৩৭ বছর জিম্বাবুয়ে শাসন করে আসা মুগাবের পতনের পরদিন বুধবার ঢাকায় এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘জোর করে’ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে।
টানা নয় বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের ‘অসম্মানজনক বিদায়ের’ হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে আছেন বিএনপি নেতা মওদুদ আহমেদ।
তার মধ্যেই রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে ছাত্রদলের সভায় আওয়ামী লীগকে ‘জোর করে’ নামানোর কথা বললেন ফখরুল।
তিনি বলেন, “জিম্বাবুয়ের স্বৈরাচার মুগাবের পতন। পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে।
“সেই খবর পত্রিকায় ছোট্ট। কারণ এই যে স্বৈরাচার যারা জাতির বুকে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে আছে, এই খবর দিলে সিংহাসন… সুতরাং এই খবর বড় করে দেওয়া যাবে না।”
এই ঘটনাকে গণমাধ্যমের উপর ‘সরকারের নিয়ন্ত্রণের’ নজির হিসেবে তুলে ধরে তিনি বলেন, রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই এখন নিয়ন্ত্রিত।
“প্রধান বিচারপতি, তাকে দেশ থেকে এক মাসের ছুটিতে পাঠানো হল জোর করে। সেই নাটক কী হয়েছে, আমরা সবাই জানি। কোথায় যাবেন?”
আওয়ামী লীগ জগদ্দল পাথরের মতো চেপে আছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এই জগদ্দল পাথরকে আমরা যদি সরাতে না পারি, আমাদের জাতীয় অস্তিত্ব থাকবে না। আমরা একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হব।
“স্বাভাবিক সাধারণ পদ্ধতিতে আমরা এই পাথর সরাতে পারব, তা মনে হয় না। একে সরাতে হলে গেলে আপনাদের ঠিকই লোহার হাতুড়ি লাগবে। জোর করে তাদের সরাতে হবে, তাছাড়া এমনিতে যাবে না।”
গত ছয় বছরে দুই বার সরকার পতনের আন্দোলনে নেমে ব্যর্থ বিএনপির মহাসচিব সরকার হটানোর নতুন আন্দোলনে নামতে ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
“আমাদেরকে আজকে জেগে উঠতে হবে। জেগে উঠবেন আপনারা (ছাত্র-ছাত্রীরা)। আমরা বয়োবৃদ্ধ, আমরা কথা বলতে পারি, কিন্তু কাজের সেই শক্তি আমাদের নেই। আপনারা এগিয়ে আসুন, সংগঠিত হন, সমস্ত বাধা সরে যাবে।”
বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্রদলের এই আলোচনা সভা হয়।
বর্ণিল এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়ে দাঁড়িয়ে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানকে গ্রেপ্তারের পর মিছিল বা প্রতিবাদ সভা না হওয়ায় নিজের দুঃখের কথা প্রকাশ করলেন ফখরুল।
“আমরা মনে একটি দুঃখ আছে। এবার রাজিব রইল, ছাত্রদল রইল। আপনাদের সাধারণ সম্পাদক আকরাম গ্রেপ্তার হয়েছে, আপনারা একটা মিছিল করেননি, একটা প্রতিবাদ সভা করেননি।”
ছাত্রদল সভাপতি রাজীব আহসানের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদের পরিচালনায় এই আলোচনা সভায় সংগঠনটির সাবেক নেতা শামসুজ্জামান দুদু, আমানউল্লাহ আমান, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন, আজিজুল বারী হেলাল, শফিউল বারী বাবু, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল বক্তব্য রাখেন।
লন্ডনে অবস্থানরত দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার পরিবর্তনের আওয়াজ তোলেন বিএনপি মহাসচিব।
“তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হলে সরকার পরিবর্তন করতে হবে। আমরা যদি এই সংগ্রামে জয়ী হতে পারি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে পারি, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি। তাহলেই তারেক রহমান দেশে আসবেন, অন্যথায় নয়।”
মুদ্রা পাচার আইনে দেশের আদালতে সাজা নিয়ে বিদেশে আছেন তারেক। তার বিরুদ্ধে আরও কয়েক ডজন মামলা রয়েছে।
ব্যাংক আইন সংশোধন প্রসঙ্গে
ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের উদ্যোগের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, “এই সরকার লুটপাটের মধ্য দিয়ে আমাদের অর্থনীতিকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে।
“মজার জিনিস কী? ব্যাংকিং এর একটা আইন করেছিল পরিচালক কারা হবে? একই পরিবার থেকে কয়জন হবে। সেটা তারা (সরকার) সংশোধন করছে, একই পরিবার থেকে পরিচালক ৪ জন হবে এবং তারা ৯ বছর পরিচালক থাকতে পারবে।”
“এই ব্যাংকের মাধ্যমে লুটপাট হয়, এই ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থনীতিকে শূন্য করে ফেলা হয়,” বলেন অর্থনীতির ছাত্র ফখরুল।
তিনি বলেন, “দেখুন না, হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে নিয়েছে। এভাবে তারা মেগা লুট একটা লুটেরার বৃত্ত তৈরি করেছে।”