রোহিঙ্গাদের কোথায় কার কাছে দিচ্ছেন: ফখরুল

নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে দেশটির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ভিত্তিতে সম্মতিপত্র স্বাক্ষর হওয়ায় অসন্তোষ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2017, 02:55 PM
Updated : 26 Nov 2017, 02:55 PM

রোহিঙ্গাদের এখনই রাখাইনে ফেরত যাওয়ার মতো অবস্থা নেই বলে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর প্রধানের বক্তব্য উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, “এরা (রোহিঙ্গারা) কোথায় যাবে, কোথায় গিয়ে বাস করবে? তাদের ঘর নেই, বাড়ি নেই, সব পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে, তাদের খাওয়ার কোনো সংস্থান নেই, বাঁচার কোনো সংস্থান নেই।

“তাদের কোথায় কার কাছে দিচ্ছেন? বাঘের কাছ থেকে তারা প্রাণভয়ে এসেছে সেই বাঘের মুখে আপনি তাদের দিয়ে দিচ্ছেন। আর আপনাকে আপনার দলের লোকেরা মাদার অব হিউম্যানিটি বলে ঘোষণা দিচ্ছেন। এই যে ধোঁকাবাজি রাজনীতি চলছে।”

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (ফাইল ছবি)

রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে অগ্রগতি না হওয়ায় এতদিন সরকারের সমালোচনা করে আসছিল বিএনপি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারে ওই সম্মতিপত্রে সই করে দেশে ফিরে এ বিষয়ে জানানোর পরদিন রোববার এই প্রতিক্রিয়া এলো বিএনপি মহাসচিবের কাছ থেকে।

গত অগাস্টের শেষ দিকে রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযানের মুখে বাংলাদেশ অভিমুখে রোহিঙ্গাদের ঢল নামলে সংকটের সমাধানে কূটনৈতিকভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সম্পৃক্তের চেষ্টার পাশাপাশি মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শুরু করে বাংলাদেশ। 

মিয়ানমারের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সম্মতিপত্র অনুযায়ী, ১৯৯২ সালে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত যৌথ ঘোষণার আলোকে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া নিজ দেশের অধিবাসীদের ফেরত নেবে মিয়ানমার।

রাখাইনে দীর্ঘদিন ধরে জাতিগত নিপীড়নের শিকার হয়ে বিভিন্ন সময়ে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের মধ্যে প্রায় সাত লাখই এসেছে এই সময়ে।  

তাদের ফেরত পাঠাতে সম্মতিপত্র সই হওয়াকে ‘বিরাট সাফল্য’ অভিধা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তবে মির্জা ফখরুল বলছেন, “কী এমন কম্পালশন হলো যে, আপনি আপনার বাংলাদেশের স্বার্থটাকে বুঝে না নিয়ে মিয়ানমারের স্বার্থের কাছে নিজেকে বিক্রি করে দিলেন? চাপটা কোথায় হল? আসল ঘটনাটা কোথায়?

“অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে, লজ্জার সঙ্গে আমাদের বলতে হয় এই সরকারের কোনো রকমের যে আত্মসম্মানবোধ, সেই আত্মসম্মানবোধ পর্যন্ত নেই।”

ওই সম্মতিপত্র সইয়ে কূটনৈতিক অর্জনটা কী-প্রশ্ন তুলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “সমঝোতা চুক্তিতে (চুক্তির অংশ বিশেষ পড়ে) আপনি (সরকার) স্বীকার করে নিচ্ছেন, মিয়ানমার যে দাবি করছে যে, টেরোরিস্ট অ্যাটাক হয়েছে বলে তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তাদের সেই বক্তব্য বিলং করা হয়েছে, টেরোরিস্ট অ্যাটাক হয়েছে বলেই তাদের গণহত্যা করা হয়েছে।

“একবারের জন্য আপনি এখানে (চুক্তিতে) বলেননি গণহত্যা হয়েছে, একবারের জন্য আপনি এখানে (চুক্তিতে) বলেননি যে তাদের এথনিক ক্লিনজিং হচ্ছে, তাদেরকে জাতিগতভাবে নিধন করা হচ্ছে। মেনে নিয়েছেন যা যা বলেছে মিয়ানমার, তাই তাই মেনে নিয়েছেন। এর মধ্যে পুরো চুক্তিটা পড়লে দেখবেন পুরো বিষয়টা তাই।”

জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকাকালে ১৯৭৮ সালে এবং ১৯৯২ সালে খালেদা জিয়া নেতৃত্বাধীন সরকার আমলে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন দ্রুততার সাথে হয়েছিল বলে দাবি করেন মির্জা ফখরুল।

কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সন্ধ্যায় এই আলোচনা সভা হয়।

আলোচনা সভার পর তারেকের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশুদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন বিএনপি মহাসচিব।