খালেদার কথা ‘ধরেনই না’ হাসিনা

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্য ‘ধর্তব্যে নেন না’ বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Nov 2017, 12:24 PM
Updated : 15 Nov 2017, 12:57 PM

সংসদে বুধবার শেখ হাসিনা বলেছেন, “মানবিক কোনো গুণাবলী তাদের মধ্যে নেই, তার বক্তব্যকে আমি ধর্তব্যে নিই না। তাদের কথায় গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই।”

রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এই মন্তব্য আসে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার। 

বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সম্প্রতি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে গিয়ে বলেছিলেন, সরকার এই সঙ্কট মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়েছে।

সংসদের বুধবারের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি এই প্রসঙ্গটি তুলে শেখ হাসিনাকে প্রশ্ন করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “পাগলে কী না বলে, ছাগলে কী না খায়। চক্ষু থাকতে যে অন্ধ হয়, তাকে দেখাবে কে? দেখেও যে দেখতে পায় না, তাকে দেখানোর কিছু নেই।”

রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে খালেদা জিয়ার বিশাল গাড়িবহর নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তিনি সেখানে যেভাবে সাজসজ্জা নিয়ে ঢোলডগর, হাতি-ঘোড়া সব নিয়ে গেলেন, তাতে উনি দুর্গত মানুষকে দেখতে গেলেন, না কি কোনো বরযাত্রী হিসেবে নিলেন, না অন্য কোনো কারণে গেলেন, তা আমার কাছে বোধগম্য নয়।”

বিএনপি চেয়ারপারসনের এভাবে যাওয়া লোক দেখানো বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

খালেদা জিয়া (ফাইল ছবি)

“উনি মনে হয়েছে গাড়ি-টাড়ি সব কিছু দেখানো, একটি শো-ডাউন করা; এটার দিকে হয়ত তাদের বেশি দৃষ্টি ছিল। এটা বাস্তবতা যে মানবিক কারণে সহযোগিতা করার অভ্যাস তো তাদের নেই।”

“বিএনপি-জামাতের ব্যাপার হচ্ছে; তারা যতটা দেখানোর জন্য করে, আন্তরিকতার জন্য ততটা করে না। এটা সবাই জানেন ও বোঝেন।।”

রোহিঙ্গা সমস্যা সৃষ্টির জন্য খালেদা জিয়ার স্বামী সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে দায়ী করেন শেখ হাসিনা।

“রোহিঙ্গা সমস্যাটা তো তাদেরই সৃষ্টি। তার স্বামী এটা সৃষ্টি করে গেছেন। কাজেই বিএনপি-জামাতের লক্ষ্য হচ্ছে, ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করা। ঘোলা পানিতে কীভাবে মাছ শিকার করবে, এই কাজেই তারা ব্যস্ত।”

পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এবং বিএনপি-জামায়াতসহ যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসিতে দণ্ডিত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবার উসকানি দিয়ে সরকারের রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনা প্রশ্নবিদ্ধ এবং আগামী নির্বাচন বিতর্কিত করতে যাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কি না? 

এই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখানে কিছু উসকানিদাতা আছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে আমরা এ বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন। যারা এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাদের খুঁজে বের করছি।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি। প্রতিবেশী দেশের সাথে আমরা সৎভাব রাখতে চাই। আমাদের মাটি ব্যাবহার করে কোনো দেশে, কোনো রকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো, কোনো রকম উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড হতে দেব না, এটা বরদাশত করব না।”

টেকনাফের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি তার নির্বাচনী এলাকার হ্নীলা, টেকনাথ, সাবরাং, হোয়াইকং ও বাহারছড়া ইউনিয়নের জনগণের দুর্দশার কথা তুলে ধরেন।

এই প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “এটা সত্য যে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার কারণে স্থানীয় গরিব জনগোষ্ঠী যারা শাকসবজি চাষ করে.. এটা সেটা করে চলত, সেই পথ বন্ধ হয়ে গেছে। স্থানীয় দরিদ্র মানুষের কষ্টের সীমা নেই।

“বিষয়টি আমাদের মাথায় রয়েছে। আমরা এই মানুষগুলোর খাদ্যের ব্যবস্থা করব। তার যেন অভুক্ত না থাকে, সেই ব্যবস্থা করব। ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে খাওয়াতে পারলে ১৫ হাজার মানুষকে খাওয়াতে পারবো না? এত দৈন্য আমাদের নেই।”