বিদেশে সম্পদের খবর: প্রধানমন্ত্রীকে খালেদার উকিল নোটিস

বিদেশে সম্পদ নিয়ে বক্তব্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে উকিল নোটিস পাঠিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Dec 2017, 05:48 AM
Updated : 20 Dec 2017, 09:50 AM

সেখানে বলা হয়েছে, ওই বক্তব্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ‘নিঃশর্ত ক্ষমা’ চাইতে হবে এবং তা সংবাদ মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। ৩০ দিনের মধ্যে তা করা না হলে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বুধবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, খালেদা জিয়ার পক্ষে তার আইনজীবী মাহবুবউদ্দিন খোকন মঙ্গলবার ডাক যোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ের ঠিকানায় ওই নোটিস পাঠিয়েছেন।

সম্প্রতি দেশের কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে বিদেশি একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে একটি খবর প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশে দুর্নীতি মামলায় বিচারের মুখে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে সৌদি আরবে।

গত ৭ ডিসেম্বর গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নে ওই প্রসঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ওই খবর কেন শুধু দুটি সংবাদপত্র ও দুটি টেলিভিশনে প্রকাশ করা হল, কেন অন্য সংবাদমাধ্যমগুলো তা প্রকাশ ও প্রচার করল না- সেই প্রশ্ন তুলে উষ্মা প্রকাশ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী অনেকটা ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, “সৌদি আরবে যে বিশাল শপিং মল পাওয়া গেল; এটা তো আমরা বলিনি। এই খবর দেওয়ার কোনো আগ্রহ দেখলাম না।”

সম্পাদকরা বিনা পয়সায় শপিং করার কার্ড পেয়েছেন কি না, সেই কারণে খবরটি চেপে গেছেন কি না- এমন প্রশ্নও তিনি সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সামনে তোলেন।

পরদিন এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “এই মানহানিকর তথ্য প্রচারের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আমরা বাধ্য হব।”

তার ১১দিন পর খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে উকিল নোটিস পাঠানোর বিষয়টি সংবাদ সম্মেলনে জানালেন ফখরুল। 

বিএনপি মহাসচিব যখন এই সংবাদ সম্মেলন করছেন, খালেদা জিয়া তখন দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের দায়ের করা এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার যুক্তিতর্ক শুনানিতে অংশ নিতে আদালতে হাজির হয়েছেন।  

২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আরও বেশ কয়েকটি দুর্নীতির মামলা বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন।

প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো নোটিসে বলা হয়, “আপনি বেগম খালেদা জিয়া এবং তার পুত্রদের সম্পর্কে যে অভিযোগ এনেছেন তা সাজানো বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিদ্বেষমূলক। বাংলাদেশের নির্দোষ ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি সম্পন্ন সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা হিসেবে বেগম খালেদা জিয়ার সুনাম বিনষ্ট করার হীন উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে আপনি এসব অভিযোগ এনেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের কারণে খালেদার জিয়ার ‘অপূরণীয় লোকসান ও ক্ষতি’ হয়েছে দাবি করে নোটিসে বলা হয়, “আমরা আপনাকে বেগম খালেদা জিয়ার নিকট নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করার আহ্বান জানাচ্ছি।”

খালেদার আইনজীবী বলেছেন, নোটিসপ্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে সব জাতীয় দৈনিকের প্রথম পৃষ্ঠায়, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, অনলাইন সংবাদপত্র এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়টি ‘যথাযথভাবে প্রকাশ ও প্রচার’ করতে হবে।

“অন্যথায় আপনার (প্রধানমন্ত্রী) বিদ্বেষপূর্ণ, মানহানিকর এবং কপট ও কুটিল বিবৃতির কারণে আপনার বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ আদায়ের নিমিত্তে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমাদের ওপরে নির্দেশ রয়েছে।”

নয়া পল্টনে বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে ওই নোটিস সাংবাদিকদের দেখানো হয়। মির্জা ফখরুল বলেন, “প্রধানমন্ত্রী যেসব অভিযোগ করেছেন এর কোনো সত্যতা নেই, কোনো অস্তিত্বই নেই। আজকে একটা নোটিস দেয়া হয়েছে, তার কথাটি আমরা জানালাম।”

অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপিকা সাহিদা রফিক, আবদুল হাই, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরফত আলী সপু, আবদুস সালাম আজাদ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।