এই দাম্ভিকতা দিয়ে দেশ চালানো যাবে না: ফখরুল

‘বিএনপি নাকে খত দিয়ে আগামী নির্বাচনে আসবে’-প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে দাম্ভিকতা আখ্যায়িত করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই আচরণ দিয়ে ভবিষ্যতে দেশ শাসন করা যাবে না।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2017, 03:43 PM
Updated : 7 Dec 2017, 04:10 PM

সব দলকে নির্বাচনে আনতে সরকারই ‘বাধ্য হবে’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বিকালে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার পর রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে এই প্রতিক্রিয়া জানান মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, “নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া একটি রাজনৈতিক দলের অধিকার, এটি কারো পৈত্রিক সম্পত্তি নয়। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষিতে নাকে খত দিয়ে বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই উঠতে পারে না।

“বরঞ্চ বর্তমানে যারা সরকারে আছেন, তাদের বাধ্য হতে হবে সব রাজনৈতিক দলগুলো যেন নির্বাচনে আসে তার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করতে। এটা শুধু বিএনপির কথা নয়, এটা সমগ্র দেশের জনগণের কথা।”

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি এখন নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনের দাবি করছে। এ বিষয়ে সমঝোতার জন্য আলোচনায় বসতে দলটির নেতারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এলেও তাতে সাড়া দিচ্ছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

দলটির নেতারা বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে।

এই প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক কম্বোডিয়া সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে এলে এ বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা।

জবাবে আলোচনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “বিএনপি নাকে খত দিয়ে আগামী নির্বাচনে আসবে।”

প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকের সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের কাছ থেকে এই প্রশ্ন এসেছে যে, এটা (নির্বাচন) সবচেয়ে বড় সংকট হয়ে দেখা দিয়েছে। সব দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। সেটা নিরপেক্ষ একটা সরকারের অধীনে নির্বাচন করা- এই প্রশ্নটা জাতির সামনে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

“এখন ঔদ্ধত্য ও দাম্ভিকতা- এটা দিয়ে তো ভবিষ্যতে দেশ শাসন চলবে না। দেশকে এগিয়ে নেওয়া যাবে না, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া যাবে না।”

বিএনপি সংঘাত এড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে ‘ক্ষমতা হস্তান্তর চাইছে’ জানিয়ে তিনি বলেন, “যদি প্রধানমন্ত্রী দায়িত্বশীল নেত্রী হন, তাহলে অবশ্যই তাকে এদিকেই চিন্তা করতে হবে এবং জনগণের মনের আশা-আকাঙ্ক্ষাটা বুঝতে হবে। সেভাবেই তাকে কাজ করতে হবে।”

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনারই দেশে নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টির দায়িত্ব বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বিএনপি চেয়ারপারসনকে ক্ষমা চাইতে হবে-প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, “দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপারে তিনি যেটা বলেছেন এটা জনগণের কাছে হাস্যকর মনে হবে। গত ৮-৯ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর থেকে এবং দ্বিতীয় দফায় ২০১৪ সালে বিনা নির্বাচনে সরকার গঠন করার পরে জনগণের উপরে তারা যে অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়ন করেছে, করে চলেছে এবং সম্পূর্ণ গণবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে ক্ষমা কাকে চাইতে হবে সেটা জনগণই বিচার করবে।

“সেজন্য দেশনেত্রী আগেই বলে দিয়েছেন যে, তার উপরে, তার দলের উপরে এবং দেশের মানুষের উপরে যে নির্যাতন চলছে, তিনি তার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।”

জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য দিতে গিয়ে গত ১১ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া বলেন, সরকার জিয়া পরিবারের সঙ্গে বৈরী আচরণ করলেও তিনি শেখ হাসিনাকে ‘ক্ষমা করে দিয়েছেন’, প্রতিহিংসামূলক কিছু করবেন না।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুল কাইয়ুম উপস্থিত ছিলেন।