খালেদার বহর ফেরার পথে বাসে আগুন, বোমাবাজি

কক্সবাজার থেকে ফেরার পথেও ফেনীতে গোলযোগের মধ্যে পড়েছে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর।

সুমন মাহমুদ খালেদা জিয়ার গাড়িবহর থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Oct 2017, 11:40 AM
Updated : 31 Oct 2017, 03:58 PM

মঙ্গলবার বিকালে বহরটি ফেনীর মহিপাল অতিক্রমের সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়িসহ ৩০-৩৫টি গাড়ি পেরিয়ে যাওয়ার পরপরই দুটি বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। আগুন জ্বলতে দেখা যায় সড়কের উল্টো দিকে দুটি বাসে।

এর পরপরই সেখানে ছোটাছুটি ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বিএনপি নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিলও করেন।

ফিরতি পথে খালেদা জিয়ার নিজের জেলা ফেনীর সার্কিট হাউজে যাত্রাবিরতি করার কথা থাকলেও চট্টগ্রাম থেকে রওনা হতে দেরি হওয়ায় সেই পরিকল্পনা আগেই বাদ দেওয়া হয়েছিল।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাওয়ার পথে গত শনিবার মহিপালের কয়েক কিলোমিটার আগে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালিয়েছিল একদল যুবক।

সেবারও খালেদা জিয়ার গাড়ি অতিক্রমের পরপরই বহরের পেছনের গাড়িগুলো আক্রান্ত হয়েছিল। এবারও একই ঘটনা ঘটেছে।

দলীয় চেয়ারপারসনের গাড়িবহর ফেনী জেলার সীমানায় ঢোকার পরপরই স্থানীয় ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কয়েকশ নেতা-কর্মী মোটর সাইকেল নিয়ে তাকে পাহারা দিয়ে এগিয়ে নিচ্ছিল।

খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানাতে মহিপালেও আগে থেকে জড়ো হয়ে ছিলেন ফেনীর বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।

এর মধ্যেই বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে খালেদার গাড়িসহ বহরের প্রথম দিকের গাড়িগুলো মহাসড়কের সার্কিট হাউজ এলাকা পার হওয়ার পরপরই বিস্ফোরণ দুটি ঘটে। এরপরই বাস দুটিতে আগুন জ্বলতে দেখা যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রথমে কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। এসময় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজনকে একদল দুর্বৃত্ত লাঠিসোঁটা নিয়ে ধাওয়া করে। তারাই দুটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়।

এসময় মহাসড়কের দুই পাশেই যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌছে আগুন নেভায়।

গাড়িবহরে থাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও ফেনী জেলা বিএনপি নেতা আলাউদ্দিন পাঠান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ম্যাডামের গাড়ি অতিক্রম করার পর ওই বহরের আরও ১৫/২০টি পার হয়। এরপরই বাস দুটিতে আগুনের ঘটনা ঘটে এবং বিকট শব্দও শুনতে পাই।”

তখন বাস দুটি থেকে ১৫/২০ গজ দূরে ছিলেন আলাউদ্দিন।

বিস্ফোরণ কীসের- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সেটা ককটেল, না বোমা, তা বুঝতে পারিনি।”

ফেনী সদর থানার ছাত্রদলের আহ্বায়ক মঞ্জুর হোসেন মঞ্জু বলেন, “বাসের আগুনের ঘটনা থেকে আমার দূরত্ব ছিল ১৫ গজ। বাস দুটি ঢাকামুখী ছিল।”

ফেনীর পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার সাংবাদিকদের বলেন, ফেনী থেকে কুমিল্লাগামী যমুনা পরিবহন এবং ঢাকাগামী চৌদ্দগ্রাম ট্রান্সপোর্টের দুটি বাস আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুলিশ এদুটি পরিবহনের চালক ও হেলপারকে খুঁজছে।

ফেনী মডেল থানার ওসি রাশেদ খাঁন চৌধুরী জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সন্দেহভাজন পাঁচজনকে জিঙ্গাসাবাদের জন্য আটক করেছে।

এদিকে খালেদা জিয়ার গাড়ি নির্বিঘ্নেই ওই এলাকা অতিক্রম করে যায়। বহরটি চৌদ্দগ্রাম অতিক্রমের সময় সেখানেও একটি বাসে আগুন জ্বলতে দেখা যায়।

বহরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আমানউল্লাহ আমান, হাবিব উন নবী খান সোহেল, নাজিম উদ্দিন আলম, শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের জুয়েল, রাজিব আহসান, আকরামুল হাসান ছিলেন।

রাত পৌনে ৯টার দিকে ঢাকার গুলশানে নিজের বাড়িতে পৌঁছান খালেদা জিয়া, শেষ হয় তার চার দিনের সফর। 

সফরে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে খালেদা জিয়া

কক্সবাজারের উখিয়ার উদ্দেশে গত শনিবার ঢাকা থেকে রওনা হয়েছিলেন খালেদা। শনিবার রাত চট্টগ্রামে কাটিয়ে পরদিন কক্সবাজার পৌঁছান তিনি। সোমবার তিনি উখিয়া গিয়ে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দিয়ে চট্টগ্রামে ফিরে আসেন। মঙ্গলবার রওনা হন ঢাকার পথে।

যাওয়ার পথেও ফেনী জেলার সীমানার শুরুতে মোহাম্মদ আলী বাজারে খালেদার গাড়িবহরে হামলা হয়।

ওই ঘটনায় খালেদার বহরের এবং গণমাধ্যমের প্রায় ৩০টি গাড়ি ভাংচুরের শিকার হয়। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরও কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী মারধরের শিকার হন।

ওই হামলার জন্য বিএনপি ফেনীর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের দায়ী করছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের দাবি, বিএনপি হামলার এই ঘটনা সাজিয়েছে।

এবারও পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

আগের ঘটনার মতো এবারও আওয়ামী লীগকে দায়ী করে ফেনীর বিএনপি নেতারা বলেছেন, তাদের নেত্রীর যাত্রায় বিঘ্ন ঘটাতেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা একাজ করেছে।

ফেনী জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু তাহের সাংবাদিকদের বলেন, “সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালিয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা এবং দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।”

অন্যদিকে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রহমান জানান, “খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগ বা তার কোনো অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা জড়িত নয়। এটি বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল।”

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা।

ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক বাহার উদ্দিন বাহার জানান, বিএনপির চেয়ারপারসনের গাড়ি বহরে হামলা ও বাসে আগুনসহ সমসাময়িক সময়ে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনাগুলো নিয়ে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগ বুধবার সংবাদ সম্মেলন করবে।

এদিকে শনিবারের হামলার চার দিন পেরিয়ে গেলেও জেলা বিএনপি মামলা বা কোনো ধরনের কর্মসূচি দেয়নি।

বিষয়টি কেন্দ্রের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে বিএনপির জেলা নেতারা জানান।

এদিকে এই ঘটনা নিয়ে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল বুধবার ঢাকাসহ সারাদেশে জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে।

[এই প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন ফেনী প্রতিনিধি নাজমুল হক শামীম]