রংপুরের মাঠ সমান হয়নি: বিএনপি

রংপুর সিটি নির্বাচনের প্রচারণায় ‘সকল প্রার্থীর মাঠ সমতল হয়নি’ বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2017, 08:16 AM
Updated : 7 Dec 2017, 08:43 AM

বৃহস্পতিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, “রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বার বার আচরণ বিধি লঙ্ঘন করলেও নির্বাচন কমিশন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। কিন্তু বিএনপির যিনি প্রার্থী, ধানের শীষের যিনি প্রার্থী তাকে হরহামেশা কমিশন থেকে সর্তক করা হচ্ছে।

“আমরা মনে করি, রংপুরে নির্বাচনী মাঠে প্রচারণায় সকল প্রার্থীর সমান সুযোগ তৈরি হয়নি; অর্থাৎ মাঠ সমতল হয়নি সেখানে। নির্বাচন কমিশন এখনো অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ সেখানে সৃষ্টি করতে পারেনি।”

ভোটাররা ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবে এখনো ভয়ভীতির মধ্যে রয়েছে অভিযোগ করে এমন অবস্থায় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়ার ব্যাপারে সন্দিহান রিজভী নির্বাচনের নিরপেক্ষ পরিবেশ তৈরি ও ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েনের দাবি জানান।

আগামী ২১ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট হওয়ার কথা রয়েছে। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সরফুদ্দীন আহমেদ ঝন্টু ও বিএনপির কাওসার জামান বাবলা ছাড়াও আরও পাঁচজন প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

মেয়র পদের অন্য প্রার্থীরা হলেন, জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এটিএম গোলাম মোস্তফা বাবু, বাসদের আবদুস সালাম কুদ্দুস, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির সেলিম আখতার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ।

এসব প্রার্থীরা ক্ষমতাসীন দল কর্মীদের বিরুদ্ধে পুরো নির্বাচনী এলাকায় ভয়ভীতি ছড়ানোর অভিযোগ করেছেন বলে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে দাবি করেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রিজভী।

তিনি বলেন, “এমনকি ক্ষমতাসীনদের প্রভাবে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীকে শুরু থেকে যেভাবে হয়রানি করা হচ্ছে, তাও নজিরবিহীন। মানে ক্ষমতাসীনরা প্রশাসন ও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ওপর যে প্রভাব বিস্তার করেছেন, এতে তারা (প্রশাসন ও ইসির কর্মকর্তারা) বিএনপির প্রার্থীকে ক্রমাগতভাবে হয়রানি করছে।

“আমরা স্পষ্টভাষায় ইসিকে বলতে চাই, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে পেছনের দরজা দিয়ে জেতানোর কোনো চেষ্টা করলে জনগণ সেটির উপযুক্ত জবাব দেবে।”

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে কমিশনের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের ‘মানসিকতা স্বাধীন না হলে কমিশনের আইনি স্বাধীনতা কোনো কাজে আসবে না’ বলেও মন্তব্য করেন রিজভী

‘দুদক রাবার স্ট্যাম্প’

বর্তমান দুর্নীতি দমন কমিশনকে সরকারের ‘রাবার স্ট্যাম্প’ প্রতিষ্ঠান করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রুহুল কবির রিজভী।

বেসিক ব্যাংকে ঋণ কেলেঙ্কারির মূল হোতারা সংস্থাটির ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে দাবি করে তিনি বলেন, “বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি নিয়ে এখন পর্যন্ত ৫৭টি মামলা হলেও মূল হোতারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে বার বার ব্যাংক লুটপাটে জনগণের অর্থ আত্মসাতের কথা জাতির সামনে তুলে ধরলেও অত্যুগ্র ক্ষমতার প্রভাবে সরকার বরাবরই তাতে কর্ণপাত করেনি।”

উচ্চ আদালতের নির্দেশে বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি নিয়ে নতুন করে দুদকের তদন্ত শুরু হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, “এতে প্রতীয়মান হয় যে, আমরা বার বার যে অভিযোগ করেছিলাম তা ছিল তথ্যমূলক।”

তবে নতুন তদন্তেও কেলেঙ্কারির মূল হোতাদের ধরা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, “এই যে এখন দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করছেন, দুদক তো আসলে তাদেরই রাবার স্ট্যাম্প। ক্ষমতাসীন দলেরই অবৈধ কর্মকাণ্ড বৈধ করার একটি সফেস্টিকেটেড মেশিন।

“সুতরাং এই দুদক কতটুক তদন্ত করবে, যারা ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের সাথে জড়িত, যারা ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ স্থানীয় ব্যক্তি বা তাদের আত্বীয় স্বজন- এটা জনগনের মধ্যে একটা বিরাট প্রশ্ন রয়েছে।”

‘গুম’ এর ঘটনার সর্বশেষ শিকার সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামানের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, “সারাদেশে নিখোঁজ বেআইনি গুম আতঙ্ক থামছেই না। সমাজের সকল স্তরের মানুষ আজ কেউই নিরাপদ নয়। দেশ এখন হাল ছাড়া জাহাজের মতোই লক্ষ্যভ্রষ্ট।”

গুমের পেছনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জড়িত বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “আমাদের বক্তব্য হল- এই যে মানুষ গুম হচ্ছে, যদি যে অপরাধ করে থাকেন, অপরাধী হন তাহলে অপরাধের তো প্রকাশ্য আইনি প্রক্রিয়া আছে। সেই আইনি প্রক্রিয়ায় নেওয়া হচ্ছে না কেন? গুমের যে ধরন... যারা যাচ্ছেন, তুলে নিয়ে আসছেন, তারা বলছেন তারা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোক।

“তাদের (নিখোঁজ) পরিবারের লোকরাও তাদেরকে প্রশ্ন করেন, সেটার কোনো উত্তর দেন না, তাদের যেসব দরকার ল্যাপটপ-কম্পিউটার নিয়ে যান। সে লোক যদি অপরাধী হয়ে থাকে তাহলে গুম করছেন কেন, লুকিয়ে রাখছেন কেন? অপরাধ প্রকাশ্যে জানান দিন। জনগণ বিশ্বাস করে যে, সরকারের অশুভ ইচ্ছাপূরণে এই বেআইনি গুমগুলো করা হচ্ছে।”

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, সহসভাপতি নবীউল্লাহ নবী, আরিফুল ইসলাম আরিফ, সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, যুগ্ম সম্পাদক শেখ রবিউল আলম রবী, এম এ হান্নান, উত্তরের প্রচার সম্পাদক ভিপি হানিফ, যুবদল সভাপতি সাইফুল ইসলাম নিরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও স্বেচ্ছাসেবক দল মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামসহ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাকে মিথ্যা দাবি করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব এর নিন্দা, প্রতিবাদ ও অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, আবদুল খায়ের ভুঁইয়া, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মীর সরফত আলী সপু, আবদুস সালাম আজাদ, আবদুল আউয়াল খান এবং মুনির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।