জামিন পেলেন খালেদা

জিয়া এতিমখানা ও দাতব্য দুর্নীতি মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Dec 2017, 05:53 AM
Updated : 5 Dec 2017, 09:08 AM

এ দুই মামলায় যুক্ততর্ক শুনানি শুরুর আদেশ প্রত্যাহার করে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনে বাকি বক্তব্য উপস্থাপনেরও সুযোগ দিয়েছে আদালত।

মঙ্গলবার সকালে খালেদা জিয়ার চার আবেদনের শুনানি করে ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামান এই আদেশ দেন।

এর পরপরই জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে সপ্তম দিনের বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। 

এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুদক। তদন্ত শেষে ২০০৯ সালের ৫ অগাস্ট তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে অভিযোগপত্র দেন। তার পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ অভিযোগ গঠন করে খালেদাসহ ছয় আসামির বিচার শুরু করেন।

আর জিয়া দাতব্য ট্রাস্টের নামে আসা তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১০ সালের ৮ অগাস্ট তেজগাঁও থানায় অন্য মামলাটি হয়। তদন্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চার জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। পরের বছরের ১৯ মার্চ শুরু হয় বিচার।

এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৩০ নভেম্বর আত্মপক্ষ সমর্থনে সপ্তম দিনের মত বক্তব্য দেওয়া কথা ছিল খালেদা জিয়ার। কিন্তু তিনি নিজে না গিয়ে হরতালে নিরপত্তার কারণ দেখিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে সময়ের আবেদন পাঠান। 

ওই আবেদন নাকচ করে দুই মামলাতেই সেদিন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন বিচারক আখতারুজ্জামান।  সেই সঙ্গে আত্মপক্ষ সমর্থনে শুনানি সেখানেই শেষ করে বিচারিক কার্যক্রমের পরবর্তী ধাপে যুক্তিতর্ক শুনানির জন্য ৫, ৬ ও ৭ ডিসেম্বর দিন ঠিক করে দেন।

খালেদার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া সেদিন বলেছিলেন, হরতাল শেষে দুপুরের পর খালেদা জিয়ার আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু আদালত পরোয়ানা জারি করায় তা সম্ভব হয়নি।

মঙ্গলবার সকালে আইনজীবীরা খালেদার আত্মসমর্পণ, জামিন এবং যুক্তিতর্ক শুরু ও শুনানির জন্য পর পর তিন দিন তারিখ রাখার আদেশ পরিবর্তনের বিষয়ে চারটি আবেদন জমা দেন।   

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খালেদা জিয়া বকশীবাজারে কারা অধিদপ্তরের মাঠে বিশেষ জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাসে পৌঁছালে সেসব আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হয়।  

আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন ও মাহবুব উদ্দিন খোকন।

অন্যদিকে দুদকের পক্ষে মোশাররফ হোসেন কাজল যুক্তিতর্ক শুরুর আবেদন জানিয়ে বলেন, খালেদা জিয়া জামিনের শর্ত ভঙ্গ করেছেন। সুতরাং আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ তার আর নেই।

শুনানি শেষে বিচারক খালেদার আবেদন মঞ্জুর করেন এবং আত্মপক্ষ সমর্থনে বাকি বক্তব্য উপস্থাপনের অনুমতি দেন।   

এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের প্রথম দিন ১৯ অক্টোবর খালেদা জিয়া দাবি করেছিলেন, এতিমদের জন্য আসা একটি টাকাও তছরুপ বা অপচয় করা হয়নি, তা ব্যাংকে গচ্ছিত রয়েছে। ২৬ অক্টোবর তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে এ মামলা ‘ভুয়া, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’।

২ নভেম্বর আত্মপক্ষ সমর্থন করে তৃতীয় দিনে খালেদা বলেন, রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে তাকে ‘সরাতে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার নীলনকশা’ বাস্তবায়ন করছে ক্ষমতাসীনরা। আর ১১ নভেম্বর বলেন, বাংলাদেশে বিচারকরা স্বাধীনভাবে আইন মেনে বিচার করতে পারেন কি না, তার এ মামলার রায়েই তার প্রমাণ আসবে।

দেশে বিচার ব্যবস্থার বর্তমান পরিস্থিতিতে ন্যায়বিচার পাবেন কি না- তা নিয়ে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন ১৬ নভেম্বর। সর্বশেষ ২৩ নভেম্বর তিনি এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশীদের দুদকে নিয়োগ ও পদোন্নতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

ওইদিনই জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলায় খালেদার আত্মপক্ষ সমর্থন শুরু হয়। প্রথম দিনের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি নিজেকে ‘সম্পূর্ণ নির্দোষ’ দাবি করেন।