‘হাটে হাঁড়ি ভেঙেছেন’ ফেনীর আ. লীগ নেতা: রিজভী

খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার পেছনে সংসদ সদস্য নিজাম হাজারী রয়েছে দাবি করে ফেনীর আওয়ামী লীগ নেতা আজহারুল হক আরজুর বক্তব্যকে ‘হাটে হাঁড়ি ভাঙার’ মতো বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Nov 2017, 07:12 AM
Updated : 22 Nov 2017, 07:12 AM

বুধবার দুপুরে রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “ফেনী জেলার নেতারা সংবাদ সম্মেলন করে গতকাল (মঙ্গলবার) হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিয়েছেন।

“পুরো ঘটনার নেপথ্য নায়ক আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নিজাম হাজারী এ ব্যাপারে আর কোনো সংশয় থাকার কথা নয়। জনগণ এটা আগেই বুঝেছে, সবাই বুঝেছে। এখন তারা নিজেরাই বলছে।”

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ত্রাণ দিতে কক্সবাজারের উখিয়ায় যাওয়ার সময় গত ২৮ অক্টোবর ফেনী জেলার সীমানার শুরুতে মোহাম্মদ আলী বাজারে এবং ফেরার পথে ৩১ অক্টোবর ফেনীর মহিপাল অতিক্রম করার সময় খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা হয়।

যাওয়ার সময় খালেদার বহরের এবং গণমাধ্যমের প্রায় ৩০টি গাড়ি ভাংচুরের শিকার হয়। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরও কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী মারধরের শিকার হন। আর ফেরার পথে গাড়িবহরের পাশে দুটি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

নিজাম হাজারীর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের ‘প্রতিশোধ হিসেবেই’ ফেনী-২ আসনের এই সংসদ সদস্য ‘ক্যাডার দিয়ে গাড়িবহরে হামলা চালান’ বলে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য এম আজহারুল হক আরজু।

নিজার হাজারীর বিরুদ্ধে আরজুর এ অভিযোগের পর হামলার পরিকল্পনা আরও উপর থেকে হয়েছে বলে দাবি করেন বিএনপি নেতা রিজভী।

তিনি বলেন, “নিজাম হাজারী বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়িবহরে যে হামলা চালিয়েছে, সেটি আরো উপর থেকে অর্থাৎ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে পরিকল্পনা করা হয়েছিল সেটা এখন একেবারেই প্রমাণিত। থলের বিড়ালকে বেশিক্ষণ আটকিয়ে রাখা যায় না, এটা বেরিয়ে পড়বে।”

বিএনপি নেতারা দুই দফা ওই হামলার জন্য ক্ষমতাসীনদের দায়ী করে এলেও সংবাদপত্রে ‘বিগ নিউজ’ পাওয়ার জন্য তা বিএনপির ‘সাজানো’ বলে সে সময় মন্তব্য করেছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

তার এ বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, “ফেনী আওয়ামী লীগের নেতাদের বক্তব্যের পর কী লজ্জ্বা পাবেন না আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতারা, যারা ঘটনা ঘটার সাথে সাথেই এটাকে চাপানোর চেষ্টা করেছেন। এখন কী উত্তর দেবেন, নিজের মুখ কী লুকিয়ে রাখতে পারবেন?”

আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নিজাম হাজারী ফেনীতে ‘সন্ত্রাসের অভ্যরণ্যে’ পরিণত করেছে বলে অভিযোগও করেন তিনি।

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের এই সংবাদ সম্মেলন থেকে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের উদ্যোগেরও সমালোচনা করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী।

আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কয়েক ব্যবসায়ীকে সুযোগ করে দিতেই ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তার। 

তিনি বলেন, “পরিচালনা পর্ষদে একই পরিবারের চার সদস্য থাকার সুযোগ তৈরি করে দিতে ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধন প্রস্তাব পাসের সুপারিশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। পরিচালক পদে থাকবেন ছয় বছরের পরিবর্তে নয় বছর। অর্থাৎ পারিবারিক লুটপাটের সুযোগ নিশ্চিত করা হচ্ছে এই আইন পাস করে যাওয়ার মধ্য দিয়ে।

“এই নতুন সিদ্ধান্তে বেসরকারি ব্যাংকে পরিবারতন্ত্র কায়েমের সুযোগ তৈরি হবে। যতই এটা হবে ততই জনগণের টাকা লুটপাটের বেশি সুযোগ সৃষ্টি হবে। জাতীয় অর্থনীতিকে ধ্বংস করতে মূলত আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কয়েক ব্যবসায়ীকে সুযোগ করে দিতেই ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করা হচ্ছে।”

গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে সরকারের প্রস্তাবিত ‘সম্প্রচার আইন-২০১৭’ প্রণয়নকে একটি ‘কালো আইন’ হিসেবে অভিহিত করে এর নিন্দা জানান রিজভী।

দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫৩তম জন্মদিন পালনকালে বরিশালের গৌরনদীসহ বিভিন্ন স্থানে দলের নেতা-কর্মীদের ওপর আওয়ামী লীগরা হামলা করে অভিযোগ এনে তার নিন্দাও জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা শামা ওবায়েদ, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, এম এ মালেক, আজিজুল বারী হেলাল, হাফেজ আবদুল মালেক এবং কাজী আবুল বাশার উপস্থিত ছিলেন।