ইনুকে ট্যাংকে লাফালাফি করতে দেখেছি: খন্দকার মোশাররফ

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনুকে ট্যাংকে চড়ে উল্লাস করতে দেখেছিলেন বলে দাবি করেছেন বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Nov 2017, 07:23 PM
Updated : 15 Nov 2017, 05:25 PM

‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের পূর্বাপর ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরার সময় এই দাবি করেন।

ওই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন খন্দকার মোশাররফ। তার চার বছর পর বিএনপিতে যোগ দেন তিনি। ১৯৯০ সালের পর শিক্ষকতা ছেড়ে পুরোদস্তুর রাজনীতিতে নামেন তিনি। এখন তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য।

৭ নভেম্বর জাসদের নেতা ও বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর ভূমিকার কথা বলতে গিয়ে ‘ট্যাংকে চড়ে উল্লাসের’ কথা বলেন খন্দকার মোশাররফ।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, “বিপ্লব সফল হওয়ার পর আনন্দ করার জন্য সিপাহীরা ট্যাংক নিয়ে ঢাকার রাস্তায় বের হয়েছিল। অনেক উৎসুক জনতা ট্যাংকের উপরে উঠে নাচানাচি করেছে আমি দেখেছি।

“আজকের মন্ত্রী ইনু সাহেব অতি উৎসাহী একজন ছাত্র হিসেবে ট্যাংকের উপরে উঠে লাফালাফি করেছেন। আমি নিজের চোখে জিরো পয়েন্টে তাকে দেখেছি।”

জোটে থেকে মন্ত্রী হলেও পঁচাত্তরের ভূমিকার জন্য ইনুর সমালোচনা এখনও করেন অনেক আওয়ামী লীগ নেতা। এই সমালোচনায় তার ট্যাংকে চড়ার কথা আওয়ামী লীগ নেতাদের মুখেও আগে এসেছে।

তবে ইনু ওই অভিযোগ নাকচ করে এর আগে বলেছিলেন, এটি ‘ডাঁহা মিথ্যা কথা’।

ট্যাংকের ছবিতে যাকে ইনু বলে দেখানো হয়ে থাকে, তার পরনে শার্ট-প্যান্ট থাকার বিষয়টি তুলে ধরে ইনুর ভাষ্য, ১৯৭২ সালের পর থেকে তিনি পাজামা-পাঞ্জাবি পরেন।

হাসানুল হক ইনু

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ৭ নভেম্বর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ৩ নভেম্বর সেনা কর্মকর্তা খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে অভ্যুত্থান হয়। ৭ নভেম্বর পাল্টা অভ্যুত্থানে ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসেন তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান।

৭ নভেম্বরের ওই অভ্যুত্থানে মূল ভূমিকা ছিল অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আবু তাহের ও তার দল জাসদের। পরে ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তাহেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিলেন জিয়া।

৭ নভেম্বর দিনটি জাসদ ‘সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান’ দিবস হিসেবে পালন করে। বিএনপি পালন করে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে। আওয়ামী লীগ সমর্থক সংগঠনগুলো দিনটি পালন করে ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’ হিসেবে।   

৭ নভেম্বরের অভ্যুত্থানে জাসদের ভূমিকা অস্বীকার করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, “কেউ কেউ দাবি করে, ওই সময়ে ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে না কি জাসদের কেউ কেউ গিয়ে এই বিপ্লব (৭ নভেম্বর) সাধন করেছে। ঘটনা ঘটলো ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে, যেখানে সিভিলিয়ানরা যেতে পারে না। তাহলে বিপ্লবটা সাধন করল কীভাবে?”

তাহেরের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “তাহের না কি এই ৭ নভেম্বরের নায়ক ছিল অথবা অনুঘটক ছিলো। কীভাবে অনুঘটক থাকতে পারে? ওই সময় সে (তাহের) সেনাবাহিনীতে ছিল না।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন

“ঘটনা ঘটলো ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে। আর পরদিন সকালে যখন তারা (সিপাহীরা) আনন্দ করতে বেরুলো তখন ট্যাংকের উপরে উঠে লাফালাফি করেছে তারা (জনতা)। এটাই ইতিহাস।”

ওই অভ্যুত্থানটি সেনাবাহিনীর সিপাহীদের ছিল বলে দাবি করেন বিএনপি নেতা মোশাররফ।

“নভেম্বরের ৬ তারিখ গভীর রাত থেকে সিপাহীরা এই বিপ্লব করে। কী বিপ্লব করলো- মানি না খালেদ মোশাররফকে, আমাদের সেনা প্রধান হচ্ছেন জিয়াউর রহমান। তখন বন্দি জিয়াউর রহমানকে সিপাহীরা কাঁধে করে সেনাবাহিনীর হেডকোয়ার্টারে নিয়ে গেল।

“হয়ত একজন সাবেক কর্মকর্তা হিসেবে, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কর্নেল তাহের হেডকোয়ার্টারে যান। গিয়ে দেখলেন, অন্যান্য সকল সিনিয়র কর্মকর্তারা সেখানে বসা। তখন তিনি যে একটা দাবি করেছিলেন। জিয়াউর রহমানকে বলেছিলেন, আপনি এখন চলেন রেডিও স্টেশনে, আপনি একটা বক্তৃতা দেবেন। আপনি গিয়ে বলবেন, এই সেনাবাহিনীতে কোনো অফিসার থাকবে না, এটা পিপলস আর্মি হিসেবে রূপান্তর করা হবে ইত্যাদি।

“সেখানে যারা উপস্থিত ছিলেন, তারা প্রত্যেকে এক বাক্যে তাহেরের প্রস্তাব অস্বীকার করছেন, এটা হতে পারে না। জিয়াউর রহমানও তার (তাহের) কথা শোনেননি। এতটুকুই তার (তাহের) এখানে ইনভলবমেন্ট। ঘটনার আগে-পিছে তিনি ক্যান্টেনমেন্টের ভেতরে ছিলেন না।”