বিভক্তির সুযোগে ভোটে যেন ষড়যন্ত্র না ঢোকে: শেখ হাসিনা

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ‘নিশ্চিত বিজয়’ যেন কোন্দলের কারণ হাতছাড়া হয়ে না যায়, সেজন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সুমন মাহবুব প্যারিস থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Dec 2017, 03:32 AM
Updated : 13 Dec 2017, 11:24 AM

প্যারিসে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনায় তিনি বলেন, “জনগণ আমাদের পক্ষে। ভোট দেবার জন্য প্রস্তুত, ভোট দেবে। কেউ যেন এখানে কোনো ষড়যন্ত্র করতে না পারে। নিজেদের মধ্যে বিভক্তি থাকলে সেখান থেকে ষড়যন্ত্র ঢুকতে পারে।”

দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার তাগিদ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রেই কিছু করতে পারবে না।”

ওয়ান প্ল্যানেট সামিট উপলক্ষে তিন দিনের এই সফরে প্রধানমন্ত্রী থাকছেন ইন্টারকন্টিনেন্টাল প্যারিস- লো গ্রান্ড হোটেলে। সেখানেই মঙ্গলবার রাতে ওই নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেন।   

তাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “সামনে ইলেকশন। ইলেকশনে আমাদের জয়ী হতে হবে। ইনশাআল্লাহ, জনগণের ভোটে আমরা জয়ী হবো। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।”

প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ও আগামী বছরের শেষে অনুষ্ঠেয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘নিশ্চিত বিজয়ের’ কথা বলেছেন।

গত সোমবার এক দলীয় সভায় তিনি বলেন, “আগামী নির্বাচন নিয়ে আমি জরিপ করেছি। দলকে জানাতে যে, আমার জরিপের রেজাল্ট এত ভালো আসছে যে, আজকে যদি নির্বাচন হয়, তাহলে বোঝা যাবে আগের চেয়েও বেশি ভোট পাবে আওয়ামী লীগ। ২০০৮ সালের চেয়েও বিপুল, ল্যান্ড স্লাইড পাবে আওয়ামী লীগ।”

প্যারিসের গণসংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ইলেকশন খুব কাছে। নির্বাচন কমিশন ঘোষণা দিয়েছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ইলেকশন। নির্বাচনের তিন মাস আগে থেকে প্রচার শুরু হয়ে যায়। হাতে আর আট-নয় মাস সময় আছে। আমাদের উন্নয়নের কাজগুলো খুব দ্রুত করতে চাচ্ছি। উন্নয়নের ছোঁয়াটা সাধারণ মানুষের কাছে যেন পৌছায়।”

বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দিকে ইংগিত করে তিনি বলেন, অতীতে যারা বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল, তারা আবারও ক্ষমতাসীন হলে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে।

“দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সৃষ্টিকারীরা যেন আর ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে না পারে। এ ব্যাপারে প্রত্যেককে সজাগ থাকতে হবে। তাদের এই মানুষ খুন করা থেকে শুরু করে লুটপাট, দুর্নীতির বিষয়ে মানুষকে সজাগ করতে হবে।”

২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি সরকারের সময়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর ‘রাজনৈতিক নিপীড়নের’ কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “তারা আসা মানেই দেশের মানুষের জন্য বিড়ম্বনা ঘটা, মানুষ খুন করা, আবার পুড়িয়ে মানুষ মারা।”

নির্বাচনের আগে এই সময়ে আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী করার ওপর জোর দেন দলীয় সভানেত্রী।

তিনি বলেন, “যারা দলের জন্য এতটুকু ত্যাগ স্বীকার করতে পারে না, তারা আবার নেতৃত্ব দেবে কী?... সবাই বসে আলোচনার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”

এর আগে শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে মিলনায়তনের দুদিক থেকে ‘জয় বাংলা’ ও ‘শেখ হাসিনা’ স্লোগান দিতে থাকেন ফ্রান্স আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ এ সংবর্ধনার আয়োজন করলেও অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেন।

শেখ হাসিনা মঞ্চে আসন নেওয়ার পর পর ইমতিয়াজ হোসেন বক্তব্যের জন্য সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করেন।

শেখ হাসিনা পোডিয়ামে দাঁড়ানোর পর উপস্থিত নেতা-কর্মীরা স্লোগান দিতে থাকলে প্রধানমন্ত্রী প্রায় সাত মিনিট কথা না বলে পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে থাকেন।

পরে তিনি বলেন, “স্লোগান দিয়ে মন ভরছে তো? নাকি আরো দিতে হবে?”

উপস্থিত নেতা-কর্মীরা কিছুটা থেমে আবার স্লোগান দিতে শুরু করলে শেখ হাসিনা হাসতে হাসতে বলেন, “আমি জিজ্ঞেস করলাম মর ভরেছে কি না। ভরেনি এখনো?”

পরে ভাষণে তিনি বলেন, স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে যাকে নেতৃত্ব দেওয়া হবে, তাকে মেনে নিতে হবে সবাইকে।

“দলে বিভক্তি থাকলে শুধু স্লোগানই হয়, দলের কোনো কাজ হয় না।”

প্রবাসী বাংলাদেশীদেরও তাদের আচরণের ক্ষেত্রে সংযত থাকার আহ্বান জানান বাংলাদেশের সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, “একটা বিষয় লক্ষ্য রাখবেন, সেটা হল দেশের সম্মান। এই সম্মান যেন কারও আচরণে ক্ষুণ্ন না হয়। এ বিষয়টার দিকে সকলেই অত্যন্ত সজাগ থাকবেন, নজর রাখবেন। এটুকুই আমার অনুরোধ থাকবে।”

প্রতিবেশী মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট না করে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের উদ্যোগের কথাও প্রধানমন্ত্রী এ অনুষ্ঠানে বলেন।

“যেহেতু আমাদের একেবারে প্রতিবেশী, তাদের সঙ্গে আমাদের সর্ম্পক নষ্ট হবে না। কিন্তু এই সমস্যাটা তাদের সৃষ্টি করা। এই সমস্যা তাদের বন্ধ করতে হবে এবং তাদের দেশের নাগরিকদের তাদের ফেরত নিতে হবে।”

এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন পাওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “প্রত্যেকের সমর্থন আমরা পেয়েছি।…সকল রাষ্ট্র যেভাবে বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়েছে…। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা সমর্থন পেয়েছি সারা বিশ্বের মানুষের। সব দেশের সরকারের না, কিন্তু সারা বিশ্বের মানুষের সমর্থন পেয়েছি আমরা। আর এই ঘটনায় (রোহিঙ্গা সঙ্কট) পৃথিবীর প্রায় সকল দেশই বাংলাদেশকে সমর্থন দিচ্ছে।”

সোমবার প্যারিসে পৌঁছানোর পর প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার সকালে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। দুপুরে ফরাসি প্রেসিডেন্টের দেওয়া মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন এবং বিকালে ‘ওয়ান প্ল্যানেট সামিটে’ যোগ দেন।

বুধবার ব্যবসায়ীদের নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। এদিনই রওনা হয়ে বৃহস্পতিবার তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।