।

গণভবন থেকে বেরিয়ে তারা দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রী এই ‘প্রেস লিস্ট’ কমিটি বাতিল করেছে।

তবে ভিন্ন কথা বলছেন উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কমিটি স্থগিত, বাতিলের একটা বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। যারা এই ধরনের বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

গত বুধবার উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম রহমত উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক মো. সাদেক খান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ২৬টি থানা, ৪৬টি ওয়ার্ড ও ৯টি ইউনিয়নে দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়।

কমিটি ঘোষণার পর সাদেক খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দলীয় সভানেত্রীর অনুমোদন নিয়ে আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করেছি। আশা করছি, নতুন কমিটির নেতৃত্বে দল আরও সুসংগঠিত, সুদৃঢ় ও শক্তিশালী হয়ে উঠবে।”

তবে শক্তিশালী হওয়ার বদলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে উপ-নির্বাচনের আগে এবং সংসদ নির্বাচনের বছরে রাজধানীর এই তৃণমূল কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের প্রকাশই ঘটল। 

মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম হানিফ অভিযোগ করেছেন, ত্যাগীদের বাদ দিয়ে ‘পকেট কমিটি’ করেছেন উত্তরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ত্যাগী ও প্রকৃত রাজনীতিকদের বাদ দিয়ে পকেটের লোক কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে দল রাজনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়বে।

“প্রধানমন্ত্রী আমাদের এসব অভিযোগ শুনে কমিটি বাতিল করেন। নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি ও সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে দায়িত্ব দেন।”

প্রধানমন্ত্রীকে গণসংবর্ধনা দেওয়ার এক কর্মসূচিতে ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের নেতারা। ছবি: আসাদুজ্জামান প্রামানিক

গণভবনের বৈঠকের বিষয়ে উত্তরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাদের খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নেতাকর্মীদের ক্ষোভের কথা জানানোর জন্য আমরা ১৬ জন আমাদের পার্টির অভিভাবক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বিষয়গুলো উনাকে অবহিত করেছি।

“নেত্রী পূর্ণাঙ্গ এই কমিটি স্থগিত করেছেন এবং নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে ফারুক খান ও নওফেলের সঙ্গে আমাদেরকে আলোচনা করতে বলেছেন।”

ওই বৈঠকে থাকা মিরপুরের সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লাও একই কথা বলেন।

বিভ্রান্তি ছড়ানোর যে অভিযোগ সাদেক খান বলেছেন, সে বিষয়ে জানতে চাইলে এই সংসদ সদস্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নেত্রী যা বলেছেন, তাই সাংবাদিকদের বলেছি। সাহস থাকলে ব্যবস্থা নিতে বলেন।”

উত্তরের কমিটির বর্তমান অবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এম ফারুক খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।”

ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার সঙ্গে ক্ষুব্ধ নেতারা যোগাযোগ কথা বলেছেন।

“তারা আমাকে বলেছেন, নেত্রী এই কমিটি স্থগিত করেছেন।  আমি ফারুক খান ও দীপু মনি আপার সঙ্গে বসে যাচাই-বাচাই করে কমিটিগুলো ঠিক করব।”

ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রায় দুমাস আগেও একবার কমিটি দিয়েছিলেন। বিভিন্ন অভিযোগের কারণে সেই কমিটিও স্থগিত করেন প্রধানমন্ত্রী।

এবার কমিটি ঘোষণার পর তার সঙ্গে দেখা করতে যে ১১ জন গিয়েছিলেন, তার মধ্যে বনানী থানার সভাপতি এ কে এম জসিমউদ্দীন, দারুস সালাম থানার সভাপতি মাজহারুল আনাম, শাহ আলী থানার সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম মোল্লা, ৩২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেন, ২৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ওমর ফারুকও ছিলেন।