জেরুজালেম: সরকারকে আরো ‘শক্ত’ দেখতে চান মওদুদ

জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতির ঘটনায় সরকারকে আরো ‘শক্ত ভাষায়’ প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Dec 2017, 12:21 PM
Updated : 8 Dec 2017, 01:55 PM

শুক্রবার দুপুরে রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “আজকে পত্রিকায় দেখলাম বর্তমান সরকার একটা বক্তব্য দিয়েছেন- খুব... মানে এদিক আছে, ঠিক আছে… কনডেম করেছেন। কিন্তু না, বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ সরকারকে একটি অত্যন্ত শক্ত অবস্থান গ্রহণ করতে হবে; এবং অত্যন্ত পরিষ্কার ভাষায় বলতে হবে।

“সে যতবড় রাষ্ট্রই হউক না কেন, জেরুজালেমকে ইজরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া আমরা মানি না, বাংলাদেশ মানে না। এটা আমরা গ্রহণ করি না, এটাকে প্রত্যাহার করতে হবে। এই কথাগুলো বর্তমান সরকারকে স্পষ্ট করে বলতে হবে, আরো জোরে-সোরে বলতে হবে।”

ফ্রান্স, তুরস্ক, সৌদি আরবসহ অনেক মিত্র দেশের আহ্বান উপেক্ষা করে গত বুধবার জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড। ১৯৪৮ সালে ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পর প্রথম দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রই জেরুজালেমকে তাদের রাজধানীর স্বীকৃতি দিল।

জেরুজালেম মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইহুদি- সব ধর্মের অনুসারীদের কাছেই পবিত্র নগরী। ইসরায়েল বরাবরই জেরুজালেমকে তাদের রাজধানী বলে দাবি করে আসছে। অন্যদিকে পূর্ব জেরুজালেমকে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী করতে চান ফিলিস্তিনের নেতারা।

ইতোমধ্যে ট্রাম্পের এই স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যান করেছে আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্র, ইউরোপ ও জাতিসংঘ। এই স্বীকৃতি গ্রহণযোগ্য নয় বলে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।

জাতীয় প্রেস ক্লাবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভা থেকে বিএনপির পক্ষ থেকে জেরুজালেমকে ইজরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতির নিন্দা ও প্রতিবাদের কথা জানান দলটির নেতা মওদুদ আহমেদ।

তিনি বলেন, ফিলিস্তিনে শান্তির যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, জেরুজালেমকে রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।

‘রাজনীতি একটি গতিশীল বিজ্ঞান’

আসছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের প্রয়োজনীয়তা নাকচ করে দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদ।

তিনি বলেন, “রাজনীতি একটি গতিশীল বিজ্ঞান। রাজনীতির গতিশীলতা এমন একটা পর্যায়ে যাবে, তখন আপনারা সংলাপের আয়োজন করতে বাধ্য হবেন।

“আর যদি না করেন, তাহলে এর উত্তর রাজপথ থেকে আপনারা পাবেন; এবং সেই উত্তর- তখন আন্দোলনের মাধ্যমে সেই দাবিটা আদায় করবে বাংলাদেশের মানুষ।”

কম্বোডিয়া সফর নিয়ে বৃহ্স্পতিবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপিকে ভোটে আনতে দলটির নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে কোনো ধরনের সংলাপের সম্ভাবনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান সাংবাদিকরা।

জবাবে গত নির্বাচনের আগে বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিয়ে যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল- সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এবার আর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে না।

“বিএনপি নাকে খত দিয়ে নির্বাচনে আসবে। এবার আর তারা ভুল করবে না।”

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের এই ভাষা ‘অপ্রত্যাশিত’ মন্তব্য করে মওদুদ বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনে আমার মনে হয়েছে যে, বাংলাদেশে তিনি আবার ওই ২০১৪ সালের মতো আরেকটি নির্বাচন করে ক্ষমতায় থাকতে চান। আরেকটু বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখব, বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকারের আর দরকার নেই, ভোট কেন্দ্রে আসার দরকার নাই।

“ভোটারবিহীন আরেক নির্বাচন করে ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসার তাদের যে পরিকল্পনা রয়েছে, সেই পরিকল্পনার বর্হিপ্রকাশ ঘটিয়েছেন তিনি গতকাল তার বক্তব্যে। এই নির্বাচনে যদি সকলের অংশগ্রহণ আর প্রয়োজন নাই, সেজন্য আর কোনো সংলাপেরও প্রয়োজন নাই।”

মানবাধিকার পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব আসম মোস্তফা কামালের পরিচালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, নির্বাহী কমিটির সদস্য খালেদা ইয়াসমীন, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ এবং কল্যাণ পার্টির সহসভাপতি শাহিদুর রহমান তামান্না বক্তব্য রাখেন।