মওদুদ‍, তার কি সেই ক্ষমতা আছে: তোফায়েল

সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন না হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অসম্মান ও অপমানের বিদায় নিতে হবে বলে বিএনপির নেতা মওদুদ আহমেদের বক্তব্যের পাল্টায় ‘শক্তি থাকলে’ চেষ্টা করতে বলেছেন আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Nov 2017, 10:39 AM
Updated : 22 Nov 2017, 01:13 PM

বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘৭ মার্চের মহাকাব্য: বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশে ইতিহাস’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য।

তোফায়েল বলেন, “এই প্রেস ক্লাবে মওদুদ আহমদ সেদিন বলেছেন, শেখ হাসিনার জন্য নাকি দুইটা পথ খোলা আছে, কে বলতেছেন..., মওদুদ আহমদ, চিন্তা করেন? আপনারা তারে চিনেন, মওদুদ আহমদ।

“আমি তাকে অসম্মান করি না। তিনি বলেছেন, ‘সরকার আলোচনায় না বসলে টেনে হিঁচড়ে অসম্মানজনকভাবে ক্ষমতা থেকে নামানো হবে’; মওদুদ! তার কি সেই ক্ষমতা আছে? এত সহজ? এ সমস্ত অসাংবিধানিক বক্তৃতা দেওয়া.... বা অঘটনমূলক বক্তৃতা মানুষ পছন্দ করে না। আমাকেও মানুষ চিনে, মওদুদ আহমেদসহ তাদেরকেও মানুষ চিনে।”

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠায় বিএনপির দাবিতে ক্ষমতাসীনদের গা না করার মধ্যে সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় শেখ হাসিনার সামনে বিদায় নেওয়ার দুটি পথ খোলা আছে বলে মন্তব্য করেন মওদুদ আহমেদ।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেছিলেন, “একটা হল সম্মানজনকভাবে বিদায় নেওয়া। আরেকটি হল একেবারে অপমানিত-লাঞ্ছিত এবং একেবারে অসম্মানের সঙ্গে পদত্যাগ করা বা সরকার থেকে চলে যাওয়া। উনাকে এখন পছন্দ করতে হবে যে কোনটা উনি চান।

“যদি উনি সম্মানের সঙ্গে যেতে চান, তাহলে সমঝোতায় আসতে হবে। একটি সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। সেখানে আওয়ামী লীগ যদি হেরেও যায়, তবুও প্রধানমন্ত্রী সম্মানের সঙ্গে বিদায় নেবেন।”

নির্বাচনের সময় বর্তমান সরকার অন্তর্বর্তী দায়িত্ব পালন করবে জানিয়ে মওদুদের উদ্দেশে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল বলেন, “মওদুদ আহমদকে আমি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, মি. মওদুদ আহমদ, এই সরকারের অধীনেই ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারির আগে ৯০ দিনের মধ্যে যে কোনো দিন নির্বাচন হবে।

“নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবে, ক্ষমতাসীন সরকার দৈনন্দিন কাজ করবে এবং অন্তর্বতীকালীন সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। আপনার যদি শক্তি থাকে আপনি চেষ্টা করতে পারেন। এত সহজ না! এটা ঊনসত্তর না, আইয়ূবের বিরুদ্ধে আমরা সংগ্রাম করেছি। আপনারা তো চেষ্টা করেছেন।”

নির্দলীয় সরকারের অধীনে না হওয়ায় দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটানোর আন্দোলন চালিয়েও ব্যর্থ হয় বিএনপি।

মওদুদ আহমদ (ফাইল ছবি)

বিএনপি নেতারা আগামী নির্বাচনেও একই দাবি তুলে আন্দোলনের হুমকি দেওয়ার মধ্যে তোফায়েল বলেন, “২০১৪ সালের নির্বাচন বানচাল করার জন্য ২০১৩ সালে আপনারা মানুষ পুড়িয়েছেন, মানুষ মেরেছেন। ৫০০টি বুথ পুড়িয়ে দিয়েছেন, চারজন প্রিজাইডিং অফিসার ও ২৪ জন পুলিশকে হত্যা করেছেন, সফল হননি।

“আবার ২০১৫ সালে ৯৩ দিনের হরতাল-অবরোধে আপনাদের নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন, শেখ হাসিনাকে না সরিয়ে ঘরে যাবেন না। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছে এখনও, আপনার নেত্রী কোর্টে গিয়ে আত্মসমর্থন করে ঘরে ফিরে গিয়েছিলেন।”

মওদুদের উদ্দেশে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “মনে রাখবেন বাংলার মানুষ স্বাধীনতার পক্ষে, ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত দিয়ে এই স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করেছি। আপনারা জামায়াতকে নিয়ে ক্ষমতায় যাবেন, আবার ধ্বংস-যজ্ঞ চালাবেন, এটা বাংলাদেশে আর কোনো দিন হবে না জনাব মওদুদ আহমেদ, এই কথা আপনি মনে রাখবেন।”

সংবিধান অনুসারে নির্বাচন হবে জানিয়ে কয়েকটি দেশের উদাহরণও তুলে ধরেন মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

“পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ- ভারত, যুক্তরাজ্য, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রলিয়াসহ প্রায় সব দেশে ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনকালীন সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে; এবং নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করে। বাংলাদেশে তাই হবে।”

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ধ্বংস করতে পাকিস্তানের প্রথম চেষ্টার কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগের এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, “জিয়াউর রহমানের সময়ও এই ভাষণ নিষিদ্ধ ছিল। সেই সময় ৭ মার্চ বা ১৫ অগাস্ট এই ভাষণ বাজালে মাইক কেড়ে নেওয়া হত।

“এরপর খালেদা জিয়া আসল, ১৯৯৩ সালে সংসদের বলেছিলাম, এই ভাষণ টেলিভিশনে প্রচার করা হোক; আমার প্রস্তাব প্রত্যাখান করা হয়। আজকে এই ভাষণ আন্তর্জাতিক বিশ্বে শ্রেষ্ঠ ভাষণ।”

সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ৭১ এর আয়োজনে সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক, পিকেএসএফর চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জামান এবং স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন।

ফোরামের সহ-সভাপতি নুরুল আলমের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের মহাসচিব ও সাংবাদিক হারুন হাবীব।